বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


জিন-ভূত, আচরণে অদ্ভূত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
অতিথি লেখক

কুমিল্লার একটি বিখ্যাত জায়গা কোটবাড়ী। নানা কারণে দেশের মানুষেরা যেমন চিনে তেমনি এখানে বারড -Bangladesh Academy for Rural Development bard থাকায় আন্তর্জাতিক পরিচিতিও আছে। বিশ্বে সমবায়ের পথিকৃত, বাংলাদেশে সমবায়ের জনক মরহুম আখতার হামিদ খানের হাতে গড়া কুমিল্লার কোটবাড়ী একাডেমী।

সবুজ-শ্যামল গাছ-গাছালিতে ভরা এক স্বর্গীয় পরিবেশ। সন্ধ্যা নেমে এলেই মনে হয় যেনো এক ভূতূরে পরিবেশ নেমে আসে। একা হাঁটলে মনে হয় গহীন বন জঙ্গল দিয়ে হাঁটছি। বন ঘেরা একাডেমির দক্ষিণে শালবনবিহার, শতবছরের পুরনো রাজার বাড়ি, বৌদ্ধ বিহার, লাললমাই পাহাড়, একাডেমির পূর্বে কুমিল্লা পলিটেকনিক ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, একাডেমির উত্তরে ময়নামতি ক্যন্টনম্যান্ট।

সন্ধ্যার পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য -মণ্ডিত কোটবাড়ীতে ঢুকলে, সেনানিবাস পার হওয়ার পর বৌদ্ধ বিহার পর্যন্ত একা হেঁটে গেলে আপনি নীরবে চলে যাবেন এটা একটু কঠিন। ৫০ ফুট গাছের উপর থেকে জিন-ভূত এর হাতছানি পড়ছে না মনের ভয়ে গা ছিম ছিম করছে তা গবেষণার বিষয়।

ওখানে ছাত্রদের অনেক মেস আছে। মেসে জিন চালান দেবার জন্য হুজুর আসতেন। রীতিমত জিন দেখার কৌতূহল নিয়ে ছাত্ররা বসে পড়ত। যদিও ছাত্রদের আশা পূরণ হত না।

বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় হাজার হাজার নর-নারী উধাওয়ের ঘটনা ঘটেছে এখানে। জনবহুল রাস্তা বা খোলা মেঠো পথ থেকে একজন বা একাধিক ব্যক্তি জনমের তরে উধাও হওয়ার বহু রেকর্ড আছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ম হামিদ এ নিয়ে একটি বিশাল বইও লিখেছেন।

দুটি সত্য ঘটনা বলি- কুমিল্লার ধামতি আলীয়া মাদরাসার প্রায় ৪০ বছরের ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা ছফিউল্লাহ হুজুরের একমাত্র সন্তান জাফর সাদেক শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে মালয়শিয়া পড়তে যান। বছর তিনেক পর তিনি হারিয়ে যান। বহু খোঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। ছফিউল্লাহ হুজুর পুত্রশোকে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।

হুজুর জিন চালান দিতে পারতেন। আমি তাকে একদিন জাফরকে খোঁজে বের করার জন্য জিন চালান দিতে বলি। তিনি আমাকে জানালেন, বহুবার জিন চালান দিয়েছেন। কিন্তু জিনেরা মালয়শিয়ার টেরিটোরিতে প্রবেশ করতে পারছে না।

আমি শুনে অবাক হলাম। আজ প্রায় ৩৫ বছর হলো জাফর সাদেক নিরুদ্দেশ।

শান্ত নামের আমার এক মামাত শালা, বাসা ঢাকার মোহাম্মদপুরে। ২০ বছর আগের কথা। একদিন বাসার সামনে থেকেই হারিয়ে যায়। বহু মাইকিং খোঁজাখোঁজি হয়েছে। পত্রপত্রিকায় দেয়া হয়েছে। লাভ হয় নি।
প্রত্যেকটি মানুষকে জিজ্ঞেস করলে এরকম ২/১ টি রহস্যের কথা জানা যাবে।

মিশরের গির্জা বা পিরামিড দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ৩ টি গির্জার উচ্চতা ৩ রকম। বড়টি ৩০০ ফুটের উপর। এক একটি পাথরের ওজন ২৫-৩০ মন। আজ থেকে ৪০০০ বছর আগে তো ক্রেন ছিল না, তাহলে এ পাথরগুলো কে উঠাল।

গবেষকরা বলছেন, এ কাজ মানুষেরা করেনি। কোন হিসেব মিলছে না। ভিন্ন গ্রহের প্রাণীরাই করেছে বলে বেশিরভাগ গবেষকের মত। ফসলের মাঠ কিংবা মরুভূমির বুকে বিশাল আলপনা কে এঁকেছে তা মানুষকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে। কোন রহস্যেরই জট খোলা যায়নি।

দিন বিশেক আগে আমার একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলে লেখার ইতি টানব। কুমিল্লার চান্দিনার গভীরে এক গ্রামে গিয়ে কোন কারণে জরুরিভাবে রাতেই ঢাকা ফিরতে হচ্ছিল। রাত দুটোর দিকে খোশবাশ পার হচ্ছিলাম, ঘুটঘুটে অন্ধকার, পাশে বিশাল কবরস্থান।

হঠাৎ গাড়ির পেছনে আমার পাশে বসে থাকা ছোট বোন তাহমিনা তাহসিন তানজিনা চিৎকার শুরু করে। তার হাত আটকে আছে গাড়ির জানালায়। হাতটি টেনে আনা যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টায় হাতটি জানালা থেকে টেনে আনা হয়।

ড্রাইভারসহ আমরা সবাই তাকে অভয় দিয়ে বললাম, ও কিছু না, এগুলো তোমার মনের ভয়। কিন্তু এক ঘন্টা পর্যন্ত সে কথা বলতে পারছিল না। স্বাভাবিক হওয়ার পর সে জানাল, তার হাতটি কে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।ড্রাইভার জানাল গাড়িও চলতে চাচ্ছিল না, হেড লাইট কমে আসছিল। এ ঘটনার কোন উত্তর আমার জানা নেই।

এ আচরণগুলো কারা করে, কেন করে, এতসব অদ্ভূত আচরণ কি জিন-ভূতের? তারা কি বিশাল কোন দায়িত্ব পালন করে? কোন কিছু কি তারা পাহাড়া দেয়? তাদের কি কোন নিরাপত্তার দায়িত্ব আছে? মহান আল্লাহ পাক কোন কিছুই বিনা কারণে সৃষ্টি করেন নি। একটি ক্ষুদ্র পোকারও অনেক কাজ।

অতএব জিন আছে, তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ আছে। কোন না কোন দায়িত্ব তারা পালন করে যাচ্ছে। পবিত্র কুরানের সুরা আর রাহমানের ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহপাক জিনদের তৈরি করেছেন আগুন থেকে।

আল কুরানের ৭২ নং সুরা জিন। প্রথম ১৫ টি আয়াতে জিনদের কৃতকর্মের কথা বলা হয়েছে। তারা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর তেলাওয়াত শুনেছে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে বিষ্ময়কর কুরান নিয়ে এবং তওহিদ ও একত্তবাদ নিয়ে।

সুতরাং জিনদের অস্বীকার বা অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের স্বীকার করে নিয়ে চলতে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

চা দোকানের আড্ডায় ‘গীবত’ চিনির চেয়েও মিষ্টি


সম্পর্কিত খবর