মুহসিনুদ্দীন তাজ
প্রদায়ক
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। প্রত্যেক মুসলমানই এ কথাকে বিশ্বাস করে।একজন সত্যিকারের মুসলমান কখনো অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না। পারে না তার চারপাশকে অপরিচ্ছন্ন রাখতে। আর শুধুমাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকলেই বাঁচা যায় হাজারো রোগব্যাধি থেকে।
কোথাও কয়েকজন মানুষ জড়ো হলে এবং কিছুক্ষণ অবস্থান করলে সেখানটা অপরিষ্কার হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হল আমরা সেটাকে পরিষ্কার না করেই চলে যাই।এভাবে ময়লা হতে হতে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে ছড়াতে থাকে রোগজীবাণু।
কিন্তু তাবলীগ জামাতের সাথী ভাইয়েরা এদিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। ৩ দিন, ৭দিন,১০, ২০, ৪০ দিন বা আরো বেশি দিনের জামাতগুলোর দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পারি একটা মসজিদে যখন উনারা উঠেন এবং তিনদিন থাকেন স্বভাবতই আশপাশ ময়লা হওয়ার কথা। কিন্তু উনারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বা সাফাইয়ের প্রতি এতটাই যত্নশীল যে ময়লা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাবলিগের দৈনন্দিন আমলের একটি সাফাই।প্রতিদিন জামাতের ২/৩ জন সাথী সাফাই কাজ করে থাকেন এবং মসজিদ ত্যাগের আগে বিশেষভাবে সাফাই করে যান সবকিছু।
বিশ্ব ইজতেমা সারাবিশ্বের তাবলিগি সাথীভাইদের বার্ষিক মিলনমেলা। লক্ষ লক্ষ মুসলিম দুইপর্বের ৩ দিন করে ৬ দিনের এ মিলনমেলায় একত্রিত হন টঙ্গীর তুরাগতীরে।
এত মানুষের রান্না, থাকা,খাওয়া,গোসল,বাথরুম সবই সম্পন্ন করতে হয় তুরাগপাড়ের এই ইজতেমায়। আগে মুসল্লিদের অনেক কষ্ট হলেও এখন কিছুটা লাঘব হয়েছে ২৮ টি তিনতলা ও ৩ টি দ্বিতল টয়লেট এবং অসংখ্য হাউজের কল্যাণে।
ইজতেমা ময়দানের রাস্তার পাশ দিয়ে, খিত্তার পাশে এবং তুরাগতীরে চলে মুসল্লিদের রান্নাবান্না। অনেকেই রান্না করেন কাঠের চুলায়। ফলে তিনদিন করে দুই পর্বের ছয়দিনে ইজতেমা ময়দান ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমনটা আদৌ নয়। যারা দেখেছেন তারাই বলতে পারবেন ইজতেমার পরিচ্ছন্নতার কথা।
ইজতেমা ময়দানের সাফাই কাজে নিয়োজিত থাকেন ৮০০ জনের বেশি। যারা সবাই গুলিস্তান গোলাপ শাহ মসজিদের তাবলিগের সাথী। ৩০ বছর ধরে ইজতেমার সাফাই কাজ করে আসছে এই মসজিদের সাথীরা।
যুবক বয়স থেকেই ইজতেমা সাফাই কাজের জিম্মাদারি পালন করছেন গোলাপ শাহ মসজিদ তাবলিগ জামাতের আমির ফকীর আতাউর রহমান (৬০)।
আওয়ার ইসলামকে তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে যখন তিনি সাফাইয়ের জিম্মাদারিতে ছিলেন তখন টয়লেট ছিলো না। ময়দানের পাশ দিয়ে কাঠের স্লিপার বসিয়ে মুসল্লিদের জন্য অস্থায়ী টয়লেট বানানো হতো। আবার ইজতেমা শেষে এগুলো পরিষ্কার করা হতো। এখন বিল্ডিং হওয়ায় দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
প্রতিদিন রাতে ১২ টায় কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে ৩০ জন করে ভাগ হয়ে সাথীরা টয়লেট সাফাইয়ে নেমে পড়েন। শুধু টয়লেট সাফাই কাজেই প্রতিদিন ৩১ টি হারপিক,৩১টি ফিনাইল, ৩১ টি ডেটল এবং ৬২ কেজি হুইল পাউডারের প্রয়োজন হয়। যার পুরোটা খরচই উনারা নিজেরা বহন করেন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
জীবন সাজানোর এক অন্যন্য অ্যাপ ইসলামী যিন্দেগী, ইনস্টল করুন এখনই
টয়লেট সাফাইয়ের পরেই চলে ইজতেমার প্রতিটি ড্রেন সাফাইয়ের কাজ। হাউজগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণভারও এই সাফাই জামাতের উপর। এরপর চলে পুরো ময়দান সাফাইয়ের কাজ। আর প্রতি পর্ব শেষে ইজতেমার ময়দান ও অন্যান্য সব বিশেষ সাফাই অভিযান চালিয়ে পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। আর সমস্ত ময়লা রাখা হয় সিটি কর্পোরেশন কতৃক নির্ধারিত দক্ষিণ তুরাগতীরে।
বিদেশী মেহমানদের নির্ধারিত যায়গায় সাফাই কাজে আছেন এই জামাতেরই ১০০ সজস্যের একটি টিম।যারা সর্বক্ষণই সাফাইকাজে ব্যস্ত থাকেন।
উল্লেখ্য, এতসব কাজ এ জামতটি করে কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ছাড়াই। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। আর ৩০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে এই কাজের জিম্মাদারি পালন করে আসছেন ফকীর আতাউর রহমান।
উদ্দেশ্য শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টি। তিনি বলে যতদিন বেঁচে আছি এ কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।
ইজতেমার উত্তর-পূূর্ব পাশে বিশাল ছাউনিতে অবস্থান করেন সাফাই জামাতের এসব নিরলস কর্মী।
নিজের ঘর, আশপাশ, রাস্তা কিংবা দেশ পরিস্কারে জন্য আমরা যদি তাবলিগের ছাফাই জামাতের শিক্ষাটা নিতে পারি তাহলে আমাদের চারপাশ থাকতো কত ঝকঝকে তকতকে। থাকবো এক অবারিত সুন্নতি মনোরম পরিবেশ। আল্লাহ আমাদের তওফিক দিন।
তাবলিগের সমস্যা সমাধানের পথ একটাই