আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মামলা রোহিঙ্গা ‘জেনোসাইড’ (গণহত্যা) নিয়ে দুই দফায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় একবারের জন্যও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেনি মিয়ানমার পক্ষ। মিয়ানমার যে তার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করতে চাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) যুক্তি উপস্থাপনের সময় গাম্বিয়ার পক্ষে আইনজীবী পল রেইখলার এ যুক্তি তুলে ধরেন।
রেইখলার বলেন, গাম্বিয়া তৃতীয় পক্ষ, সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত নয়—এসব যুক্তি আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য। মিয়ানমার গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক সনদ স্বাক্ষর করেছে। সেই সনদ মিয়ানমারসহ স্বাক্ষরকারী সব রাষ্ট্র মানতে বাধ্য। সনদের সদস্য হয়ে সেই সনদ নিজের পাশাপাশি অন্য সদস্যদেরও মেনে চলার ব্যাপারে যে কোনো সদস্য রাষ্ট্র আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে। মিয়ানমার সনদ মেনে চলার দায় এড়াতে পারে না।
গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক সনদ লংঘন ও রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালে গাম্বিয়া আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে। গাম্বিয়ার ওই মামলার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার। গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে আইসিজেতে এ নিয়ে শুনানি হয়। গতকাল শুনানির শেষ দিনে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী এবং মামলায় গাম্বিয়ার পক্ষের এজেন্ট দাওদা অ্যা. জালো মিয়ানমারের আপত্তি নাকচ করার আবেদন জানান। শুনানি শেষে আদালত বলেছেন, রায়ের বিষয়ে উভয় পক্ষকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জানানো হবে।
গাম্বিয়ার পক্ষের আইনজীবী পল রেইখলার গতকাল আদালতে বলেন, মিয়ানমার দ্বিতীয় দফা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় প্রথম দফার যুক্তিই তুলে ধরেছে। মিয়ানমার দাবি করেছে, গাম্বিয়া ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) হয়ে মামলা করেছে। তিনি আদালতকে একটি ভিডিও দেখার অনুরোধ জানান। সেই ভিডিওতে কক্সবাজারে সমবেত লাখ লাখ রোহিঙ্গা ‘গাম্বিয়া’ ‘গাম্বিয়া’ ‘গাম্বিয়া’ বলে স্লোগান দিচ্ছে।
রেইখলার বলেন, রোহিঙ্গারা জানে তাদের পক্ষে কে মামলা করেছে। গাম্বিয়ার মামলা করার অধিকার নিয়ে মিয়ানমারের বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন, অপ্রাসঙ্গিক ও আপত্তিকর। তিনি আদালতের সামনে প্রশ্ন রাখেন, মিয়ানমার যখন তার নিজ জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করছে তখন গাম্বিয়া তার প্রতিকার চেয়ে আদালতে এসেছে। এটি বিশ্বাস করা কি খুব কঠিন?
গাম্বিয়ার পক্ষের আইনজীবী বলেন, সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোর সনদ মেনে চলাটা গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমার গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক সনদ নিয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছে সেগুলো শুধু ভুল নয়, বিপজ্জনক। এগুলো করে মিয়ানমার বিচার এড়াতে চাইছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার অন্তত এক মাস আগেই জানত গাম্বিয়া মামলা করছে। তবুও তারা গাম্বিয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত চিঠির জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।
রেইখলার বলেন, আদালতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। অথচ গত সপ্তাহেও জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা এখনও ঝুঁকিতে আছে। মিয়ানমার বিচার এড়াতে সময় ক্ষে পণ করতে চাইছে।
আদালতে গাম্বিয়ার পক্ষের এজেন্ট দাওদা অ্যা. জালো বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে গাম্বিয়া অন্য একটি রাষ্ট্রকে সনদ মানাতে বাধ্য করতে আইসিজেতে এসেছে। এই মামলা গাম্বিয়া একাই করেছে। মামলা করার আগে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে গাম্বিয়া প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে। জাতিসংঘে বক্তব্য দিয়েছে। মিয়ানমারকে নোটিশ দিয়েছে। মিয়ানমারের কর্মকর্তারাও প্রকাশ্যে বলেছে, তারা নোটিশ পেয়েছেন।
গাম্বিয়ার এজেন্ট বলেন, গণহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক সনদের নবম অনুচ্ছেদ মিয়ানমার অনুমোদন করেছে। তাই গণহত্যা প্রতিরোধের দায়দায়িত্ব মিয়ানমার এড়াতে পারে না। তিনি মিয়ানমারের অন্তর্বর্তী অভিযোগগুলো নাকচ করে অপরাধগুলোর বিষয়ে শুনানি শুরুর আবেদন জানান।
এনটি