আওয়ার ইসলাম: দেশে করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত দলের সুবর্ণজয়ন্তীর সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিএনপি। আজ বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর ও বিপদজনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। চলতি সাপ্তাহে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৫৫৪ জন; যা গত নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি ও বিদেশি মেহমানদের স্বাগত জানানো ও অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তার প্রেক্ষাপটে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে জনমনে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিএনপির গৃহীত সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হলো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমাদের গৃহীত কর্মসূচিগুলো পুনরায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করা হবে।’
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের মধ্যে ২৫ মার্চ আলোচনা সভা, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শোভাযাত্রা ও ৩০ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুবর্ণজয়ন্তরীর সমাবেশ ছিলো। এসব কর্মসূচির কোনোটিরই এখনও অনুমতি পায়নি বলেও জানান বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দয়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করি আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত করোনার এই ভয়াবহতার কারণে সমাবেশ বন্ধ করা দরকার। যে কারণে আমরা সব স্থগিত করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতি একটাই অনুরোধ থাকবে, সবাই মাস্ক পড়বেন, সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবেন। আর অতিরিক্ত ভিড়ে গিয়ে নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।’
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘আজকে একজন সিনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি তো আমার ওপরে রেগেই গেলেন। বললেন, এখনও কেন আপনারা এই সমস্ত অনুষ্ঠান করছেন, এই মুহূর্তে বন্ধ করেন। গোটা জাতি আজকে ঝুঁকির মধ্যে আছে। ভয়াবহ আক্রমণ করছে এই ভাইরাস। তাই সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে সব কর্মসূচি স্থগিত করে করোনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং করোনার সংক্রামণ কম হয় তার ব্যবস্থা করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রথম দিকে প্রচুর আর্মি নামিয়ে দেওয়া হলো, তারপর সব তুলে নেওয়া হলো। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে আক্রমণ শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে, আগের মতো দুবর্ল না। আরও বেশি শক্তিশালী। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছেন যে, যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদেরকে অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং সেখানে আইসিইউ না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মুজিব শতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে, তার সঙ্গে সুবর্ণজয়ন্তী আছে। ওদের প্রত্যেকটা ব্যানারে দেখবেন মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন। আমি এখন পর্যন্ত সুবর্ণজয়ন্তীর কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পাইনি। আপনারা দেখছেন কি না জানি না। কোথাও সুবর্ণজয়ন্তীর সরকারি প্রোগ্রাম দেখতে পাইনি। আওয়ামী লীগের কোনো প্রোগ্রাম নেই। উল্টো আমরা যারা কর্মসূচি নিয়েছিলাম সেগুলো ১৭ তারিখ থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন। আসলে তাদের কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী উপস্থিত ছিলেন।
এনটি