নুরুদ্দীন তাসলিম।।
মারকাযুল ফিকরিল ইসলামি (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার) বসুন্ধরায় খানকাহে ইমদাদিয়া আশরাফিয়া আবরারিয়া এর ১৮তম বার্ষিক ইহইয়ায়ে সুন্নত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওলামায়ে কেরামের জন্য অনুষ্ঠিত বিশেষ এই ইজতেমায় পত্র মারফতে বয়ান করেছেন শাহ আবরারুল হকে রহ.-এর জানেশীন দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যতম শূরা সদস্য, মজলিসে দাওয়াতুল হক ও ভারতের আশরাফুল মাদারিসের নাজেম হাকীম মুহাম্মদ কালিমুল্লাহ।
বয়ানে তিনি বলেন, মজলিসে ইহইয়ায়ে সুন্নতের অধীনে ওলামায়ে কেরামের বিশেষ ইজতেমার খবর পেয়েছি। আল্লাহ তাআলা এই ইজতেমাকে কবুল করুন।
একটি নসিহত করতে চাই তাহল- যে কাজ করুন না কেন আল্লাহ তায়ালার জন্যই করুন। সব কাজে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিন। কাজ যত একনিষ্ঠতার সাথে করবেন ততই উন্নতি লাভ করবেন।
ওলামায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে কিছু নিবেদন-
১) দ্বীনি মজলিসে অংশগ্রহণের পূর্বে নিজের নিয়ত ঠিক করে নিন। আমলের নিয়তে শুনুন। প্রত্যেক কাজে সুন্নত পদ্ধতি অবলম্বন করুন। এবং আমলের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করুন।
২) যেই কাজেই করুন না কেন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি উদ্দেশ্যেই করুন, কাজকে উদ্দেশ্য বানাবেন না। কাজের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিই আসল উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করুন।
প্রত্যেকেই নিজের উপর অর্পিত কাজ দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করুন। চাই জিম্মাদার আপনার কাজ দেখুন কিংবা না দেখুন; আল্লাহ তায়ালা ঠিকই দেখছেন। তিনি সব সময় হাজির-নাজির; এ কথা মাথায় রাখুন।
আজকাল মাদরাসাগুলোতেও খেয়ানত ও আমানতহীনতার বিষয়টি স্বাভাবিক হতে চলেছে। মাদরাসায় সময় দেওয়ার ক্ষেত্রেও খেয়ানত করা হয়। মাদরাসার সামানা পত্রের ব্যাপারে সতর্কতা নেই। শুধু এই চিন্তা ভাবনা থাকে যে অর্থ ও মান সম্পদের ব্যবস্থা হয়ে যাক। সম্পদ কোথা থেকে আসছে এবং তার উৎসস্থল কেমন এসব নিয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। হালাল হারাম বিষয়েও কোন ভাবনা নেই। এজন্য দিনদিন অবস্থা বেগতিক হতে চলেছে। মাদরাসার সংখ্যা বাড়ছে, বিল্ডিংগুলো দেখতে দৃষ্টিনন্দন। শারীরিক কাঠামো ঠিক আছে; কিন্তু আত্মিক বিষয়টির প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই।
খানকাগুলোর অবস্থাও দিন দিন বেহাল হতে চলেছে। পীর মুরিদী রসম-রেওয়াজের মত কাজে পরিণত হতে চলেছে। মানুষজন বাইয়াত গ্রহণ করে চলে যায়। এরপর নিজের অবস্থা সম্পর্কে অবগতি করার কোন প্রবণতা থাকে না। শুধু বায়াত গ্রহণ করাকেই যথেষ্ট মনে করে। মনে রাখবেন, বাইয়াত গ্রহণ করা সুন্নত; কিন্তু আত্মশুদ্ধি ও নিজের আখলাক সুন্দর করা ফরজে আইন।
৩) দ্বীনের কাজে নিয়োজিত থাকা প্রত্যেককেই একে অপরের সহযোগী, কেউ কারো থেকে আলাদা নয়। সবার পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করা উচিত। সবগুলোই দ্বীনের কাজ ও কাজের অংশ। কারো জন্য এমন ভাবা সমীচীন নয় যে আমিই একমাত্র দ্বীনের কাজ করছি। আমিই আসল কাজ করছি। হযরত ওয়ালা হারদূয়ী নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু বলতেন; কখনো এটা বলবে না যে এটাই দ্বীনের কাজ, বরং বলবে এটাও দ্বীনের একটা কাজ।
৪) দুটি বাক্য মনে রাখবেন, ‘জবান ও কলম যেন বিপথে না চলে’। এ বিষয়ে অনেক সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৫) তাসাউফের মূল বিষয় হলো; জবানে জিকির ও অন্তরে কৃতজ্ঞতা- এটার উপর সব সময় আমল করতে হবে।
নিজের শত ব্যস্ততার ভিড়েও কিছু সময় বের করে আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মগ্ন হতে হবে। এতে করে ইনশাআল্লাহ শিগগির উন্নতি লাভ করবেন। সবসময় এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে; আল্লাহ তায়ালা সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন এবং তিনি সবসময় সব কিছুর খবর সবার থেকে ভালো রাখেন।
আল্লাহ তায়ালা এই ইজতেমায় আপনাদের উপস্থিতি কবুল করুন। আপনাদের দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা দান করুন।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র ওলামায়ে কেরামের জন্য প্রতিবছর রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার সুন্নতের আমলী মাশকের এ ইজতেমাটি আয়োজন হয়ে আসছে। মানুষের মাঝে সুন্নতের ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দিতে এবং সুন্নতের চর্চাকে আরো ব্যাপক করতে ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রহ. এ ইজতেমার সুচনা করেন। তার ইন্তেকালের পর এ দায়িত্ব পালন করছেন সাহেবজাদায়ে ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আরশাদ রাহমানী।
জানা যায়, খানকাহে ইমদাদিয়া আশরাফিয়া আবরাবিয়ার বর্তমান জানেশীন মুফতি আরশাদ রাহমানী’র তত্ত্বাবধানে ১৪ অক্টোবর (৬ রবিউল আউয়া) বৃহস্পতিবার আসরের পর উদ্ধোধন হয়ে এই ‘ইহইয়ায়ে সুন্নত ইজতিমা’ চলমান ছিল ১৫ অক্টোবর (৭ রবিউল আউয়াল) শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত।
এনটি