সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৭ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে বিজ্ঞ আলেম অন্তর্ভূক্তির দাবি জোরালো হচ্ছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হাসান আল মাহমুদ ||

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ পেলো এদেশের জনতা। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে রাষ্ট্রের সর্বত্র সংস্কারের অংশ হিসাবে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু কমিটির সদস্যদের মধ্যে দেশের আলেম-ইসলামিক স্কলার না থাকায় আপত্তি জানিয়েছে দেশের ইসলামি সংগঠন ও শীর্ষ আলেম-নেতৃবৃন্দ। আলেম অন্তর্ভূক্ত রাখার জোরালো দাবি জানিয়ে দেশের বিজ্ঞ আলেমসমাজ ও ইসলামি সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে বিজ্ঞ আলেমদের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে আগের মতোই সমস্যা থেকে যেতে পারে। তাই, দেশের বিজ্ঞ আলেমদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত রাখতে হবে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে আলেম অন্তর্ভূক্তি চেয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বিবৃতি দিয়েছে। এছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপিত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটিতে কোনো আলেম না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করে আলেমবিহীন এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এর সভাপতিত্বে ‘কেন্দ্রীয় খাস কমিট‘র সদস্যদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম জানিয়েছে, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে কোনো বিজ্ঞ আলেমের উপস্থিতি না দেখে আমরা যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। কারণ, স্বৈর-ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি ও বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে ওলামায়ে কেরাম ব্যাপকভাবে সোচ্চার ছিলেন। অথচ আজ এই নতুন বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি থেকে আলেমসমাজকে বঞ্চিত করে আবারও বিতর্কের পথ বেছে নেয়া হলো। আলেমবিহীন এই বৈষম্যমূলক কমিটি আমরা জোরালভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।   

হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ভারতের সেবাদাস কুখ্যাত স্বৈরশাসক হাসিনা এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। এমনকি বাংলাদেশের তরুণপ্রজন্মকে ভারতের অনুগত করে  গড়ে তোলার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী বয়ান ও ইতিহাস ঢোকানো হয়। এ বিষয়ে দেশের ওলামায়ে কেরাম তখন উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করেছিল। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী কিছু কন্টেন্ট এখনো বিদ্যমান। সে কারণে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে বিজ্ঞ আলেমের উপস্থিতি অপরিহার্য। তাই ওই কমিটিতে অতিসত্বর একাধিক প্রসিদ্ধ বিজ্ঞ আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন করার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

আল্লামা মাহমুদুল হাসানের আহ্বানে জাতীয় পরামর্শ সভা থেকে আহ্বান

দেশের শীর্ষ আলেম কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ ও সর্বোচ্চ অথরিটি বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের আহ্বানে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসায় জাতীয় পরামর্শ সভা থেকে শিক্ষা সংস্কার কমিটিতে ইসলামী শিক্ষাবিদ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

নেতৃবৃন্দ জানান, রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সংবিধান সংস্কারে ইসলাম বিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না এবং সংবিধানসহ প্রতিটি কমিশনে উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা সংস্কার কমিটিতে ইসলামী শিক্ষাবিদ, কারিকুলাম ও সিলেবাস বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংস্কারের সুযোগে পাশ্চাত্য বিভিন্ন মতবাদ, ট্রান্সজেন্ডার, এলজিবিটিকিউ, উগ্র নারীবাদ, সর্বধর্মবাদ ইত্যাদি অনুপ্রবিষ্ট করা যাবে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র পক্ষ হতে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে আলেম অন্তর্ভুক্তি রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ আজ রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, আমাদের মুহতারাম আমীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এ বিষয়ে খুবই জোরালোভাবে কথা বলেছেন। আজও মিরপুর পল্লবীতে এক ভাষণে মুহতারাম আমীর বলেছেন, বৈষম্য দূর করার জন্যই এতো রক্ত-সংগ্রাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আজও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে বিজ্ঞ আলেমদের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে আগের মতোই সমস্য থেকে যেতে পারে। তাই, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে বিজ্ঞ আলেম অন্তর্ভূক্ত করার জোরালো  আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে বিজ্ঞ আলেম রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে শিক্ষাকে বিউপনিবেশায়ন করে স্বাধীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষা অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ’বলেছেন, সকল শ্রেণির শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। আমাদের উপেক্ষার ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা বেশি দিন চুপ করে থাকবো না। শিক্ষা কমিশনে এদেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। না হলে শিক্ষা কমিশনের কোনো সুপারিশ মানা হবে না।

তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে আমরা ছিলাম। আমরা রক্ত দিয়েছি। কারারুদ্ধ হয়েছি, অন্যায় অবিচারের শিকার হয়েছি। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। যুদ্ধ করে বিজয়ের রণাঙ্গণেও ছিলাম আমরা। এখন রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। আমরা বাংলাদেশকে সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী করতে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপিত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটিতে কমপক্ষে দুইজন বিশিষ্ট আলেম অন্তর্ভূক্তির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল এবং সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আজ রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতি প্রদান করে এই আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অতি সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপিত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটিতে কোনো আলেম অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে কোনো ইসলামী চিন্তাবিদ বা বিজ্ঞ আলেম রাখা হয়নি। বিগত ইসলাম বিদ্বেষী সরকার প্রায় ১৭ বছরের শাসনামলে নানা অসঙ্গতিসহ ইসলামী তাহযিব-তমদ্দুন বিরোধী অনেক বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করেছে, যা শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে মুসলিমবিদ্বেষী ও নাস্তিক্যবাদী অনেক বিষয় ঢুকানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিজ্ঞ আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন এবং বক্তব্য ও বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু, ফ্যাসিস্ট সরকার এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাতই করেনি। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটিতে একজন আলিয়া ও একজন কওমী শিক্ষায় শিক্ষিত বিজ্ঞ আলেমসহ কমপক্ষে দুইজন বিজ্ঞ আলেম অন্তর্ভূক্তির আহ্বান জানাচ্ছি।’

হাআমা/কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ