আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৭টি টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিনফিড) সম্প্রচার হয়। এই চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে কোনো আইনগত বাধা নেই। কিন্তু ক্যাবল অপারেটররা লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে এগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করেছেন।
আজ রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি, বন্ধ করার জন্যও বলিনি। বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত। এখানে যে কোনো চ্যানেল সম্প্রচার করতে পারে কিন্তু সেটি দেশের আইন মেনে করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপন মুক্তভাবে সম্প্রচারের আইন ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর অন্যান্য সব দেশেই আছে এবং আইন মেনেই সেখানে বিদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে। শুধু আমাদের দেশেই এই আইনকে বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছিল।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই আইন বাস্তবায়নের কথা দুবছর আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম এবং বেশ কয়েকবার তাগাদা দেয়া হয়েছে, নোটিশ করা হয়েছে এবং সবশেষে আগস্টে সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, পয়লা অক্টোবর থেকে আমরা আইন কার্যকর করব। আমরা সেটিই করেছি, কোনো চ্যানেল বন্ধ করা হয়নি।’
তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছে ডিজিটালাইজড না হওয়া পর্যন্ত এ আইন শিথিল রাখার জন্য। পুরো ভারতবর্ষ তো ডিজিটাল হয় নাই, সে সব দেশেও তো আইন কার্যকর আছে, সেখানে ডিজিটাল হওয়ার আগে থেকেই আইন কার্যকর আছে। সুতরাং আমাদের দেশে আইনকে তোয়াক্কা না করে এ ধরনের অজুহাত তোলার কোনো যুক্তি নেই।’
বিদেশি বেশ কিছু চ্যানেল সম্প্রচার অপারেটররা বন্ধ রেখেছে , এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা যেহেতু সংশ্লিষ্ট চ্যানেল থেকে ক্লিনফিড পায়নি, সে জন্য বন্ধ রেখেছে, সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা কোনোটাই বন্ধ করতে বলিনি, আগে থেকেই সময় দেয়া হয়েছিল যাতে করে তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোকে ক্লিনফিড পাঠানোর জন্য বলে এবং পাশাপাশি তারাও প্রস্তুতি নেয়। যথেষ্ট অর্থাৎ দুই বছর সময় দেয়া হয়েছিল। আমি দু’বছর আগে থেকে তাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছি। এর আগেও এ আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। সবশেষে সবার সাথে বসেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে, বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, এনএইচকে, ফ্রান্স ২৪, রাশিয়া টুডে’সহ প্রায় ২৪টি চ্যানেলের ক্লিনফিড আসে। কিন্তু সেগুলো অনেকে চালাচ্ছেন না, যেটি ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ। কেউ শর্তভঙ্গ করলে, সেই অপরাধে অভিযুক্ত হবেন।’
ড. হাছান বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলোর এদেশে এজেন্ট আছে, ক্লিনফিডের দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের এবং এজেন্টের। কিন্তু কোনো কোনো ক্যাবল অপারেটর এজেন্টদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে এটি পাইরেসি করে ডাউনলিংক করে। অনুমতি ছাড়া ডাউনলিংক করা আইনবহির্ভূত।’
কিছু ক্যাবল অপারেটরের আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের আন্দোলনের কথা বলা অযৌক্তিক। যারা দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে এবং সংস্কৃতিকে চোখ রাঙাচ্ছে, সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা দেশের স্বার্থবিরোধী, আইনবিরোধী। আমি আশা করব দেশের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হবেন না।
সরকার কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না। দেশের স্বার্থ ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য, দেশের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। অবশ্যই তারা যদি আলোচনা করতে চায়, আলোচনা হতেই পারে, তারাও এখানে আমাদের সহযোগী। তাদের সাথে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। তবে আলোচনার ভিত্তি হবে আইন মানা, দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ।’
মন্ত্রী বলেন, ক্যাবল অপারেটরদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কার কথা কেউ কেউ বলছেন, এটি জনগণকে ধোঁকা দেয়ার মতো একটি বক্তব্য। ক্যাবল অপারেটররা গ্রাহকের কাছ থেকে যে চার্জ নেয় সেটি কি কমিয়ে দিয়েছে -প্রশ্ন রেখে ড. হাছান বলেন, তাদের আয় এক টাকাও কমে নাই বরং আরও টাকা সাশ্রয় হবে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘এরা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে, দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে এবং দেশের মিডিয়ার স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আজকে আমরা যখন এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি দেশের সমস্ত গণমাধ্যম এটিকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্প্রচার জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং শিল্পীরাও অভিনন্দন জানিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে, দেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে, সাংবাদিকদের স্বার্থে, গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী-কলাকুশলীদের স্বার্থে। আমাদের দেশে যারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থকে যারা জলাঞ্জলি দিয়ে কথা বলে তারা দেশের পক্ষে কথা বলে না।’
সারা দেশে আমাদের মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে। মন্ত্রণালয়ের সচিব সকল ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের সাথে অনলাইনে সভা করবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আইন ভঙ্গের অভিযোগ যেখান থেকে পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
-এটি