মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ২৩ পৌষ ১৪৩১ ।। ৭ রজব ১৪৪৬

শিরোনাম :

‘দেওবন্দের মূলনীতির ওপর যতোদিন থাকবে, ততোদিন পথ হারাবে না বেফাক’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হাসান আল মাহমুদ ||

বাংলাদেশের হক্কানী ওলামায়ে কেরামের ইজতেমায়ী প্লাটফর্ম হচ্ছে বেফাক। প্রত্যক্ষ রাজনীতি ও তাত্ত্বিক রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং প্রচলিত রাজনীতি থেকে দূরে থাকা নানা মত পথ কৌশলে কাজ করা, সকল আলেমের তা'লীমি বোর্ড হচ্ছে বেফাক। কর্মপন্থার শত বৈচিত্র্য এখানে এসে এক হয়ে যায়। "আমরা বেঁচে থাকতে দীনের ক্ষতি হবে না" এই প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদরাসা যতোদিন দেওবন্দের মূলনীতির ওপর থাকবে, ততোদিন পথ হারাবে না বেফাক। এই প্লাটফর্মে এসে সবাই এক।

আজ রবিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ১০ ঘটিকায় নবনির্মিত ১১ তলা ভবনের বেফাক মিলনায়তনে সারাদেশের দুই শতাধিক শুরা সদস্য, দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ ও দীনদার সুধীবৃন্দের অংশগ্রহণে বেফাক সভাপতি মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মজলিসে শুরায় বক্তাগণ এসব কথা বলেন।

মজলিসে শুরায় বক্তাগণ আরও বলেন, বেফাক সারাদেশের দ্বীনি শিক্ষার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাবিদগণের সংগঠন। ঐতিহ্যের দিক থেকে এমন শক্তিশালী ও অবিভক্ত প্রতিষ্ঠান খুব কমই আছে। এখানে ভালোমন্দ বলার ও পরামর্শ দেওয়ার যোগ্য অনেক কমিটি রয়েছে। লেখাপড়া না করা, অছাত্র বা কওমি ঐতিহ্য বিরোধী যেকোনো লোকের মন্তব্য কিংবা ফেসবুক দেখে বেফাকের বিচলিত বা প্রভাবিত হওয়া সাজে না। সব কথার জবাব দিতে হয় না। ত্যাগ, কোরবানি ও কাজের মাধ্যমেই মানুষ মানুষকে মূল্যায়ন করে। আমরা নিজেদের ফোরামে ঐতিহ্য ও কওমি আদর্শ অনুসারে সব সমস্যার সমাধান খুজবো এটাই স্বাভাবিক। যেকোনো মূল্যে আমাদের নিজেদের সবাইকে একসূত্রে গেঁথে রাখতে হবে। বহু শত্রুর মধ্যে বর্তমান ফিতনার যুগে ইজতিমাইয়্যতই আমাদের রক্ষাকবজ।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা, পরামর্শ প্রদান ও মতামত ব্যক্ত করেন মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামীদ (পীর সাহেব মধুপুর), মুফতী মনসুরুল হক, মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গহরপুরী, মাওলানা জাফর আহমাদ (পীর ঢালকানগর, মাওলানা আনওয়ারুল করীম (যশোর), মাওলানা মোস্তাক আহমাদ (খুলনা), মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব (বরিশাল), মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশীদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা ইসমাঈল (নরসিংদী), মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার (নরসিংদী), মাওলানা সাঈদ নূর (মানিকগঞ্জ), মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ ফরিদী (মাদারীপুর), মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী সাহেব, ঝালকাঠী, মাওলানা মোবারক উল্লাহ (বি-বাড়িয়া), মাওলানা আনওয়ারুল হক (ময়মনসিংহ), মাওলানা মুনিরুজ্জামান (বাইতুন নূর, ঢাকা), মুফতী কেফায়েতুল্লাহ আজহারী (তুরাগ, ঢাকা), মাওলানা আবু তাহের (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী (লালবাগ, ঢাকা) প্রমুখ।

বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গহরপুরী বলেন, মুরুব্বিরা বেফাক পরিচালনা ও এর গতিশীলতা নিয়ে মূল্যবান কথাবার্তা বলেছেন। সারাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিগণ বহু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। ধীরে ধীরে এর সবই বাস্তবায়িত হবে, ইনশাআল্লাহ। আমি, সারাবিশ্বের ছাত্রদের আকর্ষণ করতে পারে-এমন একটি দারুল ইমতিয়াজ বা হাউজ অব এক্সিলেন্স বেফাক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হোক- এই প্রস্তাব করছি। যেখানে কুরআন হাদিস, ফিকাহ, ফতোয়া, আরবি সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে দেশের কৃতি ছাত্রদের উচ্চতর পড়ালেখার ব্যবস্থা থাকবে। সারা বিশ্বের নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সেরা উস্তাদগণকে এখানে অতিথি অধ্যাপকরূপে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। দেশের শ্রেষ্ঠ আলেমগণ এখানে পাঠদান করবেন। বেফাকের উদ্যোগে সারাদেশে বিশেষ করে অনগ্রসর এলাকায় মক্তব ও দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র চালু করতে হবে।

বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শুরা অধিবেশনে প্রাতিষ্ঠানিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি গঠনতন্ত্রে কোনরূপ মুদ্রণ ও তথ্যগত সমস্যা চোখে পড়লে সদস্যদের লিখিতভাবে বেফাক অফিসকে জানানোর কথা বলেন।

কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে পরিচালনাগত ক্ষেত্রে আধুনিকতা আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি এর আগে মুহতারাম সভাপতির লিখিত ভাষণ পাঠ করে শোনান।

সমাপ্তি পর্বে সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান তার বক্তৃতায় ভেদাভেদ ভুলে সকলকে এক থাকা এবং বর্তমান সভাপতি মহোদয়সহ দেশসেরা মুরুব্বিগণের সাথে দৃঢ়ভাবে সংহত থেকে দীন ও ঈমানের দূর্গ কওমি মাদরাসাকে সকল দেশি বিদেশি শত্রুর চক্রান্ত থেকে রক্ষার আহ্বান জানান।

মজলিসে শুরা বেফাক ও বেফাকে দায়িত্বশীল মুরুব্বিগণের বিরুদ্ধে একশ্রেণির লোকের মিথ্যা অপবাদ, বিরূপ সমালোচনা, অমূলক সন্দেহ ও বিক্ষোভের তীব্র নিন্দা জানায়। এর আগে বেফাক অফিসে বহিরাগতদের হুমকি, মুরুব্বিদের নামে বিষোদগার, বেফাক কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার, অফিস কর্মচারীদের প্রহার, মেইন গেইটে পদাঘাত, ঘেরাওয়ের নামে উলামায়ে কেরামের শান-মান ও গৌরবহানির পূর্ণ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। কোনো বিষয় তাহকিক না করে বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সামনে দালিলিকভাবে প্রমাণিত হওয়া ছাড়া মিডিয়ায় কারো অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সর্বোপরি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দেশ, জাতি ও উম্মাহর কল্যাণে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শুরা অধিবেশন সমাপ্ত হয়।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ