নোমান মাহফুজ
আহ! প্রচণ্ড ভারাক্রান্ত হৃদয় মন। দেশে চলছে বানভাসীদের হাহাকার। সহায় সম্বল যাদের আছে তারা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও সম্বলহীনরা চরম সময় পার করছেন। দেশের অনেক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে।
খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে চরম কষ্টে দিন কাটছে বন্যাকবলিত লাখ লাখ মানুষের। অনেকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারিভাবে যেসব এলাকায় ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আবার অনেক স্থানে ত্রাণ সামগ্রী লুটপাট কিংবা আত্মসাতের খবে পাওয়া যায়। পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে সতর্কবার্তা আসছে প্রতিদিন।
বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে মানুষের হাত নেই। তা সত্ত্বেও মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা দেখে নিজেকে স্থির রাখা কঠিন। জাতীয় দৈনিকের প্রতিদিনের হেডলাইন দেখে মন আরো বিষণ্ন হয়ে ওঠে। একটি সংস্থা বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছে। আর হতভাগা বন্যার্তরা এক প্যাকেট খাবারের আশায় পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে চলে আসছে ত্রাণের নৌকার কাছে। পানিতে ভেসে থাকা মানুষের হাতে এক প্যাকেট খাবারের ছবিটি কেন জানি আমার হূদয়ে বার বার ভেসে ওঠছে।
ত্রাণ বিতরণ চলছে পুরোদমে। তবে কুমন্ত্রণায় পড়ে কি করছি আমরা? যখন ত্রাণ নিয়ে বানভাসীদের নিকট আমরা যাই তখন মনে সর্ব প্রথম এই কুমন্ত্রণা আসে-‘কী জনাব? ত্রাণ দিচ্ছো? ক'টা ছবি তুলে নাও না। ফেসবুকে দেওয়া যাবে। মানুষ তোমাকে দানবীর ভাববে।’ ব্যস! কুমন্ত্রের জয় হয়। বাস্তবে সুমন্ত্রের জয় নেই! এরপর নেতার তা ফেসবুকে ছেড়ে মানবতার দৃষ্টান্ত দেখাতে উঠে পড়ে লেগে যান। অথচ তাদের পকেট যে ফাঁকা রাখেন মানবতায় তা কিন্তু না! একটু হলেও ভরে!
আমাদের দেশের সমাজসেবী ও রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা তো ত্রাণ বিতরণ করতে ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের সাথে করে নিয়ে যান। ভাবখানা এই এত টাকা খরচ করবেন অথচ নিজের নাম না ফুটালে চলে? তাছাড়া সামনে যখন নির্বাচন আছে, তখন তো কোনো কথাই নেই।
বস্তুত আমরা যখন কোনো সঠিক কাজ করতে যাই, মানুষের পাশে দাঁড়াবো ভাবি, তখনই শয়তান এসে আমাদের নানা কুমন্ত্রণা দিয়ে ওই কাজের সওয়াব থেকে আমাদের বঞ্চিত করে। দানের ক্ষেত্রে কেনো প্রকার সুবিধা আশা করা যায় না। এতে সঠিক নিয়ত থাকা চাই। অতএব, ত্রাণ-বিতরণের মতো মহত কাজগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।
ত্রাণ নিয়ে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলেও চলছে কামড়া কামড়ির রাজনীতি। যখনি কোন ত্রাণ ইস্যু আসে তখনই পত্রিকা মারফতে দেখা মিলে কামড়া-কামড়ির দৃশ্য! উদাহারণ স্বরুপ দুটি দলের কামড়াকামড়ির নমুনা এখানে দেই। যেমনটা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
"দেশের বন্যা কবলিত এলাকার দুর্গত মানুষদের ত্রাণ না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিজেরা লুটপাট করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। স্থানীয় প্রশাসন যৎসামান্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গেলেও তা নেতা-কর্মীরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ত্রাণের দেখা পাচ্ছে না বানভাসী মানুষ। অভিযোগ করে আরো বলছে, ‘‘বন্যা কবলিত মানুষের দুঃখ-দুদর্শার চিত্র গণমাধ্যমে ফুটে উঠলেও দুর্গতদের পাশে নেই সরকার। মন্ত্রী ও এমপিরা ঢাকায় বসে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছে।জনগনের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তারা দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করছে না।”
দুর্যোগের সময় বিএনপির নেতারা ত্রাণ না দিয়ে ঢাকায় বসে ফাঁকা আওয়াজ দেয় বলে মন্তব্য আ.লীগ ও সরকারের মন্ত্রী এমপিদের। তাদের দাবি, দেশের যে কোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগই জনগণের পাশে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।"
এ যদি হয় ত্রাণ নিয়ে রাজনীতির চিত্র তবে দেশের মানুষ কি করবে? আর এটা প্রতিনিয়ত দেখেই যাচ্ছে দেশ জনতা। আর সেলফি দানবীর সাজতে ফটো আপলোডিংয়ে যেন একেকজন দেশ সেরা ফটোগ্রাফার। কী বিকৃত মানসিকতার মানব সম্প্রদায় আমরা। বানভাসীদের সাথে আমাদের রুচিহীন রাজনীতি কেমন ঘৃণ্য। যদি বুঝতো এসব নেতা নেত্রীরা।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০ মুসলিম ব্যক্তিত্ব; জরিপ
-এজেড