আবদুল্লাহ তামিম: আফগানিস্তানের শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক উলামা সম্মেলন দেশটিতে সহিংসতার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে এক কথার ওপর ঐক্যবদ্ধ হয়, মুসলমানদের পরস্পরে যুদ্ধের প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে ইসলামে।
সৌদি আরবের জেদ্দায় মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ আন্তর্জাতিক উলামা কাউন্সিলে মক্কা নগরীর গভর্নর প্রিন্স খালেদ আল ফয়সাল সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আফগানিস্তান একটি ইসলামি রাষ্ট্র। দেশটি অনেক বছর যাবত সহিংসতা ও সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে একটি সুরাহা হওয়া দরকার।
আন্তর্জাতিক এ উলামা কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী শেখ আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আল আশেক, বায়তুল্লাহর ইমাম শেখ সালেহ বিন হুমাইদ ও অনেক দেশের বড় বড় আলেম, উলামা কাউন্সিলের কর্মকর্তা, সদস্যবৃন্দ, সৌদি আদালতের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টা আবদুল্লাহ আল-মুত্তালাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরব নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আফগান প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আকরাম খলওয়াকের বিশেষ দূত এ উলামা কাউন্সিল সম্পর্কে বলেছেন, এ উলামা কাউন্সিল আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা সম্মত হয়েছে, মুসলমানদের মধ্যে পরস্পর যুদ্ধ কঠোরভাবে নিষেধ।
আফগান প্রেসিডেন্টের দূত বাদশাহ সালমান ও ক্রাউনপ্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই ধরনের সভা আমাদের জন্য ও আফগান অবস্থার উন্নতির জন্য খুবই জরুরি।
আমরা মনে করি আলেমদের উদ্যোগেই এ সমস্যার সমাধান হবে। আফগানিস্তানের লাখো মানুষ বের হয়ে আসতে পারবে সহিংসতা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে।
আফগান উলামা পরিষদের একজন মুখপাত্র মুহাম্মদ কাসিম হালিমী বলেন, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত ও বড় বড় আলেম এই সম্মেলনকে সমর্থন করেছেন। তাই এ সম্মেলনের গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক বেশি।
আমি মনে করি আলেমদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আফগানিস্তানের মুসলমানদের এ সংকটময় অবস্থার পরিবর্তন আনতে অনেক সহায়তা করবে।
আমি আশাও করি তালেবানগণ আলেমদের কথা মেনে নিবেন। তিনি আরো বলেন, ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানের এ সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার সাধারণ মানুষ মারা গেছে।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী উপদেষ্টা মুহাম্মদ হিকমত বলেন, আমরা আশা করছি, আলেমদের কার্যকরি ফতোয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে সহায়ক হবে।
উলামা কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক শফিক সামি বলেন, চলমান সহিংসতা ও যুদ্ধে ১৮ হাজারেরও বেশি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে আফগানিস্তানে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি উলামাদের ঐক্য প্রচেষ্টায় তালেবানরা সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে রাজি হবে।
উলামা কাউন্সিলের উদ্বোধনী ভাষণে, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এর মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমদ আল ওসাইমিন আফগানিস্তানের সরকার ও তালেবানদের দেশটির শান্তির জন্য আলেমদের আহ্বানে সাড়া দেয়ার অনুরোধ জানায়।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আফগানিস্তানে তালেবান ও সরকারের মাঝে বিভাজনের কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধানে আমরা এখানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।
আমাদের এ সম্মেলন আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা করা।
ইসলামের নামে নির্দোষ হত্যাকাণ্ডের ফলে আজ আফগানিস্তানের এ পরিস্থিতি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ সম্মেলন আফগানিস্তানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সূচনা করতে পারে।
যুদ্ধ করে কোনো দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। তাই দেশের মানুষ আর ইসলামের বিধানের দিকে তাকিয়ে এ যুদ্ধ বন্ধ করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।
আজ এখানে যারা আছি আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্বেএ দেশকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা।
সৌদিতে আফগান বিষয়ক ওআইসির ‘ওলামা সম্মেলন’ শুরু আজ
-আরআর