|| শাব্বির আহমাদ খান ||
শাওয়াল মাসের এই শুরুর সময়টিতে দেশের হাজার হাজার কওমি মাদরাসায় চলছে ভর্তিযুদ্ধ। ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও ভর্তির কাজ শেষ পর্যায়ে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী রাজধানী ঢাকায় এসে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিটি মাদরাসাতেই শিক্ষার্থীদের স্রোত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও মফস্বলের মাদরাসাগুলোর চিত্র এর চেয়ে ভিন্ন। অনেক মাদরাসা ছাত্র খরায় ভুগছে। বিশেষ করে অজপাড়া গাঁয়ের মাদরাসায় উপরের জামাতগুলোতে ছাত্রসংখ্যা খুবই কম। অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মাদরাসাগুলো।
প্রশ্ন উঠেছে, কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ঢাকামুখী এই স্রোত কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বেশির ভাগ মাদরাসা পড়াশোনার দিকে বেশ জোর দিয়ে থাকে। এখানে বছরের শুরু থেকেই একটি শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে ছাত্ররা। এখানকার প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী আবাসিক হওয়ায় তাদের পড়াশোনা ও নেগরানিও করা হয় পুরোদমে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়তে বাধ্য হয়। নিয়মতান্ত্রিক পড়াশোনা করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের ফলাফলও ভালো হয়ে থাকে।
রাজধানীর বেশির ভাগ মাদরাসার পরিবেশই ঘিঞ্জি। থাকার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যেখানে ক্লাস সেখানেই থাকতে হয়। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া সারতে হয়। ওজু-গোসল-ইস্তেঞ্জার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বেশির ভাগ মাদরাসায় নেই। তবুও ছাত্রদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ঢাকার মাদরাসাগুলো।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি মাদরাসায় এবার নতুন এসে ভর্তি হয়েছেন শাহাদাত হোসেন। উত্তরাঞ্চলের একটি মাদরাসা থেকে জালালাইন পড়ে এসেছেন। এবার পড়বেন মিশকাত জামাতে। তিনি যে মাদরাসায় ছিলেন সেখানে থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত সুবিধা ছিল। এখানে সেই তুলনায় কিছুই নেই। তবুও তিনি কেন এই মাদরাসা বেছে নিয়েছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন- ‘ছাত্রজীবনে থাকা-খাওয়ার সুবিধাই সব না। পড়াশোনা ভালো হয় কি না সেটাই বড়। যেহেতু এখানে পড়াশোনা ভালো হয়, প্রতি বছর বেফাক-হাইয়্যার পরীক্ষায় এই মাদরাসার ছাত্ররা ভালো ফলাফল করে এজন্য আমি এখানে এসেছি।’
রাজধানীর মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকাসহ আরও কয়েকটি মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করে একই বক্তব্য পাওয়া গেছে। তারা জানান, প্রথমত ভালো পড়াশোনার কারণেই তারা ঢাকায় এসে ভর্তি হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু পড়াশোনা নয়, ঢাকার মাদরাসাগুলো ছাত্রদের সার্বিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি আদব-আখলাক এবং আমলি মশক করানো হয়। ছাত্রদের মেধা বিকাশের নানা আয়োজনও থাকে। প্রায় প্রতিটি মাদরাসাতেই সাপ্তাহিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, কোরবানিসহ বিভিন্ন ছুটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এসবের দ্বারা ছাত্ররা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পায়।
এছাড়া দেশের রাজধানীতে অবস্থান করা শিক্ষকরা সাধারণত সচেতন ও স্মার্ট হয়ে থাকেন। তাদের দ্বারা শিক্ষার্থীরা বেশি প্রভাবিত হয়ে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের ভালো মন-মানসিকতা গড়ে ওঠে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও উন্নত হয়। মূলত এসব কারণেই ঢাকায় পড়াশোনার প্রতি ছাত্রদের ঝোঁক বেশি। বিশেষ করে উপরের জামাতগুলো তারা ঢাকাতেই পড়তে চায়।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকার সব মাদরাসাতেই যে ভালো পড়াশোনা হয় সেটা বলা যাবে না। অনেক মাদরাসায় সে দিকে ততটা জোর দেওয়া হয় না। এজন্য শুধু ঢাকা হলেই হবে না, ভালো পড়াশোনা এবং সার্বিক বিচারে ছাত্রদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তুতি ও কার্যক্রম যে প্রতিষ্ঠানে আছে সে প্রতিষ্ঠানই বেছে নেওয়া জরুরি। সেটা ঢাকাতেই হোক কিংবা মফস্বল এলাকাতেই হোক।
এসএকে/