রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৯ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬


ইসলামপন্থীদের ঐক্যের সুবাতাস!


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
সংগৃহীত

বিশেষ প্রতিনিধি

একই আল্লাহর বান্দা, একই নবীর উম্মত, একই কালেমার ধারক- তবু ইসলামপন্থীরা একত্রে বসতে পারে না বলে একটা বদনাম আছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ছোট-খাট বিষয়েও ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিরোধ প্রায়ই নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে ইসলামপন্থীরাও চাইলে একত্রিত হতে পারেন, একসঙ্গে বসতে পারেন সেই নজির আবার রাখলেন তারা। 

শনিবার (১২ এপ্রিল) পালিত হলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি ব্যানারে আয়োজন করা হয় এই কর্মসূচির। নতুন ও অখ্যাত এই ব্যানারে গাজাবাসীর ভালোবাসায় একমঞ্চে সমবেত হয়েছিলেন ইসলামপন্থীদের প্রায় সবাই। দলমত নির্বিশেষে, কোনো ঘরানার বাছ-বিচার না করে; কার আকিদা কী, কে কী বিশ্বাস লালন করেন সেটা না ভেবেই সবাই একত্রিত হয়েছিলেন। রাজপথে বর্বর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং গাজাবাসীর পক্ষে স্লোগানও তুলেছিলেন। তাদের এই অভূতপূর্ব একত্রিত হওয়া, একটেবিলে কিংবা একমঞ্চে বসার দ্বারা আশান্বিত হয়েছেন এদেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ। 

আজকের এই সম্মিলনকে ঐক্যের নতুন সুবাতাস হিসেবে দেখছেন অনেকেই। গাজা ইস্যুতে সবাই একত্রে বসতে পারলে, রাজপথে একসঙ্গে মিছিল ধরতে পারলে দেশের ইস্যুতে, ঈমান ও ইসলামের ইস্যুতে কেন হওয়া যাবে না- সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। অনেকে বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টের বিদায়ের পর ইসলামপন্থীরা আগের চেয়ে কাছাকাছি এসেছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বাক্স দেওয়ার আলোচনা চলছে জোরেশোরে। শেষ পর্যন্ত এটা বাস্তবায়ন হলে ইসলামপন্থীরা অনেকদূর এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন অনেকেই। শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হলেও এই যে কাছাকাছি আসা, এটাকেও ছোট করে দেখতে চাচ্ছেন না তারা। মৌলিক কিছু জায়গায় ইসলামপন্থীরা ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারলে এর সুফল এদেশের জনসাধারণ পাবে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। 

‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলাম থেকে শুরু করে প্রায় সব ইসলামি দলের নেতাকর্মীরাই যোগ দিয়েছিলেন। বৃহৎ দল বিএনপিও ছিল এই কর্মসূচিতে। নতুন দল এনসিপিসহ জাতীয়তাবাদী ও ডানপন্থী দলগুলোর কেউই বাদ যায়নি। একসঙ্গে তাদের সবাইকে একমঞ্চে দেখে আনন্দিত হয়েছে দেশবাসী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হওয়া লাখ লাখ জনতার উচ্ছ্বাস দেখেই বোঝা গেছে তাদের কাছে এই দৃশ্য কতটা আনন্দের এবং কাঙ্ক্ষিত। নিকট অতীতে এমন দৃশ্য দেখেছে বলে মনে করতে পারছে না দেশবাসী। এই অবস্থায় ইসলামপন্থীদের ঐক্যের যে সুবাতাস অনুভব করা যাচ্ছে, সেটাকে পূর্ণতা দেওয়ার জোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। 

ঐক্য অনেক বড় শক্তি। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। প্রায় আট মাস আগে জাতির কাঁধে চেপে বসা ভয়াবহ ফ্যাসিস্টকে তাড়ানো সম্ভব হয়েছিল ঐক্যের কারণেই। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং গাজার পক্ষে বিচ্ছিন্নভাবে প্রায় সবই দলই কর্মসূচি পালন করেছে। তবে সেই কর্মসূচি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়নি। আজ সবাই একসঙ্গে মিলিত হওয়ার কারণে, সবার মধ্যে সেতুবন্ধ রচিত হওয়ায় তাদের প্রতিবাদ বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি কেড়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির খবর। 

তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে, ঐক্য করতে হলে সবার আগে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কে কোন চেয়ারে বসল, কে বক্তৃতার সময় কতটুকু নিলো, কার দলের কয়জন নেতা ‍সুযোগ পেল, কার নাম কীভাবে উচ্চারিত হলো- এসব ছোটখাট বিষয়ে ছাড় না দিতে পারলে ঐক্য কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। সবাই সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে ঐক্যের ব্যাপারে আন্তরিক হলেই কেবল সম্ভব নতুন বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের নতুন শক্তির উত্থান।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ