জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে, শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, বরং নিজেদের সেভেন সিস্টার্সকে বাঁচাতে কীভাবে ভারত এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। যেই সেভেন সিস্টার্স ৭১–এর আগে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে প্রায় বিদ্রোহের মধ্যে থাকত, সেই সেভেন সিস্টার্সসংলগ্ন যখন পাকিস্তানের একটি বড় অংশ ছিল, তখন ভারত এটার ভয় পেত যে আমি না দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাই।
আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে ‘ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধে, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যা ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শিরোনামে এই সেমিনারের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘১৬ বছরে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের মনীবের কাতারে নিয়ে গিয়েছে। নিজেরা স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করেছিল শুধু নিজেদের ক্ষমতাকে সিকিউর (নিরাপদ) করার জন্য। তাদের কাছে দেশ, দেশের মানুষ, দেশের সার্বভৌমত্বের চেয়ে ক্ষমতার মূল্যটা বেশি ছিল। যেকোনো মূল্যে তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। রক্তপিপাসু খুনী শেখ হাসিনার খুনের পিপাসা এখনো মেটেনি। বিন্দুমাত্র অনুশোচনা না করে এই মহিলা এখনো খুনের কথা বলে আসছেন।’
ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও আধিপত্য নিয়ে আলোচনা করা দরকার উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘ভারত এই বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোয় প্রতিটি জায়গায় যে আগ্রাসনগুলো চালিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে হিংস্র ও গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি। কারণ, আমরা যা, এটিই আমাদের সংস্কৃতি। আমরা যা খাই, যা পরি, যা বলি তা-ই আমাদের সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। আমাদের মায়েরা–বোনেরা বাসায় বসে বসে টিভি সিরিয়াল দেখেন। বাংলাদেশে যে বিদেশি চ্যানেলগুলো প্রচার হয় এর নব্বই ভাগ ভারতীয়। বিপরীত দিকে দেখেন, ভারতে তারা বাংলাদেশের একটি চ্যানেলও প্রচার করতে দেয় না।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির এই মুখ্য সংগঠক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ভারত আধিপত্যবাদী আচরণ করলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থায়ী হবে না।’
গোলটেবিল আলোচনার প্রধান অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘অনেকে নির্বাচনকে বারবার হাইলাইট করছে। এত অস্থির হওয়ার তো কিছু নেই। নির্বাচন তো দেবেই। দিতেই হবে। কিন্তু এখন দেশটা কোন পর্যায়ে চলছে তা লক্ষ রাখতে হবে। দেশতো অস্থিতিশীল সর্বক্ষেত্রে। সবাইে আগে একত্র হয়ে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ভারতসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং দেশ অশান্ত করার প্রতিযোগিতা প্রতিহত করি।’
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘রাজনীতি মূলত ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণের জন্য। আমরা ৫৩ বছরে দেখেছি, অনেকেই রাজনীতি ও ক্ষমতার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এর পরিবর্তন দরকার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮৭ সালে। এ পর্যন্ত এই ব্যানারে সংসদে একজন ব্যক্তিও যাননি। আমাদের যাওয়ার মতো সুযোগ ছিল। না যাওয়ার কারণ হলো, আমরা রাজনীতি করি ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণের জন্য।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘শিক্ষার মধ্যে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ধ্বংস করা হয়নি। এখন যদি বলেন আপনি ইসলামিক শিক্ষা দেবেন, তাহলে বলব মধুর মধ্যে আপনি বিষ মিশ্রণ করবেন না। বিগত দিনের যে শিক্ষাক্রম সাজানো হয়েছে এর প্রতিটা বই বাদ দিতে হবে। নতুনভাবে বই সাজাতে হবে। নইলে এই আন্দোলন ব্যর্থ হবে।’
বৈষম্যের প্রসঙ্গ টেনে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে। ৪ আগস্ট শাহবাগে বিকেলে বলেছিলাম, ৫ তারিখ জনগণ গণভবন দখল করবে। আল্লাহর কৃপায় ৫ তারিখেই গণভবন দখল হয়েছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী আন্দোলনের খবরও নেয় না। আজকে বাংলাদেশের এত পরিবর্তন হয়েছে; আমি প্রশ্ন করি, ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে কি পরামর্শ করা হয়েছে? অথচ যে সমস্ত দলের মহাসচিব ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে তারা সম্পর্কিত নন, তাদের হুকুম চলছে। আর আমরা জীবন বাজি রেখে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম গুলির সামনে। আমাদের খবরও নেই। এখানেই তো বৈষম্য শুরু হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম নগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষ রয়েছে। আগামী দিনে তাদের যত কর্মসূচি ও পরিকল্পনা রয়েছে, আমরা ইসলামী দলগুলো সবাই তাদের সঙ্গে একমত। আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি মুহাম্মাদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তাজুল ইসলাম, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন, বিএনপি চট্টগ্রাম নগরের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক এস এম সরোয়ার আলম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিমুদ্দিন চৌধুরী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ, সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি মাওলানা জাকারিয়া প্রমুখ।
এমএইচ/