মাওলানা মিরাজ রহমান
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বলেছেন, ‘অবরোধ আরোপ করাতে কাতার এখন স্বনির্ভর হওয়া ও অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়ার নেপথ্যে যত সমস্যা ও সম্ভাবনা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছে এবং সব সমস্যাগুলোর সমাধানকল্পে কাজ করছে। ফলে আমি বলব, অবরোধ আমাদের জন্য ক্ষতির চেয়ে উপকার বেশি বয়ে এনেছে।’
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় কাতারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি এ সব কথা বলেন। গত ৫ জুন অবরোধ-সঙ্কট শুরু হবার পর এই প্রথম তিনি ভাষণ প্রদান করেন। সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশর।
টিভি চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে আমির শেখ তামিম দেশটির বিরুদ্ধে প্রদান করা অপবাদের নিন্দা জানান এবং দেশটিতে অবস্থান করা জনগণের প্রশংসা ব্যক্ত করেন।
আমির শেখ তামিম আরও বলেছেন, ‘সৌদি জোটের এই অবরোধ কাতারের জন্য অনেক বড় সুযোগ বয়ে এনেছে। অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশের জনগণ ও সর্বস্তরের মাঝে বিদ্যমান ঐক্য আরও সুদৃঢ় হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলমান অবরোধ-সঙ্কট নিরসনে সব ধরনের আলোচনার জন্য কাতার সবসময় প্রস্তুত। তবে এর জন্য আমাদের দুটি শর্ত রয়েছে। এক. সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। দুই. আলাপ-আলোচনায় কোনো দেশ কারো ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না।’
প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে কাতারের নাগরিকদের তাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আমির শেখ তামিম বলেছেন, ‘আমরা খুব মর্মাহত হয়েছি- প্রতিবেশী দেশগুলো কীভাবে আমাদের নাগরিকদের তাড়িয়ে দিল? আমরা তো এমনটা করিনি। কাতার সম্পর্কে অব্যাহত মিথ্যাচার দেখে আমরা আরও মর্মাহত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সবার কাছে বিষয়টি এখন পরিস্কার যে, এটা একটি পূর্বপরিকল্পিত সিন্ধান্ত। বিশ্ববাসী এত সহজে কোনো অন্যায় মেনে নেবেন না- এটা আমরা বিশ্বাস করি। এ ছাড়া মানুষ এখন অনেক সচেতন। বিভ্রান্তিকর মিথ্যা মানুষ কখনোই গ্রহণ করবে না।’
জঙ্গিবাদ দমন প্রসঙ্গে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বলেছেন, ‘এককভাবে কাতার সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এই ভূমিকা পালনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশ্বের স্বীকৃতি অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছে কাতার। তবে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে কাতার কখনো প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যকে খুশি করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়নি। কাতার মনে করে জঙ্গিবাদ মানেই সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায়। আর এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম কখনো জঙ্গিবাদের উৎস হতে পারে না।’
অবরোধ-সঙ্কট বিষয়ে সর্বশেষ তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে অবরোধকারী দেশগুলোই ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করি।’
কাতারের আমির শেখ তামিম বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কাতারের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করা হবে, আলোচনার মাধ্যমে যেকেনো সমস্যার সমাধান করতে আমরা আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘সরকারের রাজনৈতিক মতপার্থক্যের দ্বন্দ্ব থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্ত করার এখনই সময়।’ এইসব নিন্দনীয় রীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এর ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
অবরোধকারী দেশগুলো প্রসঙ্গে আমির শেখ তামিম বলেছেন, ‘তারা ভেবেছিল, পৃথিবীতে শুধু তারাই বসবাস করে। তারা আরও ভেবেছিল যে, অর্থ দিয়ে সবকিছু কিনে নেওয়া যায়। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। অনেক দরিদ্র এবং অনুন্নত দেশেরও নিজস্ব মতামত থাকতে পারে, এটা তারা ভুলে গিয়েছে।’
চলমান অবরোধ-সঙ্কট সমাধানে কুয়েতের মধ্যস্থতার প্রশংসা করেন শেখ তামিম। তিনি বলেছেন, ‘এই উদ্যোগ সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করি।’ এ ছাড়া তুরস্কসহ যেসব দেশ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।
সূত্র: আল জাজিরা ও দোহা নিউজ। প্রিয় ডটকম