বশির ইবনে জাফর
শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মী
শ্রদ্ধেয় নেতৃ মহোদয়গণ!
সালাম জানবেন এই অধমের। আজ খুব ভারাক্রান্ত ও ব্যথিত হৃদয় নিয়ে কিছু কথা বলছি। শেষ অব্দি পড়ার মতো সময় যেন আপনাদের হয় এই কামনা করেই শুরু করছি। সময়ের কথাটা এজন্যই বলে নিচ্ছি যে, আপনারা নেতৃত্বের আসনে থেকে কতো কাজের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন, আমার মতো একজন কর্মীর দু’চারটি লাইন পড়ার মতো সময় না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্রিয় নেতা!
আমার বিশ্বাস, আপনারা হচ্ছেন ছাত্র রাজনীতির কর্ণধার, ছাত্রজনতার মুখপাত্র। আপনাদের সবসময় চিন্তা থাকে, কিভাবে ছাত্রদের সার্বিক কল্যাণে ভূমিকা রাখা যায়, কিভাবে ছাত্রদের উন্নতি সাধন করা যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ছাত্রদের উন্নতির দিকগুলো নিয়ে আপনারা কতোটা ভাবেন তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
হে রাজপথের সিংহপুরুষগণ!
আপনারা বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা নিয়ে রাজপথ কাঁপাতে পারেন। রুশ বিপ্লব নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করার মতো সময় বের করতে পারেন। রোহিঙ্গাদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, দিবস পালনের জন্য হাজারো সময় বের করতে পারেন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে নিজ দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় জান-মাল দিয়ে দিতে পারেন, আপনাদেও প্রশিক্ষণের জন্য অজস্র সময় ও অর্থ খরচ করতে পারেন, পারেন বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের রক্তে ক্রোধের আগুন জ্বালাতে।
কিন্তু আপনাদের একটা মিনিট সময় হয় না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররা কী ধরণের সমস্যায় পড়ে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তা নিয়ে ভাবতে! এসএসসি, এইচএসসি ফরমপূরণের নামে সরকার নির্ধারিত ফি না মেনে বিভিন্ন কলেজগুলোতে যখন চলে রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য তখন আপনাদের এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা দেখা যায় না। এ নিয়ে আপনাদের কোন কর্মসূচির দেখা মিলে না। অথচ এই বাণিজ্যের শিকার হয়ে কতো পরিবারকে যে রাতের ঘুম নষ্ট করতে হয়. সন্তানের ফরমপূরণের জন্য তা একজন অভিভাবকই জানেন।
হে ছাত্রসমাজের হিতাকাঙ্ক্ষীগণ!
দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়েই বলছি, গত কিছুদিন আগে কোন এক ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ঠিক এই বিষয়টি অবগত করেছিলাম এই আশায় যে, তারা যেন শুধু তাদের পরিচিত মিডিয়ায় আমাদের আন্দোলনের খবরটি পৌঁছাতে সহায়তা করেন।
জানতাম না, এ নিয়ে একটা বিবৃতি পর্যন্ত দেবার সময় যে আপনাদের হবে না। ভেবেছিলাম, বড় সংগঠনের অন্তত প্রচার প্রকাশনার দায়িত্বে থাকা সম্পাদক বড় মন নিয়ে মিডিয়ায় ভাইরাল করার কাজটা সম্পন্ন করে দিবেন, আমাদের পাশে দাঁড়াবেন, আমাদের কাজে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করবেন।
কিন্তু আফসোস! দু’তিনটে অনলাইন পত্রিকার খোঁজ দেয়া ছাড়া আপনাদের থেকে আর কোন সহযোগিতাই আমরা পেলাম না। সমস্যাটা কোন জায়গায় বুঝতে পারলাম না, মানসিকতার নাকি সক্ষমতার? আপনারা হয়ত বলবেন, এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
হ্যাঁ, সত্যিই যে আপনাদের ক্ষমতা নেই তা আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আমার কলেজে গত এক সপ্তাহ ধরে চলমান আন্দোলনে বাম দলগুলোর সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসাটা। প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে আমাদের মানববন্ধন থেকে ওরা খবর পায়, ফরম বাণিজ্যের শিকার আমরা।
আর এই সূত্র ধরেই, ওদের কেন্দ্রীয় সভাপতি পর্যন্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগে নেমে যায়। আমাদেরকে আপন করে ডেকে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনে এবং তাৎক্ষণিক সাংবাদিক কল করে প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে, যেন আমরা আমাদের সমস্যার কথা জাতির সামানে তুলে ধরতে পারি। এতো বড় একটি কাজ খুব সহজেই ওরা করিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, তারা ছাত্রদের সামান্যতম সমস্যা দূরকরণে কতোটা তৎপর।
শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ!
কি উত্তর দিবেন বামদলগুলোর ভূমিকা বিষয়ে। নিশ্চয় বলবেন না, তারা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এরকম ভূমিকা নিয়েছে। অথবা মিডিয়া তাদের দখলে একথার পুনরাবৃত্তি করবেন না। মিডিয়ায় আপনাদের দখল না থাকাটার দায়ও নিশ্চয় আপনাদেরই নিতে হবে।
আমাদের প্রেস কনফারেন্সের খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হলে এক নেতা জানতে চেয়েছিলো, কলেজের ছাত্র হয়ে এতো বড় জায়গায় আমরা কিভাবে প্রেস কনফারেন্স করার সাহস করি..! আমি তাকে যে উত্তরটি দিয়েছিলাম তা ছিলো নিম্মরূপ :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বসে আমরা প্রেস কনফারেন্স করার মতো শক্তি কই পেলাম জানতে চাচ্ছেন তো? তবে শুনুন। বাম দলগুলোর কোন একটি ছাত্র সংগঠন আমাদের সহায়তা করেছিলো। ওরা ছাত্রদের সামান্যতম সমস্যার কথা শুনলেও কেন্দ্রীয় সভাপতি পর্যন্ত ফোন দিয়ে খবর নেয়।
আর আপনারা ধর্মীয় দলের নেতারা ফিলিস্তিন নিয়ে বিবৃতি দেওয়া, রুশ বিপ্লব নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করে ‘আজাইরা’ সময় খরচ করে নিজেদের পাবলিসিটি কেমনে বাড়ানো যায় তা ভালোই রপ্ত করেছেন। কিন্তু ছাত্রদের কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে প্রতিবছর, কোথায় সেশনজটে ছাত্ররা ভুগছে, কোথায় ছাত্ররা দূরাবস্থায় আছে, সেই খবর আপনাদের থাকে না, সেগুলো নিয়ে কিছুটা সময় বের করতে আপনারা পারেন না। এই হচ্ছে আমাদের ইসলামিক দলগুলোর ছাত্র রাজনীতির অবস্থা।
কথাগুলো সেদিন খুব কষ্ট নিয়ে তাকে বলেছিলাম। নিজেদের অক্ষমতার দোহায় দিয়ে কি সবসময় পার পাওয়া যায়? আপনারা কি এটা নিয়ে কোন কর্মসূচির কথা কখনো ভেবেছেন? জরুরী একটা বৈঠক কি ডেকেছেন? আমার তো মনে হয় না। আপনারা সবসময় ওৎ পেতে থাকেন, যে ইস্যুতে আন্দোলন করলে সারা বিশ্বে আপনাদের নাম ছড়িয়ে যাবে সেই ইস্যুটা ছোঁ মেরে ধরার জন্য, আর যেটাতে রিস্ক বেশি, সেটা হয়ত আপনাদের এজেন্ডায় কখনো জায়গা পায় না।
আমার প্রাণপ্রিয় নেতৃবৃন্দ!
আপনাদের ঘুম কবে ভাঙ্গবে? কবে আপনারা সত্যিকারার্থেই ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে ভাববেন, ছাত্র সংগঠনের কাজ কি তা কিছুটা হলেও বামদের থেকে শেখার আছে বলে আমি মনে করি। আর আপনাদের এই অবহেলার কারণে যদি সুযোগটা বাম দলগুলো নেয় এবং শিক্ষার্থীরা যদি দলে দলে ধর্মের দিক না ভেবে মানবকল্যাণে ওদের এগিয়ে আসা দেখে অভিভূত হয়ে ওদের দলে ভীড় করে তবে আপনাদের জন্য অনুশোচনা ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না আমার মতো একজন সাধারণ কর্মীর। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
ইতি,
বশির ইবনে জাফর
শিক্ষার্থী : দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ