আওয়ার ইসলাম : আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নাকি বিক্রি হচ্ছে 'প্লাস্টিকের চাল'। এই চাল দেখতে সাধারণ চালের মতোই। কিন্তু দলা পাকিয়ে এই চালের ভাত দিয়ে যখন বল তৈরি করা হয়, সেটি নাকি প্লাস্টিক বা স্পঞ্জের বলের মতো লাফায়। এরকম গুজব এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ইউটিউবে এই প্লাস্টিকের চালের কিছু ভিডিও তো রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে।
সেনেগাল, গাম্বিয়া আর ঘানায় এই গুজব মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাধ্য হয়ে ঘানার 'ফুড এন্ড ড্রাগ অথরিটি' একটি তদন্ত চালায়।
তারা লোকজনকে প্লাস্টিকের চাল বলে সন্দেহ করছে এমন চালের নমুনা পেশ করতে বলে। তদন্ত শেষে তারা কি দেখলো?
ঘানার ফুড এন্ড ড্রাগ অথরিটি বলছে, প্লাস্টিকের চাল বিক্রি হচ্ছে এমন কোন প্রমাণ তারা এই পর্যন্ত পায়নি।
এই গুজবের উৎস তাহলে কি?
বলা হচ্ছে ২০১০ সালে চীনে এই গুজবের সূত্রপাত। সেখানে গুজব ছড়ায় যে প্লাস্টিকের চাল তৈরি হচ্ছে এবং তা সাধারণ চালের মধ্যে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্লাস্টিকের চাল বলে একটি জিনিস আসলে তৈরি করা হয়। এটি ব্যবহৃত হয় বাক্সে ভরে জিনিসপত্র যখন ডাকে বা কুরিয়ারে পাঠানো হয়, তার ভেতরে জিনিসটি সুরক্ষিত রাখার জন্য। এর সঙ্গে চালের কোন সম্পর্ক নেই। আর এই প্লাস্টিকের চাল তৈরির খরচ সত্যিকারের চালের উৎপাদন খরচের তুলনায় বহুগুণ বেশি।
তবে আফ্রিকায় এই গুজব বেশি ছড়ানোর পেছনে ভূমিকা রাখে ২০১৬ সালের এক ঘটনা।
নাইজেরিয়ার কাস্টম কর্তৃপক্ষ আড়াই টন চাল আটক করে এবং শুরুতে দাবি করে যে এসব আসলে প্লাস্টিকের চাল। কিন্তু পরে তারা সেই দাবি যে ভুল ছিল তা স্বীকার করে। নাইেজরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্লাস্টিকের চালের কোন প্রমাণ তারা পাননি।
কিন্তু গুজব ছড়াতে যারা উন্মুখ, তারা ততদিনে যা করার করে ফেলেছে।
ইউটিউবে কথিত প্লাস্টিকের চালের বল নিয়ে লোকে খেলছে সেরকম ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে। এমনটি কারখানায় প্লাস্টিকের চাল তৈরি হচ্ছে সেরকম ভিডিও পর্যন্ত ছাড়া হয়।
'ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর' চ্যানেলের একজন সাংবাদিক আলেক্সান্দ্রে ক্যাপরন এই প্লাস্টিকের চালের মিথ্যে গল্পের পেছনের কাহিনি অনুসন্ধান করেছেন।
তিনি বলছেন, আমদানি করা চাল যাতে লোকে না কেনে, এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল কেনে, সেটা এই গুজব ছড়ানোর পেছনে একটি কারণ।
তবে আফ্রিকার কোন কোন দেশে এই গুজব এতটাই ব্যাপক প্রচার পেয়েছে যে সরকারগুলো কথিত প্লাস্টিকের চাল বলে যে কিছু নেই, সেই ঘোষণা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
-এজেড