আওয়ার ইসলাম: পাবনার বেড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলাতে যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ভাঙন চলছে ।
গত ১৫ দিনের ভাঙনে একটি মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ শতাধিক বাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি। এছাড়া ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, কবরস্থানসহ অসংখ্য বাড়ি-ঘর।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চরপেঁচাকোলা গ্রামের পূর্বপ্রান্তে বিশাল চর জেগে উঠেছে। যমুনার স্রোতের ধারা পশ্চিম প্রান্তে সরে এসে সরাসরি চরপেঁচাকোলা গ্রামে আঘাত করছে। এতে দুই কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন এলাকায় পানির গভীরতা দাঁড়িয়েছে ৪০ ফুট।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থান থেকে যমুনা নদী কোথাও ১০ ফুট কোথাওবা ১৫ ফুট দূর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই স্থাপনাগুলো যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রিতদের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বিভাগ ভাঙন এলাকায় ডাম্পিংয়ের জন্য ১৭ হাজার ৬৩৬টি জিও ব্যাগ বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া একটি মাত্র ট্রলারের সাহায্যে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, এতে শুধু টাকার অপচয় হচ্ছে, ভাঙন রোধের কোনো কাজেই আসছে না। ভাঙনরোধের নামে শুধু আইওয়াশ করা হচ্ছে। দুই কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ৮-১০টি গ্রুপে ৮০ থেকে ৯০ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে হবে। তবেই ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
বেড়া পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ভাঙনরোধ প্রকল্পের সাইড প্রকৌশলী মো. ওসমান গনি বলেন, চরপেঁচাকোলায় ভাঙনরোধ কাজে ১৭ হাজার ৬৩৬টি জিও ব্যাগ বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আরও বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যাপক ভিত্তিতে ভাঙনরোধ কাজ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ বছরে নদীভাঙনে অনেক গ্রাম, মসজিদ, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রায় ২৫ হাজার পরিবার সহায়-সম্বল হারিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। যাদের আর্থিক সামর্থ আছে তারা অন্যত্র জমি কিনে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করেছে। যাদের আর্থিক সামর্থ নেই তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।