আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, যে কোন রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া।
এই দুইগুন না থাকলে রাষ্ট্রের বিকাশ, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি থমকে যায়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশ স্থিতিশীল না; ভারসাম্যপূর্ণ না। যার খেসারত দিচ্ছে রক্তে কেনা বাংলাদেশের কোটি জনতা।
আজ (১৮ এপ্রিল) সোমবার রাজধানীর মিরপুরস্থ গ্র্যান্ড প্রিন্স কনভেনশন সেন্টারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম আমীর পীর সাহেব চরমোনাই উপর্যুক্ত মন্তব্য করেন।
ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমীনুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, দফতর সম্পাদক লোকমান হোসেন জাফরী সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী মাওলানা আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে নগর ও থানা এবং সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
পীর সাহেব আরো বলেন, অর্ধশত বছরের একটি দেশ অথচ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত রকমের অস্থিতিশীল। নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা যায় নাই। যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল জনতা ভোটাধিকার প্রয়োগের উৎসব; তা আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মহড়ায় পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীক দ্বন্দ্বে এতটাই বেপরোয়া যে, ৫ বছর পর পর নির্বাচনের সময় দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। অন্যদিকে ভারসাম্যহীনতা সর্বত্র।
অর্থনীতিতে একদিকে আকাশচুম্বি জিডিপি অন্যদিকে টিসিবি’র পণ্য কিনতে ট্রাকের পেছনে ছুটছে ক্ষুধাতুর মানুষ। একদিকে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে ৪৪ শতাংশ মানুষ খাবারের বাজেট কমাতে বাধ্য হচ্ছে। ¶মতা সংশ্লিষ্টরা রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করছে অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের তুচ্ছ কারনে জেলে পাঠানো হচ্ছে। ¶মতা কুক্ষিগত করতে যা খুশি করছে আর সাধারণ নাগরিকরা কথা বলার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
একদিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্কুতির নামে হিন্দুত্ববাদের চর্চা হয় অন্যদিকে ছাত্রীদের নামাজের জায়গা ভেঙ্গে দেয়া হয়। ¶মতাসীন নেতাকর্মীদের কথায় ভারসাম্য নাই, পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য নাই, আমদানি-রপ্তানি তথা বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য নাই, উৎপাদন-বিপনন ও ভোগে ভারসাম্য নাই, বাজারদরে ভারসাম্য নাই। সামগ্রিকভাবে ভারসাম্যহীনতার কারণে টালমাটাল বাংলাদেশ।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, এই অস্থিতিশীলতার মূল কারণ ইসলামী অনুশাসন মান্য না করা। ব্যক্তি জীবনে ইসলামের নির্দেশনা মেনে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, ক্ষমতার মোহ, দুনিয়ার মোহ দূর করে তাকওয়া, খোদাভীতি, কল্যাণকামিতা, অল্পে তুষ্টি অর্জন করতে পারলে এই পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হতো।
একই সাথে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের অনুশাসন মেনে দেশ পরিচালনার বিষয়কে ¶মতা মনে না করে দায়িত্ব মনে করলে, জনতা ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার মনোভাব রাখলে, হযরত আবু বকর রাদি. এর মত দায়িত্ববান হলে, হযরত ওমর রাদি. এর মত স্বচ্ছ হলে হযরত ওসমান রাদি. এর মত কল্যাণকামী হলে এবং হযরত আলী রাদি. এর মত ন্যায়পরায়ন হলে বাংলাদেশ আজ স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারত, ভারসাম্যপূর্ণ হত রক্তে কেনা বাংলাদেশ।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের যেসব মূলনীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা মানুষ্য চিন্তা ও দর্শণ নির্মিত।
যার ব্যাখ্যা সর্বদাই আপে¶িক, ব্যক্তির বিবেচনার উপওে প্রয়োগ নির্ভর করে। এমন মূলনীতি দিয়ে দেশকে কখনোই স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ করা সম্ভব না। যা বিভিন্ন সংশোধনীর কারনে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই।
সেজন্য আমরা বলব, আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য যে মূলনীতি দিয়েছেন যা স্থান-কাল-পাত্র ও ব্যক্তি সাপেক্ষ নয়, যা সবধরণের আপোষহীনতার ঊর্ধ্বে সার্বজনীন, যা সর্বোচ্চ স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ তাকে দেশের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করুন। তবেই দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, ভারসাম্য আসবে, আসবে বিনিয়োগ, উন্নতি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা। প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।
-এটি