আওয়ার ইসলাম: প্রথম অভিযানে মিরপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের কাছে অভিযোগ আসে, মিরপুর গাবতলী মাজার রোডের একটি বাড়িতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যাপক অপচয় করা হচ্ছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম তিতাস গ্যাসের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
দুদক টিম অভিযানকালে প্রমাণ পায়, মাজার রোডের বাড়ি নম্বর ৩২/এ/বি -তে অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দুদক টিম সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৩ টি ডাবল বার্নার চুলার সন্ধান পায়। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।
দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় টাঙ্গাইলে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী বংশাই নদীর দুইধারে গড়ে ওঠা মুরগীর খামারের বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ছে এবং এর ফলে নদীর মাছের মৃত্যু ঘটছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, টাঙ্গাইল এর একটি এনফোর্সমেন্ট টিম উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
টিম অভিযোগের সত্যতা পায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উক্ত খামারের মালিকদের এ বিষয়ে নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। টিম খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিকল্প জ্বালানি তথা বায়োগ্যাস ব্যবহারের জন্য সুপারিশ প্রদান করে।
তৃতীয় দফায় অভিযান পরিচালনা করে টাঙ্গাইলের পৌলি নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে এমন এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, টাঙ্গাইল -এর অপর একটি টিম উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে, অবৈধ ড্রেজিং -এর ফলে এবং বালুর ঘাট হতে প্রতিদিন শত শত বালুভর্তি ট্রাক যাতায়াত করায় শহর রক্ষা বাঁধটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দুদক টিমের উপস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন এ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে মর্মে দুদক টিমকে আশ্বস্ত করা হয়।
চতুর্থ দফায় অভিযান পরিচালনা করা হয় “চাঁদপুরের হরিণা ঘাট হতে চরভৈরবী কাটাখাল বাজার নদী রক্ষা বাঁধ প্রকল্প” এলাকায় বাঁধের মাত্র ১৫ গজ দূরে একটি পুকুর নির্মাণের ফলে বাঁধটি ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করেছে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুমিল্লার একটি টিম।
টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পায়, বাঁধের অত্যন্ত সন্নিকটে পুকুরটি নির্মাণ করায় বাঁধটি যেকোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। দুদক টিম এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে। প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে মর্মে দুদক টিমকে আশ্বস্ত করা হয়।
এরপর একই টিম কর্তৃক চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলায় রাস্তা ছাড়াই একটি ব্রিজ নির্মাণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। দুদকের কাছে অভিযোগ আসে যে, হাইমচর উপজেলার ৩ নং দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর খালের উপর ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দে একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে এবং এর ফলে উক্ত এলাকার জেলে নৌকার আসা-যাওয়ার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দুদক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায়, উক্ত ব্রিজের উভয় পার্শ্বেই কৃষিজমি এবং ব্রিজের কোন পাশেই সড়ক নেই। টিম এ নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্যাবলি সংগ্রহ করে কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।
এদিকে ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি নদীর পুনঃখনন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করছে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বরিশাল -এর একটি টিম। দুদকের নিকট অভিযোগ আসে, উক্ত নদীটির সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে মাটি খনন করার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে করা হয়নি। টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে খননকাজ পরিমাপ করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান যে, কাজটি এখনো অস¤পূর্ণ রয়েছে। পুরো খনন কাজ স¤পন্ন করে এ বিষয়ে দুদককে অবহিত করা হবে বলে তিনি দুদককে আশ্বস্ত করেন। স্থানীয় জনসাধারণ দুদকের এ অভিযানকে স্বাগত জানায় এবং এ অভিযানের ফলে কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সরদারটারী শান্তিমোড় গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, কুড়িগ্রামে অভিযান পরিচালনা করে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুর-এর একটি টিম। দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (হটলাইন – ১০৬) অভিযোগ আসে, “শতভাগ রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন প্রোগ্রাম ডিএনই” প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃক নতুন বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ কাজের জন্য গত ১৬ তারিখে চুক্তি সম্পাদন করা হয়, যাতে ২৪০ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার শর্ত দেয়া হয়।
তবে চুক্তি সম্পাদনের প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও অদ্যাবধি উক্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, লাইন নির্মাণের জন্য ঠিকাদার মোঃ লাল মিয়া প্রতি গ্রাহকের নিকট হতে অর্থ দাবী করছেন, এবং এ অর্থ প্রদান না করায় বিদ্যুতায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না। অথচ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের সুপারিশ করে অভিযানকারী টিম কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।
-এটি