আওয়ার ইসলাম : নির্বাচনকালে একটি সহায়ক সরকার থাকতে হবে। যে সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করবে। আর নির্বাচনের আগেই সব রাজনৈতিক দলকে তাদের অধিকার দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিতে হবে।
আজ বুধবার দুপুরে খুলনা একটি অভিজাত হোটেলে খুলনা জেলা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভালো কথা শুনে না। তাদের একটাই উদ্দেশ্য, জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। আর তাই আরেকটি সাজানো নির্বাচনের পাঁয়তারা তারা করছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে এই সরকার অনেক বড় বড় কথা বলে, বলছে প্রবৃদ্ধি এত বেশি হচ্ছে যে বাংলাদেশ নাকি দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। রোল মডেল কিসের? মানুষের স্বাধীনতা, অধিকার কেড়ে নিয়ে বিনা ভোটে বন্দুকের জোরে কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়, তার রোলর মডেল এই সরকার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতামাত্র। পরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে কীভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়, তার পথ তাঁরা বের করবেন। তবে তিনি তা বেমালুম ভুলে গিয়ে এখন বলছেন সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে, সেভাবেই নির্বাচন হবে। কিন্তু এই পার্লামেন্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই পার্লামেন্টে বিনা ভোটের ১৫৩ জন এমপি আছেন, শতকরা ৫ ভাগ মানুষও তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। সুতরাং সেই পার্লামেন্টে আনা সংশোধনী জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, সব রাজনৈতিক দল আজ বলছে, নির্বাচনকালে যদি একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, তবে সেই নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হবে না। বিশেষ করে তা যদি হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে।’
নির্বাচন কমিশন জনগণ ও বিএনপির আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথম দিকে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন। সারা পৃথিবীতে অগ্রহণযোগ্য ইভিএম মেশিন ব্যবহার করবেন না বলে তিনি জানিয়েছিলেন। অথচ সবকিছুকে পাল্টে দিয়ে রোডম্যাপ দেওয়ার সময় তিনি বললেন, ইভিএমের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন জনগণ ও বিএনপির আস্থা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ।’
বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব—প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এটা বলে সিইসি জনগণকে আরও হতাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিফলন। তিনি এ কথাও বললেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমাজ সুযোগ) তৈরি করাও তাদের কাজ না। তাহলে কীভাবে আমরা এই কমিশনের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারব।’
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে সংকট, তা রাজনৈতিক সংকট আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকের সংকটটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সংকট। এটাকে রাজনৈতিকভাবেই দেখতে হবে। এই সংকট সমাধান করার জন্য সব রাজনৈতিক দল বসে আলাপ-আলোচনা করতে হবে, প্রয়োজনে সংবিধানও সংশোধন করতে হবে। যাতে করে জাতি সত্যিকার অর্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পায়।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ বিএনপি ও খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দলকে সংগঠিত করতে হবে। আগামী নির্বাচন যাতে সহায়ক সরকারের অধীনে হয়, সে জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বাধ্য করতে হবে। এমন দেশ আমরা তৈরি করেছি, যে দেশে সভা করার অধিকারও নেই। আমাদের ৫০০ ওপর নেতা-কর্মী গুম হয়েছে। হাজারের ওপর নেতা-কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের নামে অসংখ্য মামলা। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলবে। ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে তাঁরা পিছপা হয় না।
ফরহাদ মজহারের প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাঁর মতো মানুষকে অপহরণ করে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে এখন বিভিন্ন মামলা সাজানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে তাঁকে বেকায়দায় ফেলার জন্য।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুকে কারা হত্যা করেছে, তা আমরা জানি না। সরকার মিঠুর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে পারছে না। বিচারের আওতায় আনতে পারছে না। বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার থেকেও মানুষ বঞ্চিত।’
জেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খানসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
-এজেড