১৯৮৩ সাল থেকে এফডিসির মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ জাকির হোসেন। শুরু থেকেই মাস্টাররোলে ‘ডেইলি পেমেন্টে’ চাকরি করছেন তিনি। অস্থায়ী এই ব্যবস্থায় হাজিরা অনুযায়ী টাকা পান তিনি। এত দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো স্থায়ী কোনো কিছু না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন জাকির হোসেন। ৫৬ বছরের জাকির হোসেন আফসোস করেন, এখন আর কবে স্থায়ী চাকরি হবে, আর তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারেরই বা কী হবে।
জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা যে টাকা পাই, সেই টাকায় সংসার চলে না। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে, যারা পড়াশোনা করছে। তাদের পড়াশোনার জন্য প্রতি মাসে খরচ দিতে হয় নয় হাজার টাকা। বাড়িতে খাওয়ার খরচ পাঠাতে হয়, এফডিসিতে আমার খাওয়া খরচ আছে। মাস শেষ কিছু ধারদেনা হয়, কীভাবে ধার পরিশোধ করব, তা জানি না। মরতেও ভয় করে, কারণ মরার পর আমার লাশ নেওয়ার জন্যও এফডিসিতে সবার কাছে ভিক্ষা করতে হবে, বাড়িতে লাশ নেওয়ার জন্য। আমি মারা যাওয়ার পর বাড়িতে কীভাবে পরিবার চলবে, বলতে পারছি না।’
নিজের কর্মজীবন ও বেতন প্রসঙ্গে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি ১৯৮৩ সালে এফডিসিতে চাকরি শুরু করি। তখন পেতাম রোজ ২৫ টাকা। তারপর টাকার অঙ্ক কিছুটা বাড়ে। গত তিন মাস আগেও পেতাম প্রতিদিন আড়াইশ টাকা। সরকারিভাবে সবার বেতন দ্বিগুণ হওয়ার পর থেকে তিন মাস ধরে পাচ্ছি ৫০০ টাকা রোজ। এত বছর চাকরি করার পর এখনো রোজ কামলা হিসেবে কাজ করছি, এটা কষ্ট দেয়।’
মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও পিয়ন হিসেবে চাকরি হলে স্থায়ী কিছু একটা হয়। তাই এখন পিয়নের চাকরিটা পেলে ভালো হয় বলে জানান জাকির। বলেন, ‘২০০০ সালের দিকে এফডিসির এমডি হিসেবে কাজ করেছেন ডি ম বেপারী। তিনি আমাদের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। এখানে মসজিদের লোকেদের জন্য কোনো চাকরি নেই। তাই পিয়ন হিসেবে যেন নিয়োগ পাই, সেই চেষ্টাই করেছিলেন এমডি। তিনি চলে যাওয়ার পর সেই চেষ্টাও বন্ধ হয়ে যায়। এখন এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে কোনো কর্মকর্তা শুনতে চান না। আমার একটাই চাওয়া, একটা পার্মানেন্ট চাকরি।’
বিষয়টি নিয়ে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন বলেন, ‘আমি আসলে বিষয়টি আগে জানতাম না। আমি খবর নিয়ে দেখছি, কোন ক্যাটাগরিতে হুজুরদের চাকরির চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি বিষয়টা দেখব। তবে আমাদের এফডিসিতে হুজুরদের জন্য কোনো চাকরির সুবিধা নেই, তা না হলে আগেই চাকরি পার্মানেন্ট হয়ে যেত।’
দীর্ঘদিন ধরে এফডিসিতে কাজ করা জাকির হোসেনও চান স্থায়ী একটি চাকরি হোক তাঁর, যেন মৃত্যুর পর সন্তানদের কিছুটা অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থাকে। সূত্র : এনটিভি