আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চৈত্রের শেষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে তীব্র গরমের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান তাপপ্রবাহ আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিভাগের জনজীবন। একাধিক জেলায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এতে খেটে খাওয়া মানুষ সীমাহীন কষ্ট ভোগ করছেন। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই মাঠেঘাটে কাজ করছেন কৃষকেরা, চালাচ্ছেন রিকশা, ঠেলাগাড়ি। তীব্র গরমে মানুষের শরীরের ত্বকে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তেমনি বোরো ধানের খেতে ফাটল ধরেছে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের মধ্যে ঢাকাসহ কিছু জায়গায় থার্মোমিটারের পারদ ৪২ ডিগ্রিতে উঠে যেতে পারে। এক্ষেত্রে রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগে দু-এক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে তীব্র আকারে তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
‘তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ’ বলে জানান আবহাওয়াবিদ।
চুয়াডাঙ্গায় মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিন সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা এবং সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসহ নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে রাজশাহীতে গত ৪ দিন থেকে চলছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রার পারদ উপরে উঠছে। বেলা ৩টা নাগাদ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। এরপর আবারও তাপমাত্রা কমে আসছে। আর তাপমাত্রার ঠিক বিপরীত চিত্র আর্দ্রতায়। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯২ শতাংশ। যেটা বেলা ৩টায় দাঁড়ায় মাত্র ১৫ শতাংশ। দাবদাহের কারণে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে মানুষের চলাফেরাও কমে আসছে।
বিকাল পর্যন্ত চলাচল থাকছে খুবই সীমিত। তবে মানুষ ঘরের বাইরে না বের হলেও শুষ্কতাজনিত সমস্যা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন।
এদিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো ধানের জমিতে ফাটল দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় জমিতে ঘন ঘন সেচ দিতে হচ্ছে। পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী জানান, তিনি এবার দেড় বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধান লাগানোর পরে বৃষ্টি হয়নি। সেচের জন্য দীর্ঘ সিরিয়ালও পড়ছে। বৃষ্টি না হলে স্বস্তি নেই।
অপরদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ। যদিও কৃষি বিভাগের দাবি, এখন পর্যন্ত কৃষিতে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ জানান, এ আবহওয়ায় বোরো ধান চাষে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা থেকে জমিতে পানি ধরে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য কোনো ফসলের ক্ষতির শঙ্কা এখনো নেই। তিনি আরও জানান, আমের মুকুল থেকে এখন গুটি হয়ে গেছে। অন্যান্য রবিশস্য এখন শেষের দিকে। এ কারণে কৃষিতে তেমন ক্ষতি হবে না। রাজশাহীতে সর্বশেষ ৩ এপ্রিল ৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি।
দেশের অনেক স্থানে তীব্র গরমে মানুষ যখন অতিষ্ঠ ঠিক সেই সময়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় উলটো চিত্র। সেখানে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এক সপ্তাহ ধরে তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক বলেই অভিহিত করেন তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
-একে