|| হাসান আল মাহমুদ ||
জাতীয় শিশু-কিশোর সাময়িকী মাসিক নকীব পদক পেয়েছেন অনর্তবর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা বিশিষ্ট লেখক-গবেষক ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন ও বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক জহির উদ্দিন বাবর।
আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এই পদক তুলে দেয়া হয় তাদের হাতে।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তী কালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা লিয়াকত আলী, মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ, মুফতী আমীমুর ইহসান, আহমদ বদরুদ্দীন খান, মুফতি এনায়েতুল্লাহ ও মিরাজ রহমান।
আমন্ত্রিত হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন এনায়েত রসুল, আহমেদ রিয়াজ, জহির উদ্দিন বাবর, মাসউদুল কাদির, হুমায়ুন আইয়ুব, মুনীরুল ইসলাম, আতাউর রহমান খসরু, আবদুল্লাহ তামিম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন মাসিক নকীবের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি নূরুল বশর আজিজী। সঞ্চালনা করেছেন সম্পাদক মুহা. মেহেদী হাসান ও নির্বাহী সম্পাদক জিয়াউল আশরাফ।
পদক পাওয়া দুই লেখকের পরিচয়:
বহুমাত্রিক প্রতিভাধর আলেম ও গুণিন মানুষ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন (জন্ম২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ , সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম)। চিন্তা গবেষণা ও শিল্পকর্মে তিনি যুগের পর যুগ বেঁচে থাকবেন। লক্ষ্যে অবিচল, আদর্শে অটল আর লেখা-বলাসহ বহুরৈখিক কাজে সমান্তরাল এই মানুষটি আজ সম্মানিত হচ্ছেন। পুরস্কৃত হচ্ছেন। পাচ্ছেন মাসিক নকীব পদক।
তিনি বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। এটি তার গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হলেও একাধারে তিনি শিক্ষক, লেখক, গবেষক, সুবক্তা, সংগঠক, একাধিক বই ও পত্রিকার সম্পাদক। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত- ইসলামী বিশ্বকোষ এবং সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। রচনা করেছেন ২০ টি গ্রন্থ। মাসিক আত তাওহীদ পত্রিকার সফল সম্পাদকও তিনি। বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রায় দুইশ। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক। তিনি ওমরগণি এম.ই.এস. কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খন্ডকালীন অধ্যাপক এবং নেজামে ইসলাম পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
জহির উদ্দিন বাবর। হাওর বিধৌত অঞ্চলে তার জন্ম। হাওরের পানি ও পরিবেশ যেমন প্রকৃতিকে নির্মল করে, জহির উদ্দিন বাবরের লেখা তেমনি পাঠকের মনে নতুন ভাবনার জন্ম দেয়। ফিচার ও গদ্যে যেমন তার হাত পাকা, অনুবাদেও তিনি সৎ।
লেখালেখির শুরুতে সাহিত্যের প্রতি তার ধ্যান-জ্ঞান ভাবনা ও বিচরণ ছিল অবাধ। এখন অবশ্য সম্পাদনা এবং জীবনমুখী মানুষের কথা তুলে ধরতে বেশি কাজ করছেন। এর পেছনে মন-মননের সব শক্তি সমর্পণ করে দেশব্যাপী ঘুরে ঘুরে তুলে আনছেন রত্নভাণ্ডারের ইতিহাস। সাংবাদিকতা করেও পত্রপত্রিকায় নিজের উপস্থিতি ধরে রেখেছেন। লেখক, অনুবাদক ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি সমানভাবেই পরিচিত ও জনপ্রিয়। ব্যক্তি হিসেবে তার ব্যবহারও মুগ্ধ হওয়ার মতো।
জহির উদ্দিন বাবর প্রায় দেড় যুগ ধরে লেখালেখিতে সক্রিয়। মূলধারার গণমাধ্যমে বার্তা বিভাগে কাজ করছেন এক যুগ ধরে। তাঁর জন্ম কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। দাওরায়ে হাদিস জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুর ঢাকা থেকে। সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করেছেন মাদরাসা দারুর রাশাদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স করেছেন। সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেছেন সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এমআরটিতে।
পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেছেন মাদরাসা দারুর রাশাদে। বর্তমানে মূলধারার অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা মেইলের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাবেক সভাপতি। লেখা ও লেখকের কথা নিয়ে প্রকাশিত সাময়িকী লেখকপত্রের সম্পাদক। তাঁর প্রকাশিত লিখিত ও অনূদিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। বিভিন্ন দৈনিক, মাসিক ও সাময়িকীতে তাঁর কয়েক হাজার প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
লেখালেখির জন্য তিনি মাসিক আল আমানাহ অ্যাওয়ার্ড-২০১০; মাসিক আদর্শ নারী লেখক সম্মাননা-২০১২, মাসিক সত্যের সন্ধানে লেখক সম্মাননা ২০১৫, মারকাযুত তাহফিজ ইন্টারন্যালের বিশেষ সম্মাননা ২০১৬, টাইমসবিডি সম্মাননা স্মারক ২০১৯, আমরা এক কাফেলা (যাদুরচর মাদরাসা) লেখক সম্মাননা ২০২১, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিল লেখক সম্মাননা ২০২২, বিশ্ব কল্যাণ লেখক সম্মাননা ২০২৩ লাভ করেন।
প্রসঙ্গত, মাসিক নকীব-২০২১ সাল থেকে নকীব পদক প্রবর্তন করে। গুণী লেখকদের এই পদক প্রদান করে আসছে পত্রিকাটি। ২০২১ সালে নকীব পদক পান বরেণ্য শিশু সাহিত্যিক মরহুম কবি মহিউদ্দিন আকবর, জনপ্রিয় লেখক, আলেম মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন ও বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক গল্পকার এনায়েত রসুল।
২০২২ সালে বিরতি দিয়ে ২০২৩ সালে আবারও পদক প্রদানের ধারা চালু হয়। তখন মরণত্তোর পদকপ্রাপ্ত হন বাংলাদেশের ইসলামি সাহিত্যের জাগরণ সৃষ্টিকারী লেখক, সিরাত গবেষক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.। সময়ের শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী, বিশিষ্ট লেখক গল্পকার আহমেদ রিয়াজ।
হাআমা/