সাখাওয়াত উল্লাহ : দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোন বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় মাত্র ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যা এটির পুরো জনসংখ্যার মাত্র ০.৪ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং বেশকিছু ধর্মান্তরিত দক্ষিণ কোরীয় বাসিন্দা।
একটি স্থানীয় ওয়েবসাইটের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় মাত্র ৮টি মসজিদ রয়েছে। অন্যদিকে খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের জন্যে এই দেশে চার্চ রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার!
উন্নত এই দেশে মুসলিমদের সংখ্যা এতো কম হওয়ার মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে ইসলামের সঙ্গে তেমন পরিচিতি না থাকা। তার সাথে আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মোট জঙ্গি সংগঠনের মত জঙ্গি কার্যক্রমের খবর শুনে অনেকের মধ্যেই ইসলাম বিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে।
২০১৬ সালে দেশটির ধার্মিক প্রকাশনী নিউজ অ্যান্ড জয়’এ জানানো হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার মুসলিম অভিবাসী বাস করে। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৫.১ কোটি।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইকসানে একটি ‘হালাল জোন’ বানানোর পরিকল্পনা করেছিল দেশটির মধ্যকার একটি মুসলিম সংগঠন। তবে তাতে ঘোর অমত প্রকাশ করে প্রকল্পটি বাতিল করে চরমপন্থী খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীরা।
ইসলাম বনাম খ্রিস্টধর্ম : বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এটি দ্রুতই বিশ্বের সকল দেশে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এবং প্রতিটি দেশেই প্রচুর মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে। তবে কেন দক্ষিণ কোরিয়ার মত বিশ্বের অন্যতম সফল এবং উন্নত দেশে ইসলাম এতো পিছিয়ে? এর মূল কারণগুলো তুলে ধরা হল-
১. কিছু দশক আগেও দক্ষিণ কোরিয়া এতোটা উন্নত ছিল না। উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার গৃহযুদ্ধে ছন্নছাড়া জীবন পার করছিল এদেশের মানুষ। তবে তখনই আবির্ভাব ঘটে কিছু প্রটেস্ট্যান্ট মিশনারির, যারা সকল মানুষকে ক্যাথলিক থেকে বদলে প্রটেস্ট্যান্ট হতে উৎসাহী করে।
এতে করে তাদের মধ্যকার চিন্তাভাবনার উন্নতি ঘটে, এবং মাত্র ১৪০ বছরে তাড়া বিশ্বের অন্যতম সফল রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। এই জন্যে এই ধর্মের প্রতি তাদের রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা এবং আত্মনিবেদন মনোভাব।
২. ইসলামকে অনেকেই ছোট করে দেখে। দক্ষিণ কোরীয় মানুষদের ধারণা, সৌদি অথবা ইরানের মত মুসলিম প্রধান দেশগুলো হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে কম স্বাধীন অথবা বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের মত কম উন্নত।
৩. দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশ কিছু ক্ষমতাশীল চরমপন্থি প্রটেস্ট্যান্ট সংগঠন রয়েছে। তাদের রয়েছে প্রচুর সম্পদ এবং মিডিয়ার ক্ষমতা। এইজন্যে মুসলিমদের আধিপত্যের লক্ষণ দেখা দিলেই তারা সঙ্গে সঙ্গে এটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়।
৪. ইসলামে এমন দুটো জিনিস নিষিদ্ধ করা হয়েছে যা এক দক্ষিণ কোরিয়ানের নিত্যদিনের খাবার- শূকরের মাংস এবং মদ। প্রতিদিন বিকেলে গ্রিল করা শূকরের মাংসের সঙ্গে মদ খাওয়া হচ্ছে দক্ষিণ কোরীয় রীতি, যা তারা বহু বছর ধরে পালন করে আসছে।
এতো কিছুর পরও এটা সত্য যে দক্ষিণ কোরিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হ্যানকক ইলবোর তথ্য অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৫৪ গুণ বেড়েছে।
১৯৬৫ সাকে যখন কোরিয়া মুসলিম ফেডারেশন স্থাপিত হয়, তখন মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৭০০। বর্তমানে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখের কাছাকাছি। তার সাথে উচ্চ অভিবাসী নীতি মেনে চলায় দেশটিতে মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে।