ডেস্ক নিউজ : কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে বিদায় জানাল বিশ্ববাসী। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলে মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে জন্মস্থান লুইসভিলেই সমাহিত হন মোহাম্মদ আলী।
লুইসভিলের কেএফসি ইয়াম সেন্টারে অনুষ্ঠিত মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্যে মুসলমান ইমাম এবং খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মযাজক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া আলীর পরিবারের সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ইয়াম সেন্টারে আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের শুরুতেই আরবিতে কোরআন পাঠ করেন ইমাম হামজাহ আবদুল মালিক। পরে বক্তব্য দেন স্থানীয় খ্রিস্টান ধর্মযাজক কেভিন কসবি। র্যাবাই (ইহুদি ধর্মযাজক) মাইকেল লারনার তাঁর বক্তৃতায় কৃষাঙ্গ ও মুসলমানদের ওপর অবিচারের প্রতিবাদ জানান।
মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী লোনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোনো নিয়ম আলীর পছন্দ না হলে তা বদলে ফেলতেন। আলীর নিজের জীবনকে তরুণদের অনুসরণীয় করতে চেয়েছেন।
শেষকৃত্যের বক্তৃতায় মোহাম্মদ আলীকে স্বাধীন বিশ্বাসের মানুষ বলে অভিহিতে করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তিনি বলেন, আলী চাইতেন প্রতিটি তরুণ নিজেই নিজের জীবনে গল্প বানাক।
পারিবারিক কারণে মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্যে অংশ নিতে পরেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ওবামার চিঠি পড়ে শোনানো হয়। চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আলী ছিলেন তাঁর যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ। মোহাম্মদ আলীই আমেরিকা। তিনি সবসময়ই আমেরিকা হিসেবেই থাকবেন।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নেন জর্ডানের কিং আব্দুল্লাহ। হলিউড তারকা উইল স্মিথ, আরনল্ড শোয়ার্জনেগার এবং মুষ্টিযোদ্ধা মাইক টাইসনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন আলীর শেষকৃত্যে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জানাজায় তুরস্কের পেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অংশ নেন।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার লুইসভিল শহরে মোহাম্মদ আলীর মরদেহবাহী গাড়ি নিয়ে মোটর শোভাযাত্রা হয়। শহরের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক হাজার মানুষ গাড়িতে ফুল এবং ‘আলী, আলী’ বলে স্লোগান দেয়।
শুক্রবার দুপুরে মোহাম্মদ আলীর মরদেহ কেভ হিল কবরস্থানে নেওয়া হয়। করবস্থানের ফটকের সামনে কার্পেটের মতো করে ছিটিয়ে রাখা হয়েছিল গোলাপের পাপড়ি। মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সদস্য এবং নিকট বন্ধুদের অংশগ্রহণে একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলীকে ওই করবস্থানে সমাহিত করা হয়।
স্থানীয় সময় ৩ জুন রাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্সের এক হাসপাতালে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে।
১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েড বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলী খ্যাতি অর্জন করেন। এর পর পরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন আলী। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ বলে খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি,এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী।
১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ মোহাম্মদ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাঁকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম/ওএস