রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ২০ পৌষ ১৪৩১ ।। ৫ রজব ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল বেফাকের মজলিসে শূরার বৈঠক সেভেন সিস্টার্সকে বাঁচাতে ভারত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে: সারজিস ইসলামে নারী শিক্ষার বিকল্প নেই: মাওলানা আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী ‘ডাকাত এস আলমকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে শেষ করে দিয়েছে’ কুরআন ও হাদিসের আলোকে মাহে রজবের ফজিলত ও বিধান বরিশালে ৩ দিন ব্যাপী নূরানী মুআল্লিমদের জোড় ১৪ জানুয়ারি প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন নিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা নতুন শিক্ষাবর্ষের সকল পাঠ্যপুস্তক নিরীক্ষণ করবে খেলাফত আন্দোলন সাদপন্থীদের বিচার দাবিতে ১০ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ ‘হাতে রক্তের দাগ নিয়ে সাদপন্থীদের ইজতেমা করার অধিকার নেই’

‘আমার দোষগুলো যে আমাকে ‘হাদিয়া’ দেয়, আল্লাহ তাকে রহম করুন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ ||

الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى آله وصحبه اجمعين. وبعد:

কিছু টুকরো কথা-

১. যদি আমার কোনো ভুল-ত্রুটি সহকর্মী কারো নজরে আসে, তাহলে ‘আদ দীনু আন নসীহাহ’ হিসাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা তার দায়িত্ব। ভুলের কারণে যেন আমি ক্ষতিগ্রস্থ না হই, আমাদের যৌথ পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়। ফারুকে আজম হযরত উমর রা. বলেন,

رحم الله امرأ أهدى إلي عيوب نفسي

তার প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে আমার দোষগুলো আমাকে ‘হাদিয়া’ দেয়।

হযরত উমর রা. ‘দোষ ধরিয়ে দেয়া’কে ‘হাদিয়া দেয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন। উপহারের মাধ্যমে মানুষ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কল্যাণকামিতা প্রকাশ করে। প্রাপক ও প্রদানকারী দুজনই খুশী হয়। উপহারের জিনিসটাকে মানুষ গিফটপেপারে সুন্দর মোড়কে প্রস্তুত করে। হাসিমুখে নিবেদন করে। গ্রহিতা শোকর আদায় করে, সম্মানিত বোধ করে।

ঠিক তেমনি আমার দোষটা কেমন যেন আমাকে দেয়া উপহারের বস্তু। কল্যাণকামিতা থেকে আপনি এমনভাবে ধরিয়ে দিবেন, যেন আমি অনুভব করি এবং বলে উঠি- আপনি আমাকে সতর্ক না করলে আমার এবং পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। আমি আপনার শোকর আদায় করছি। আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

যার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছি- তাকে চিঠি লিখতে পারি, একান্তে বলতে পারি, পরিবেশ থাকলে প্রকাশ্যে বলতে পারি- আপনার অমুক অমুক গুণের কারণে সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভুল তো সবার হয়, তবে কাজ যে করে তারই ভুল আলোচনায় আসে। ওটা সংশোধন হওয়ার মাঝে সবার কল্যাণ। মনে হয়- অমুক বিষয় পুনর্বিবেচনা দরকার, ঐ আচরণ সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। এর কারণে এই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। -এভাবে আমরা ভুল-ত্রুটি পর্যালোচনার অভ্যাস করি।

২. ভুল মানুষের হয়। তরিকা মতো এসলাহের বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। তাহলে ফেতনা-ফাসাদ অনেক কমে যাবে। পরিবেশ সুন্দর থাকবে। বেউসুলি করলে সমস্যা বাড়ে বৈ কমে না। সংশোধনের আন্দাজের কারণে অনেক সময় এসলাহের পরিবর্তে ফাসাদ বেড়ে যায়।

হযরত উমর রা. আরো বলেন,

لا خير في قوم ليسوا بناصحين، ولا خير في قوم لا يحبون الناصحين.

তাদের কোনো খায়র নেই, যারা নিজেরা নাসেহ নয়, আবার কোনো নাসেহকে তারা দেখতেও পারে না।

আমাদের আপত্তি তোলার ভঙ্গি যেন হিংসাত্মক না হয়, আক্রমনাত্মক না হয়। অঙ্গভঙ্গি ও শব্দ চয়নে যেন কোনো প্রকার বিদ্বেষ প্রকাশ না পায়। আমরা যদি আচরণে উচ্চারণে কল্যাণকামিতা ফুটিয়ে তুলতে পারি, অন্তরে ‘নুসহ’ পোষণ করে যদি আত্মসমালোচনা করতে পারি, তাহলে মোয়াশারাগত বহু সমস্যা খুব সহজে সমাধান হয়ে যাবে।

হযরত শাব্বির আহমাদ উসমানি রহ. বলেন,

اگر حق بات حق نيت سے حق طريقہ سے کہى جائے تو فتنہ نہ ہوگا

হক কথা খালেস নিয়তে সঠিক নিয়মে বললে ফেতনা হয় না।

কিন্তু বর্তমানে এগুলো খেয়াল রাখা হয় না।

৩. আপত্তি করার সময় উঁচু আওয়াজে না বলা, ঝাঁঝালো কণ্ঠে না বলা, ক্ষোভ প্রকাশ না করা। রাগারাগি না করা। এটা ঝগড়া সৃষ্টি করে। এর দ্বারা ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়। المراء يطفئ نور العلم ঝগড়ার দ্বারা ইলমের নূর গায়েব হয়ে যায়।

আর  اختلاف راۓ অনিবার্য। এখলাসের সাথে উসুল মোতাবেক কৃত এখতেলাফ মামদুহ প্রশংসনীয়। হযরত থানবি রহ. বলেন- اختلاف راۓ হয় না কোথায়? যেখানে সবাই গর্দভ সেখানে হয় না। তো যেখানে صاحب را‌ۓ থাকবে, সেখানে اختلاف راۓ হবেই।

আমাদেরকে হযরত কাজী মুতাসিম বিল্লাহ সাহেব রহ. শিখিয়েছেন- সকল উস্তায মিটিং-এ দিল খুলে রায় দিবে। এটা তিনি পছন্দ করতেন। তবে اختلاف راۓ যেনো نزاع এর দিকে নিয়ে না যায়- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৪. হযরত থানবি রহ. এর মালফূযাত, মাওয়ায়েজ, খুতুবাত পড়া খুবই জরুরি। প্রতিদিন নিয়ম করে ১০ মিনিট করে হলেও পড়ি। দীনের সহি ফাহম ও সহি সমঝ তৈরি হওয়ার জন্য বেহদ উপকারী। আর হযরত তাকি উসমানি দা. বা. এর বয়ান শুনবো, দীনের ফাহম তৈরি হবে।

৫. হযরত মুফতি শফি রহ. বলেন, দারুল উলূম দেওবন্দ এর আসাতিযায়ে কেরামের মিটিং-এ সবার কলবের হালত এবং কথা বলার ভঙ্গি ছিল এমন- ‘আমি ছোট, সবাই বড়’। বাস্তবে তাঁরা সবাই ছিলেন বড়। আর আমরা সবাই নিজেদেরকে বড় মনে করি, বাস্তবে ছোট। একটাতো হলো, নিজেদেরকে ‘নাচিয’, ‘নালায়েক’ ইত্যাদি লিখি বলি। এগুলো ওযনদার আলফায। কিন্তু হাকিকত ছাড়া বলা কিবরের আলামত।

৬. নিজের দোষ দেখি, আর অন্যের গুণ দেখি। -এটা যদি করতে পারি, তাহলে একসময়  جامع الصفات والكمالات হতে পারবো। আর যদি অন্যের দোষ ধরায় মগ্ন থাকি, অন্যের সমালোচনা করতেই থাকি, তাহলে جامع العيوب والنقائص হওয়া ছাড়া গতি নেই। অন্যের গুণ স্মরণ রাখার ফায়দা হলো- তার যে সব দোষ রয়েছে, সে কারণে কম ক্ষোভ তৈরি হয়, ইনসাফ করা সম্ভব হয়। সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

৭. প্রত্যেক মানুষের عزت نفس আছে, এমনকি ছোট বাচ্চাদেরও আছে। এটা অহংকার না; এটা তবিয়ত, ফিতরাত। অহংকার আর عزت نفس এর মধ্যে পার্থক্য আছে।

কারো আত্মসম্মান নষ্ট করা যাবে না, কারো আত্মসম্মানে আঘাত করা যাবে না। খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। নিজের সন্তানকেও শাসন তরবিয়তের ক্ষেত্রে আমি যদি খেয়াল না করি, তাহলে আমি তাকে বেয়াদব বানিয়ে ফেলবো, তাকে باغى হতে বাধ্য করবো।

৮. বর্তমান যামানায় আকাবিরের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় দ্বীনি খেদমত হলো মাদরাসার খেদমত। আমরা মুরুব্বিদের রেখে যাওয়া আমানত মাদরাসাগুলো হেফাজত করি। ছাত্র গড়ি, ওদেরকে আবাব-কায়দা শিক্ষা দিই। দ্বীনের তালিম, তাবলিগ ও হেফাজতের জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলি। শিক্ষকগণ আহলে ইলম আহলে তাকওয়া হয়ে উঠি। মাদরাসাগুলোকে ফেতনা থেকে রক্ষা করি।

৯. হযরত পালনপুরি রহ. বলেন,

مدرس مصنف بنو، صرف مصنف نہ بنو

শুধু লেখক হয়ো না, মুদাররিস লেখক হও।

তাদরীস ও তাসনীফের সমন্বয়ে ইলম পোখতা হয়। তাদরীসকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল তাসনীফ নিয়ে থাকা মোনাসেব নয়। তাসনীফ লাগবে। তবে তাসনীফ করতে গিয়ে তাদরীসে অনেক দুর্বল হয়েগেলে প্রতিষ্ঠান চলবে না, ছাত্র গড়বে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।

سبحان الله وبحمده سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك.

-শ্রুতিলিখন: মাওলানা লুকমান হাসান
শিক্ষক, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা ১২১৭

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ