আওয়ার ইসলাম: বাবা-মাকে চিরকুট লিখে ছাত্রাবাসে যুবকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বগুড়ার নন্দীগ্রামে পৌর শহরের রহমাননগর এলাকায় ‘মিলি’ ছাত্রাবাস থেকে সে যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। যুবকের নাম মইনুল ইসলাম। বয়স (৩২)। সে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিদহর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।
জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো রাতে নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন মইনুল ইসলাম। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি না ওঠার কারণে ছাত্রাবাসের মালিক তাকে ডাকাডাকি করেন। পরে দরজা খুলে মেঝেতেই মাইনুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। তার বিছানায় একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিশ।
চিরকুটে মইনুল ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রিয় বাবা-মা, আমি তোমাদের ছেলে মইনুল। তোমাদের ছেড়ে চলে গেলাম। এর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি আরো বলিতেছি, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা পাব, সেই টাকা যেন বড় ভাই আরিফুলকে দিয়ে দেয়। এবং ছানোয়ারের কাছ থেকে যে টাকা পাব, সেটা যেন না নেয়। তাদের দুজনকে দিয়ে দেয়। আমি তাদেরকে দিয়ে গেলাম। আমি আদিকে এক লাখ এবং সুমাইয়াকে এক লাখ। আমি আবারও বলতেছি, আমার গলায় ক্যান্সার হয়েছে। আমি কষ্ট করে মরার চেয়ে জীবন দিয়ে গেলাম। এর জন্য কেউ দায়ী নয়, তোমাদের ছোট ছেলে মইনুল।’
ঘটনা নিশ্চিত করে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়রা খবর দেওয়ার পর মঈনুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই একটি চিরকুট পাওয়া যায়।’ প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষজাতীয় কিছু খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
ইসলামে আত্মহত্যার বিধান:
পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)।
ইসলামে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। ইসলামি আইনে এটিকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর পরিণতি হিসেবে বলা হয়েছে যে পরকালে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির আত্মহত্যা করার পদ্ধতি অনুযায়ী তার যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে কেউ পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে চিরস্থায়ীভাবে পাহাড় থেকে পড়ার অনুরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে বিষপানের আজাব ভোগ করতে থাকবে। আর যে কেউ কোনো ধারালো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে তা দ্বারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস: ৫৭৭৮)।
এমনকি রাসূল সা. উম্মতের প্রতি অধিক দয়ালু হওয়া সত্ত্বেও নিজে কখনো কোনো আত্মহত্যাকারীর জানাজায় শরিক হতেন না। তাই জীবনে যতই ঝড় আসুক, তা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কাটিয়ে উঠতে হবে। আত্মহত্যার মতো ঘৃণ্য পথ বেছে নেয়া যাবে না। যারা আল্লাহর ওপর আস্থা রাখে না তারাই এ ধরনের পথ বেছে নিতে পারে। মুমিন তো সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে।
এমডব্লিউ/