শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মোসাদ্দেকের চুলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

chulaশাহ আলম শাহী: উদ্ভিদ নিধন ও পরিবেশ দূষণ কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় এবং অল্প সময়ে স্বল্প খরচে রান্নার চুলা উদ্ভাবন করেছেন দিনাজপুরের মোসাদ্দেক। এ চুলার বহুবিধ সুবিধা থাকায় একে আদর্শ চুলাও বলা হচ্ছে।এ চুলায় লাকড়ি, কয়লা বা গ্যাসসহ সবধরনের জ্বালানি ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়াও সোলার সিস্টেম, মিউজিক প্লেয়ার, গরমে বাতাস পেতে পাখা, রিমোট কন্ট্রোল সংযোগের ব্যবস্থা থাকছে।

দিনাজপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোসাদ্দেক হোসেন উদ্ভাবিত বিশেষ ধরনের রান্নার চুলা জাতীয় পর্যায়ে ইতিমধ্যে পুরস্কৃত হয়েছে। বেশ সাড়া পড়েছে এ চুলা নিয়ে।

মোসাদ্দেক জানান, চুলায় শুধু রান্না করার জন্য হলে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকার জ্বালানি খরচে পাঁচ সদস্যের পরিবারে পুরো মাসে রান্না করা যায়। চুলাটি সাশ্রয়ী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জানান, চুলাটিতে বাইরে থেকে ৬-১২ ভোল্টের মোটর দ্বারা বাতাস প্রদান করে আগুন জ্বালাতে সহায়ক অক্সিজেন সরবরাহ করার কারণে জ্বালানি খুব সহজে পোড়ে এবং জ্বালানি অপচয় রোধ হয়। চুলাটি ইস্পাত নির্মিত হওয়ায় তাপধারণ ক্ষমতা বেশি। এ ছাড়া চুলাটিতে জ্বালানি পোড়ানোর পরে যে তাপ নির্গত করে তা চুলাটির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে অতিরিক্ত তাপ বাইরে নির্গত হয় না ফলে দ্রুত রান্না হয়।

তিনি আরও জানান, এক কেজি চালের ভাত রান্নায় এ চুলায় ১৮-২০ মিনিট লাগে, যেখানে সাধারণ চুলায় তা ৩০ মিনিটের বেশি লাগে। অতিরিক্ত বাতাস প্রদানের কারণে রান্নায় কালো ধোঁয়া ও কালি কম হয়। কাঠখড়ি, গোবরখড়ি, বাঁশখড়ি, চারকলসহ সকল প্রকার জ্বালানি পোড়ানো যায়। এ ছাড়াও এ চুলায় ফেলে দেয়া কাঠকয়লাও পোড়ানো যায়।

কালো ধোঁয়া ও কোন প্রকার কালি ছাড়াই পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাঠকয়লা পুড়িয়ে রান্না করা যায় এবং কাঠকয়লা সহজলভ্য হওয়ায় মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকার কয়লায় এক মাস রান্না করা যায়। এ ছাড়াও একই চুলা দ্বারা জ্বালানির পাশাপাশি গ্যাস সংযোগ দিয়ে বোতলজাত গ্যাস দিয়েও রান্না করা সম্ভব। চুলাটিতে অক্সিজেন সরবরাহে মোটর চালাতে বিদ্যুৎ অ্যাডাপ্টর, মোবাইল চার্জার বা টর্চলাইট ব্যাটারির স্বল্প ভোল্টেজে চালানো যায়।

চুলাটি বিভিন্ন ধরনের ইস্পাত, ৬-১২ ভোল্টের মোটর, কন্ট্রোল সুইচ বোর্ড দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি এবং এটি তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ২৫০০ টাকা। এ ছাড়া রান্নার সময় বাতাস, গান শোনা বা মোবাইল চার্জ দেওয়া যাবে এ স্বয়ংক্রিয় চুলায়। তবে স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন করতে সোলার সিস্টেম, মিউজিক প্লেয়ার, গরমে বাতাস পেতে পাখা, রিমোট কন্ট্রোল সংযোগ করা সম্ভব। এসব সুবিধা নিতে খরচ হবে সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

মোসাদ্দেকের উদ্ভাবিত বিশেষ ধরনের চুলাটি গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৬তম জাতীয় বিজ্ঞানমেলায় সিনিয়র ক্যাটাগরিতে দিনাজপুর জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার পেয়েছে। এরপর ২০১৫ সালের ১০ মে রংপুর বিভাগীয় বিজ্ঞানমেলায় চ্যাম্পিয়ন ও জুলাইয়ে ঢাকায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে জাতীয় পর্যায়ে পঞ্চম স্থান অর্জন করে।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ খালেকুজ্জামান জানান, তার উদ্ভাবিত সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব চুলাটি দ্বারা কলেজ মাঠেও রান্না করে দেখেছি। এজন্য মোসাদ্দেক আঞ্চলিক, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করেছে। বেশ সাড়া ফেলেছে এ চুলাটি। ইতিমধ্যে চাহিদা বাড়ছে এ চুলার।

এআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ