শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সকল নারী-পুুরুষের প্রতি মাওলানা তারিক জামিলের 'হৃদয় আকুতি'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সকল মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি অমূল্য নসিহত করেছেন বিশ্বব্যাপী ‘মুবাল্লিগে ইসলাম’ হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, পাকিস্তান তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি মাওলানা তারিক জামিল। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই নসিহতমালা। ভাষান্তর করেছেন আবদুল্লাহ তামিম


স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সম্মান করবেন, সহ্য করবেন। ভালোবাসবেন নিজের থেকেও বেশি। আমার নবি সা. বলেছেন, সর্বোত্তম মুসলিম হলো সে, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করে।

স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি  বলেছেন, আমার শরিয়তে মানুষের জন্য সাজদা করার অনুমতি থাকলে আমি স্ত্রীকে বলতাম, তোমার স্বামীকে সাজদা কর।

পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম সদকা হল ছেলে সন্তানদের লালন- পালন। আমার নবি একটি ঘরের একটি সংসারের পুরো নকশা বলে দিয়েছেন। একটি দাম্পত্য জীবন কেমন হবে সেটিও বলে দিয়েছেন। কার মর্যাদা কেমন হবে সেটিও বলে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

মা! তোমার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত। বাবা হলো তোমার জান্নাতের দরজা। এ দরজা খোল, কিন্তু ভেঙ্গ না। এ দরজা ভেঙ্গে ফেললে জান্নাতে যেতে পারবে না।

রাসুল সা. আরো বলেছেন, সর্বোত্তম মুসলিম হলো সে, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করে। সবচেয়ে উত্তম সেই স্ত্রী যে তার স্বামীর ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেয়।

তারপর রাসুল সা. এমন এক আশ্চর্য কথা বললেন, যা সমাজে আজ বড় ধরণের সমস্যা, বোঝা। হ্যাঁ ভাই। রাসুল সা. সাহাবাদের বললেন তোমাদের কি এমন এক সদকার কথা বলবো যার থেকে বড় কোনো সদকা নেই।

সাহাবারা বললেন, জি ইয়া রাসুলাল্লাহ বলুন, তিনি বললেন, ‘আল ইবনাতুল মারদুদাহ’ যার মেয়ের তালাক হয়ে গেছে বা বিবাহ হয়ে গেছে। যেকোনো সমস্যার কারণে ঘরে ফিরে এসেছে, বাবা মার কাছে ফিরে এসেছে, অথবা তার বাবা-মা নেই, ভাই আছে। তখন সে মেয়ে বাবা-মার কাছে বোঝা হয়ে যায়। আর ভাই তো আগের থেকেই অবাধ্য থাকে, আমার নবি বলেন, এ মেয়ের উপর খরচ করা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সদকা।

এ যে পরিবার, একটি ঘর কিভাবে চলবে। একটি সংসার কিভাবে চলবে, এগুলো হলো আমাদের জন্য নির্দেশনা। আমাদের পাকিস্তানের পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সারহাদে মেয়েদের জন্য মিরাসের কোনো অংশ নেই। তারা মিরাসের কোনো অংশ পায় না। সব সম্পদ ভাইয়েরা ভোগ করে।

আমার নবি বলেছেন, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ দুইজন বোন দিয়েছেন, সে তাদের হক আদায় করেছে, বিয়ে দিয়েছে। সে তাদের হক আদায় করলো। হক মা-বাবার মিরাস থেকে হয়। নিজে যা উপার্জন করে তার উপর বোনদের হক নেই।

মা-বাবার কাছ থেকে যদি এক টাকাও আসে সেটাও বণ্টন করতে হবে। রাসুল সা. বলেন, তার বোনদের হক আদায় করেছে, তাদের বিয়ে দিয়েছে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।

রাসুল সা. আরও বলেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা তিন কন্যা দিয়েছেন. তাদের যথাযথ লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছেন। সে জান্নাতে আমার সঙ্গে দুই আঙ্গুল যেমন লাগানো থাকে তেমনই অবস্থানে থাকবে।

একজন সাহাবি বললেন, যদি দুটি মেয়ে থাকে সে যদি তাদেরকে লালন পালন করে বিয়ে দেয়? রাসুল সা. বললেন সেও  সে জান্নাতে আমার সঙ্গে দুই আঙ্গুল যেমন  লাগানো থাকে তেমনই থাকবে।

আল্লাহ ভালো করুন, আরেক সাহাবি বললেন, যদি কারো একটি মেয়ে থাকে? রাসুল সা. বললেন, যার এক মেয়ে আছে, আর সে তাকে লালন পালন করে ভালো পাত্রস্থ করে সেও আমার সঙ্গে জান্নাত থাকবে।

আজ কত মেয়ে এ কারণে তালাক হয়, তার ছেলে সন্তান নেই। এখানে বয়ানে আসার আগের ঘটনা। পিন্ডি থেকে এক মেয়ে কেঁদে কেঁদে বলছে, আমার পুত্র সন্তান হয় না। আমি ফোনে কথা শুনে হতবম্ভ হয়ে গেলাম। সে বলছে শুশুর বাড়ী থেকে জানিয়েছে এবার যদি মেয়ে সন্তান হয় তাহলে আমাকে তালাক দিয়ে দিবে।

আমি বললাম, আমার এখানে কি দোষ? শেষে কন্যা সন্তানই জন্ম নিল। সে আমাকে তালাক দিয়ে দিলো। আমি ২২ বছর বয়সে বাবার বাড়ি চলে আসি। আল্লাহ তায়ালা মেয়ে দেন, আর জুলুম করছে শশুরবাড়ির লোকজন।

হযরত মুহাম্মদ সা. কে আল্লাহ তায়ালা ছেলেদের দিয়ে উঠিয়ে নিয়েছেন। কাসেম, আব্দুল্লাহ, ইবরাহিমকে মৃত্যু দিয়েছেন। চার সন্তানের মধ্যে তিনজনকে রাসূল সা. এর জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করেছেন। যয়নাব, উম্মে কুলসুম, রুকাইয়া এই তার চোখের সামনে মৃত্যু বরণ করেছেন। আয়েশা রা. থেকে রাসূল সা. এর বংশ বিস্তার হয়েছে। কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য মেয়েদের কি দোষ?

যে নিজের বোনদের হক আদায় করবে, যে নিজের কন্যাদের বিয়ে দিবে সে জন্নাতে থাকবে। বোনদের তাদের হক এত বেশি জরুরী যে, না দিলে খাবার হারাম মিশ্রিত হয়ে যায়।

অনেক আগের ঘটনা, মাওলানা জামশেদ সাহেবের কাছে আমি তাফসির পড়েছি। একবার আমি তার কাছে এক বোলম মধু নিয়ে গেলাম, বললাম, হযরত এটা হাদিয়া। তিনি আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, এটা কোত্থেকে এনেছো। আমি বললাম, আমাদের বাগান থেকে।

তিনি আমাকে বললেন, তোমার বাবা তার বোনদের জমিনের অংশ দিয়েছে। যদি দিয়ে থাকে তবে আমি এটা নিব। আর যদি না নেয় তাহলে এটা আমি নিব না। এটা হারাম।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ