বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘আকাবির-মনীষী চর্চা কেন প্রয়োজন : দুই আলেমের মতামত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: আওয়ার ইসলাম

|| হাসান আল মাহমুদ ||

সাম্প্রতিক সময়ের আলোকে আকাবির ও আসলাফ তথা পূর্বসূরী-মনীষী চর্চার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে আরও গভীর ও জোড়ালোভাবে। তেমনটাই জানিয়ে আকাবির চর্চা কেন করতে হবে, কী তার গুরুত্ব, ইত্যাদি প্রসঙ্গে আওয়ার ইসলামকে মতামত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট দুই আলেম।

তাদের মতে, আকাবিরদের মাধ্যমেই আমরা দ্বীন পেয়েছি। তাঁদের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসছে দ্বীন ইসলামের সঠিক বার্তা। ইসলামের প্রাক্টিক্যাল আমল। অতএব, তাঁদের নিয়ে চর্চা করা. গবেষণা করা প্রত্যেক যুগের জন্যই অতীব জরুরি।’    

দেশের বিশিষ্ট আলেম রাজধানীর আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল  মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া-এর মতে, ‘‘আকাবির বলতে নির্দিষ্ট ব্যক্তি না। আকাবির হল সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু হয়ে পূর্বসূরী ওলামা-মাশায়েখ, আইম্মায়ে মুজতাহিদ সকলেই আকাবির।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরম্বপরাগত একটা সূত্র আছে। এই সূত্রই হল আকাবির। আকাবিরদের দুর্বল করলে ইসলামের মূল জায়গাকেই আঘাত করা হয়। ওই জাতি সবচেয় হতভাগা, যে তার পূর্বপুরুষদের মূল্যায়ন করে না, তাদের সঠিক চর্চা করে না।’

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া আরও বলেন, ‘ইদানিং কোথাও কোথাও দেখা যায় আকাবির নিয়ে নেগেটিভ চর্চা করেতে। যারা পূরবসূরীদের চর্চাকে নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করে, তারা ইসলামের কল্যাণকামী হতে পারে না। বরং পূর্বসূরীদের ইতিহাস থেকেই মানুষকে শিক্ষা নিতে বলা হয়েছে। তাদের ত্যাগ, কুরবানি, দ্বীনের জন্য মুজাহাদা-আত্মত্যাগ আমাদের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয়। বিশেষ করে দ্বীনের ওপর তাদের রেখে যাওয়া গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের ধর্মীয় জীবন পরিচালিত হচ্ছে। সর্বোপরি আকাবিরদের যারা অবমূল্যায়ন করে বা নেগেটিভ চর্চায় মেতে থাকে, ভিন্ন চোখে দেখে. তারা ইসলাম ও সমাজেরমঙ্গল বয়ে আনে না।

আকবিরদের পরিচয় ও তাদের গুরুত্ব প্রসঙ্গে দেশের বিজ্ঞ আলেম বাংলাদেশ কওমি কাউন্সিল’র চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ বলেন, সা‘হাবায়ে কেরাম রাসূল সা. এর জীবন্ত নমুনা ছিলেন। তাঁরা রাসূল সা. এর কথা-কাজ, চলাফেরা, খাওয়া-ঘুমানো, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক-রাষ্ট্রীয় সকল বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করেছেন। যার কারণে তাঁরা হলেন ‘তারকা’। রাসূল সা. যাদের সনদ দিয়েছেন ‘আসহাবি কান-নুজুম’ আমার সাহাবিরা আকাশের তারকা সমতুল্য’ বলে। সাহাবায়ে কেরামকে অনুসরণ করেছেন পরবর্তী স্তরের ব্যক্তিরা। যাদের বলা তাবেঈ-অনুসরণকারী। আর তাদের অনুসরণ করেছেন যারা তাদের বলা হয় তাবিয়ুত তাবিয়ীন- অনুসরণকারীদের অনুসরণকারী। আর এভাবেই রাসূল সা. প্রাক্টিক্যাল ও ব্যবহারিক আমল আমাদের কাছে এসেছে। তো, যাদের কাছ থেকে আমরা প্র্যাক্টিক্যাল আমল পেয়ে এসেছি তারাইতো আকাবির। মনীষী। তাঁদের অস্বীকার করা কিংবা তাদের নিয়ে বাজে কথা বলা চরম মূর্খতা।’

তাঁর মতে, ‘আকাবিরদের অস্বীকার করা মানেই হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সা. এর সুন্নাহকে অস্বীকার করা, দ্বীন পাওয়ার মাধ্যমকে মিটিয়ে দেয়া।’

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ আরও বলেন, ‘হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো, সেভবে নামাজ পড়।’ তো, এই প্রাক্টিক্যাল আমল আকাবির অস্বীকার করলে পাবে কোথায় তারা!

‘নবীজি কিভাবে নামাজ পড়েছেন, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, সেটার প্র্যাক্টিক্যাল আমল নবীজি থেকে সাহাবায়ে কেরাম নিয়েছেন। আর তাঁদের থেকে পরবর্তীরা। এভাবে আমাদের পর্যন্ত এসেছে। আকাবির নস দ্বারা প্রমাণিত। তাদের অস্বীকার করার সুযোগ ইসলামে নেই।’- কথায় যোগ করেন এই বিশিষ্ট আলেম।

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ-এর মতে, ‘কিতাব এবং রিজাল তথা মনীষী চর্চা দুটাই সবসময় থাকতে হবে। রিজাল ছাড়া আমল আমরা পাব কিভাবে! আকাবিরদের দেখিয়ে দেওয়া পথ ছাড়া আমরা কিতাবি জ্ঞান অর্জন করতে পারব না। কুরআন-হাদিস বুঝতে হলে অবশ্যই আকাবির পথ ধরে হাঁটা ছাড়া আমাদের কোনো গন্তব্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘কোনো ভিডিও তো নাই যে, রাসূল সা. এই কাজটা এভাবে করেছেন, আমরা সে ভিডিও দেখে আমল করলাম। তো, কাজটা আমরা পেলাম কিভাবে? আকাবিরদের মাধ্যমে প্রাক্টিক্যাল হয়ে আসছে বিধায় আমরা পেয়েছি’।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ