আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি আলবেনিয়া ও বসনিয়ায় ২ সপ্তাহের এক দাওয়াতি সফর করেছেন বিশ্বের অন্যতম ইসলামি স্কলার, সাবেক বিচারপতি আল্লামা মুফতি মুহাম্মাদ তাকি উসমানি। ‘মুসলিম ওয়েলফেয়ার ইউকে’র ব্যবস্থাপনা তিনি এ সফর করেন।
সফরে তিনি বিভিন্ন কনফারেন্সে বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি দেশ দুটির মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যগুলো ঘুরে দেখেন। সেখানকার উলামায়ে কেরামের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সমকালিন বিষয়ে আলোচনাও হয়।
২১ জুন আলবেনিয়ার টেটওয়ার মেসিডোনিয়া মারকাজে বয়ানে আল্লামা তাকি উসমানি বলেন, ২০০৬ সালে আলবেনিয়া সফর করেছিলাম। আজ ১২ বছর পর আমি এখানকার মুসলমানদের অবস্থার মাঝে আমূল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, গুটিকতক মানুষ দ্বারাই দ্বীনের কাজ সম্পাদিত হতে পারে। হতে পারে তারচেয়ে কমেও। যদি তাদের মধ্যে উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি আর পদ্ধতি হয় সঠিক।
মুফতি তাকি উসমানি সেখানকার মুসলিমদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের প্রত্যেকটি মসজিদে তালিম ও গাশতের কাজ চালু করুন। ইনশাআল্লাহ এ কাজ সমাজে অনেক পরিবর্তন সাধিত করবে।
বেশি বেশি মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল) প্রতিষ্ঠা করুন। নতুন প্রজন্মের ঈমান ও আমলের হেফাজত করতে এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি প্রতিটি মুসলিমকে প্রতিটি মুসলিমের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতি প্রদর্শনের আহবান জানান। বলেন, আমাদের উচিত প্রত্যেক মুসলমানকে ভালোবাসা এবং সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমরা বহুদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। আমরা একজন আরেকজনের সঙ্গে বসতেও প্রস্তুত নই। আমাদের মনে এই ভুল চিন্তা জায়গা করে নিয়েছে যে, আমি যা করছি তাই একমাত্র সঠিক। অন্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব বুঝতে চেষ্টা করুন।
তিনি বলেন, এই দেশে আপনারা নিজেদের এভাবে দেখবেন না যে, তিনি সালাফি, তিনি ওয়াহাবি ইত্যাদি। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর চেয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে এমন বিষয়ের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। মনে রাখুন! সব মুসলমান ভাই ভাই। আমাদের দায়িত্ব হলো, সর্বসম্মত দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা। সবাই মিলে আমরা কাজ করব। একজন সালাফি যদি কাউকে দ্বীনমুখী করেন তবে আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাব। আমি সালাফি ভাইদেরও একই কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
https://twitter.com/Mufti_Muhammad_/status/1013174065241251840
দুই সপ্তাহের দাওয়াতি সফর শেষে ২৮ জুন শুক্রবার পাকিস্তানে ফেরেন আল্লামা তাকি উসমানি।
ফেরার আগে শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি বসনিয়ার ওলামা ও স্কলারদের উদ্দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়স্পর্শী কয়েকটি নসিহত করে যান।
তিনি বলেন, আপনারা যে কাজই করুন না কেন সর্বপ্রথম আপনাদের মাঝে ইখলাস ও নিষ্ঠা থাকতে হবে এবং সর্বক্ষেত্রে ‘রুজু ইলাল্লাহ’ বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
দেখুন! এখানে অনেক মসজিদ রয়েছে। এখন কাজ হবে এগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা। আমার পরামর্শ হলো- ১. প্রতিটি মসজিদে দৈনন্দিন একটি দরসের ব্যবস্থা করা হোক। সেটা ১৫ মিনিট বা তার চেয়ে কম সময়ের জন্য হতে পারে।
২. নিজ ঘরগুলোতেও প্রাত্যহিক তালিমের প্রথা চালু করুন। সেখানে সাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে তাদের আখলাক ও কোরবানি বা শ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করুন।
৩. সর্বদা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকবেন! বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলবেন।
পাকিস্তান গঠনের উদ্দেশ্য অর্জন হয়নি: মুফতি তাকি উসমানি
-আরআর