আওয়ার ইসলাম: উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত সংবাদি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত দুই দিন ধরে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেলস্টেশন ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বাড়িঘর, মানবসম্পদের ক্ষতি করেছে। এই জাতীয় ক্ষয়সহ সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। তা না হলে জনগণের জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।
এতে বলা হয়, সরকার উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে, একটি মহল এতিম ছাত্র ও শিশুদের রাস্তায় নামিয়ে সরকারি সম্পদ ধ্বংসসহ নানা ধরনের অপকর্ম করছে। প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।
আরো বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসত্য গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, আইন অমান্য করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাশকতামূলক কাজে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকার বায়তুল মোকাররমে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে গুলিতে চারজন নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওই দিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেন।
রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করেন। সেখানে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। হেফাজতে ইসলামের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি স্থানে সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজন নিহত হন।
প্রতিবাদী মুসল্লিদের ওপর হামলা ও হত্যার’ প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম আজ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। এই হরতাল ঘিরেও সহিংসতা হয়েছে।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী অদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজ রোববার (২৮ মার্চ) চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত (২৬ মার্চ) শুক্রবার আমাদের হাটহাজারী মাদরাসার শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রশাসন পুলিশ বাহিনী (বিশেষভাবে হাটহাজারী থানার ওসি) গুলি করে ৭ জনকে শহীদ করেছে। আরো অনেক আহত। একজন নিরীহ মানুষ, তাবলীগী ভাই-তাকেও শহীদ করেছে।
আরো অনেক জায়গায় নিহত হয়েছে। বিশেষভাবে ঢাকায়, হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোট ১৬ জনের মৃত্যু সংবাদ আমরা পেয়েছি। এটা কোন সাধারণ বিষয় নয়। এই কারণে আমরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে হরতালের ডাক দিয়েছিলাম। আমাদের হরতালের কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ। আমাদের হরতাল আজকে সারাদিন চলবে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি আছে। শান্তিপূর্ণভাবেই হরতাল পালিত হচ্ছে। এ হরতাল পালন করার জন্য সারা দেশের জনগণ এবং আলেম-ওলামারা সাড়া দিয়েছে।
তিনি হরতাল পালনকারী সাধারণ হেফাজত কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আজকে যেভাবে আপনারা সাড়া দিয়েছেন। এভাবে ইসলামবিরোধী কাজ হলে আমরা আহবান করব, আপনারা আমাদের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়বেন ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা বাধ্য হয়েই হরতালের ডাক দিয়েছি। ১৬ টি প্রাণ নিহত। আরো কত আহত। আবার গ্রেফতার করেছে অনেককে। এই জুলুম-নির্যাতন ও বর্বরতার বিরুদ্ধে ছিলো হরতালের ডাক। আমাদের হরতাল ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমাদের হরতাল ইনসাফের পক্ষে ও জুলুমের বিরুদ্ধে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের হরতাল কামিয়াব ও সফল।
কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় সরকারের পেটোয়া বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন করেছে। হামলা করেছে। আক্রমণ করেছে। আহত-নিহত করেছে। আমাদের হেফাজতের নায়েবে আমীর, আল্লাহর অলি মধুপুরের পীর আল্লামা আব্দুল হামিদ সাহেবের উপর হামলা করেছে।
এই ১৬ জন নিহত হওয়া ছাড়াও আরো অনেক আহত হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি এ হামলা যেন বন্ধ করে। যারা নিহত হয়েছে তাদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারের। যারা আহত হয়েছে তাদের ভালো চিকিৎসা চালানোর জন্য যে টাকা-পয়সা দরকার সেটা সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে।
যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। বিভিন্ন মাদরাসায় হামলা করেছে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়া, দারুল আরকাম, রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সাইনবোর্ড মাদরাসায় হামলা করেছে সরকারের পেটোয়া বাহিনী।
এগুলো যেন অবিলম্বে বন্ধ করে। আর যদি এভাবে হামলা চলতে থাকে, এবং আমাদের নেতাকর্মীদের যদি আহত করা হয়, নিহত আহত করা হয়, হেফাজতের দাবি দাওয়া যদি দাবী পূরণ করা না হয়, তাহলে পরামর্শ সাপেক্ষে হেফাজতের পক্ষ থেকে কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে।
-এটি