আব্দুল্লাহ: ভাষা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি অমোঘ নেয়ামত৷ ভাষা হচ্ছে ভাবের বাহন৷ ভাব বিনিময় করেই প্রতিটি জীব তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে থাকে৷
ব্যাকরণবিদগণের মতে, মনের ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত সাংকেতিক চিহ্ন-ই ভাষা৷ পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০০ হাজারেরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে৷ তন্মধ্যে অন্যতম হলো আরবি৷
গেল শনিবার ১৬ ডিসেম্বর ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে উগ্রবাদের প্রভাব প্রকট’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে, বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কথা বলা, পোশাক ও দিবস উদ্যাপনের মধ্যে উগ্রবাদের প্রভাব প্রকট হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক৷
“বাংলাদেশ : ফেসিং চ্যালেঞ্জস অব র্যাডিকালাইজেশন আ্যন্ড ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম” শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ” র একদল গবেষক এইসব মন্তব্য পেশ করেন৷ অধ্যাপক আমেনা মহসিন, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন যৌথভাবে গবেষণাকর্মটি সম্পন্ন করেছেন৷
প্রবন্ধ উপস্থাপন অধিবেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রওনক জাহান ও গবেষক আফসান চৌধুরী৷
প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, তারা দেখেছেন বিদায়, সম্ভাষণ ও দৈনন্দিন নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কথাবার্তায় আরবি শব্দের ব্যবহার বাড়ছে৷ নারী শিক্ষার্থীদের মাঝে হিজাব, নেকাব পরা এবং ছেলেদের মাঝে ওয়াহাবি মতাদর্শ অনুসারীদের মতো গোড়ালির উপর প্যান্ট পরার প্রবণতা বাড়ছে৷
তার মতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আরবি ভাষা চর্চা করা এবং ইসলামি মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে উগ্রবাদের সৃষ্টি হচ্ছে৷
এবার আসা যাক মূল কথায়। যদি আমরা ধরেই নেই, তিনি সঠিক বলেছেন তাহলে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিষয় তার ঘারেই আগে বার্তাবে৷
১. তিনিই উগ্রবাদের পৃষ্ঠপোষক৷ কেননা আমেনা ও মহসিন দুটি শব্দই আরবি৷
২. তার নিকটতম পূর্বপুরুষরা উগ্রবাদী ছিলেন৷ তা না হলে আরবি নাম রাখতেন না৷
৩. তার নাম পরিবর্তন করা উচিত৷ কেননা উগ্রবাদ ও উগ্রবাদের উপাদান এদেশে অবৈধ৷
৪. তিনি প্রবন্ধে হিজাব, নেকাব, ওয়াহাবি ইত্যাদি আরবি শব্দ ব্যবহার করেছেন৷
৬. বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষের নাম আরবি ভাষায়৷ তিনি তাদের প্রতি জুলুম করেছেন৷
তাছাড়া ছেলেদের গোড়ালির উপর কাপড় পরা যেমন ওয়াহাবি মতপুষ্ট উগ্রবাদ, তেমনি নারীদের জন্য গোড়ালির নিচে কাপড় পরাও ওয়াহাবি মতপুষ্ট উগ্রবাদ৷ আর তিনি গোড়ালির নিচে কাপড় পরেন সুতরাং তিনিও উগ্রবাদী৷
ইসলাম ধর্ম অনুসারে সতর ঢাকা ফরজ৷ তাই শরীর ঢাকা, হিজাব পরা, নেকাব পরা এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত৷ তিনি হিজাব, নেকাব না পরলেও শরীর ভাল করেই ঢেকে রাখেন৷ সুতরাং হিজাব ও নেকাব পরা উগ্রবাদ হলে তিনিও এর বাইরে নন৷
অন্যভাবে বলতে গেলে তিনি ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শীর্ষস্থানীয় ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিতর্কিত করেছেন৷ কেননা এগুলোতে স্বতন্ত্রভাবে আরবি বিভাগ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রয়েছে৷
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটিতেই ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রয়েছে৷ পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমান হারে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রয়েছে৷ আর এ দুটি বিভাগের প্রাণ হল আরবি ভাষা৷
এদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ দুই বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশ সেবায় ব্রতী হচ্ছে৷ তার কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ঘৃণার পাত্রে পরিণত হলো৷
শুধু কি তাই? এদেশে হাজার হাজার স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে যেগুলোতে আরবি ভাষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখানো হয়৷ আরবি ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি পুরো শিক্ষাব্যবস্থাইকেই ত্রুটিযুক্ত করেছেন৷
১৪ হাজার কওমি মাদরাসায় প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে৷ যারা কদিন আগেই সরকারি স্বীকৃতি লাভ করেছে৷ এদেশের অসংখ্য মসজিদ-মকতবে প্রতিদিন আরবি ভাষার চর্চা করা হয়৷ সেগুলোও তার বক্র মানসিকতা থেকে রক্ষা পায়নি৷
আরবি ভাষা এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ভক্তির জায়গা৷ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শতভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত ভাষা৷ পরিবার, সমাজ, শিক্ষাঙ্গন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচারালয়সহ সর্বক্ষেত্রে মৌলিক পরিভাষা হিসেবে আরবি শব্দের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো৷
২২ টি দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা এই আরবি ভাষা৷ বিশ্বের প্রায় ২শ কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন আরবি ভাষা৷ বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম মাধ্যম আরবি ভাষা৷ আপনার আধোয়া কথার মাধ্যমে আপনি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে হেয় করেছেন।
বিশ্ব মুসলিমের প্রাণকেন্দ্র, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎসমূল কুরআন-হাদিসকে অপমান করেছেন, হিজাব, নেকাব নিয়ে কথা বলে ইসলামকে অপমান করেছেন৷ আমরা আপনাদের ধিক্কার জানাই৷ তাই আমরা আপনার প্রতি ৩ দফা দাবি পেশ করছি :
( ক) গবেষণা প্রবন্ধ থেকে এই বক্তব্যটি প্রত্যাহার করুন৷ (খ) সকল সংবাদপত্র থেকে সংবাদটি মুছে ফেলার হুকুম জারি করুন৷ (গ) জাতির কাছে ক্ষমা চান এবং ভাষাজ্ঞান লাভ করুন৷
অন্যথায় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণ আপনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলবে।
ভাষা কখনো উগ্রবাদের কারণ হতে পারে না৷ জাতিসংঘের ৬ টি দাফতরিক ভাষার অন্যতম একটি ভাষা হলো আরবি৷ সুতরাং এই ভাষা কোন অপরাধ করেনি বরং আপনাদের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন অধ্যাপকদের কর্মকাণ্ডেই উগ্রবাদ ছড়ায়৷ তাই এইসব অর্থহীন প্রলেপ প্রত্যাহার করুন৷ সঠিক পথে হাঁটুন৷ দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হোন৷
আব্দুল্লাহ
এম. এ. আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়