বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


৫ জানুয়ারিকে ঘিরে ছক কষছে বিএনপি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ উপায়ে সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে আন্দোলনের পথ বেছে নেবে দলটি। এক তরফা নির্বাচনের দিন ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে দুই দফা আন্দোলন ব্যর্থ হলেও আবারো একই দিনকে কেন্দ্র করে পরবর্তী কঠোর আন্দোলনের ছক সাজাচ্ছে বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি বিগত আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারে প্রথমেই অলআউট আন্দোলনে না গিয়ে ধীরে ধীরে আন্দোলনকে বেগবান করতে চায় দলটি। এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন মাধ্যম চলতি মাস থেকেই কঠোর আন্দোলনে নামার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ওই মাধ্যমগুলোর পরামর্শ ছিল, সহায়ক সরকারের দাবিতে জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু হোক। তবে খালেদা জিয়া এতে রাজি হননি। কারণ, ২০১৫ সালের মতো আন্দোলন ব্যর্থ হলে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হবে; যার পরিণতি ভোগ করতে হবে অনেক বছর ধরে।

বিএনপি সূত্রমতে, চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করতে এখন থেকে শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হবে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল করা হবে সারাদেশে। এ ছাড়া আন্দোলনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে দল গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে চায় বিএনপি। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসেম্বর মধ্যে আন্দোলনের জন্য দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে চায় তারা। এর মধ্যে চলতি মাসেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে ফিরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি ফর্মুলা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন। এরপর বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করতে পারেন তিনি। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপেও যোগ দিবে বিএনপি। সংলাপে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজনীতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবে তারা। মূলত দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে সহায়ক সরকারের পক্ষে জনমত নিজেদের অনুকূলে নেয়ার চেষ্টা করবে বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, আন্দোলন করে দাবি আদায়ের বিষয়টি এখনো জোর দিয়ে ভাবছেন না তারা। কারণ, তাদের কাছে তথ্য আছে, নির্বাচন করতে হলে যেসব উইং সরকারকে ব্যবহার করতে হয়, তারা সবাই সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। পশ্চিমা দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দাতা সংস্থা এমনকি জাতিসংঘও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই এবার সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানে ক্ষমতাসীনরা বাধ্য হতে পারে। এরপরেও যদি ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী করতে সরকার আগের পথ বেছে নেয় সেক্ষেত্রে আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না। তাই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি।
দলের মধ্য সারির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের সহায়ক সরকারের ফর্মুলায় সুষ্ঠু নির্বাচনের সব ধরনের পথ খোলা থাকবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার যেসব খোঁড়া যুক্তি ক্ষমতাসীনরা দিচ্ছে তা সমাধানের বিষয়টিও থাকবে সহায়ক সরকারের ফর্মুলায়। এ ছাড়া নির্বাচনের কমিশনের সংলাপের জানানো হবে কিভাবে তারা সবার অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে পারে। পাশাপাশি নির্বাচন করতে হলে যেসব উইং ব্যবহারিত হয় প্রতিটি পর্যায়েও সুষ্ঠু নির্বাচনেও জন্য বিএনপির ফর্মুলা জানানো হবে। অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব ধরনের চেষ্টা করবে বিএনপি। তাতে কাজ না হলেই আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবে।
এ বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাতে মানুষ ফুঁসে উঠেছে। কিন্তু বিএনপি বারবার সরকারকে সময় দিচ্ছে, যাতে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়। কিন্তু ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে মরণপণ আন্দোলনে নামতে হবে।
প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধে ২০১৩ সালের শেষ দিকে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। হরতালের পাশাপাশি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিও ঘোষণা করে দলটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও বেশ কিছু দিন আন্দোলন অব্যাহত রাখে দলটি। পরে আন্দোলন থেকে সরে এলেও নির্বাচনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আবারো কর্মসূচিতে যায় তারা। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সভা করতে না দেয়ায় ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আবারো অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা। ফলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপি। এরপর থেকে আর কোনো আন্দোলনে যেতে পারেনি দলটি।
-এজেড


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ