শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ৪ মাঘ ১৪৩১ ।। ১৮ রজব ১৪৪৬


শিশুর প্রথম স্কুল: অভিভাবকের করণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাসনাইন আহমেদ হাওলাদার

জানুয়ারিতে শুরু হবে অনেক শিশুর শিক্ষাজীবন। নতুন স্কুলে যাওয়া নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে নানা ভীতও কাজ করে শিশুমনে। এ সময় তাদের আগে থেকে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করে তোলা। শিশুরা সহজ-সরল চিন্তার ধারক ও কোমল মনের অধিকারী।

তাই প্রথম স্কুলে পাঠানোর আগে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে অভিভাবককে। শিশুমনে চাপ তৈরি হলে স্কুলে যেতে আগ্রহী হবে না শিশুরা।

পূর্ব প্রস্তুতি

স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক সক্ষমতা শিশুর রয়েছে কি-না তা অভিভাবককে বুঝতে হবে। শারীরিক প্রস্তুতির অভাবে স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে শিশুরা। শিশুকে শারীরিক দক্ষতা অর্জনে আগ্রহী করে তুলতে হবে অভিভাবককে। সে ক্ষেত্রে তাদের খেলাধুলা ও বয়স উপযোগী ব্যায়াম করানো যেতে পারে।

নির্দিষ্ট বয়সী শিশুদের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা নিজের সন্তানের আছে কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে অভিভাবককে। স্কুলে গিয়ে শিক্ষকের নির্দেশনা বুঝে সাড়া দিতে শিশুর এই সক্ষমতা প্রয়োজন হয়।

বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা স্কুলের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি করে শিশুকে

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হলে তার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে অভিভাবককে, পাশাপাশি তাদের জন্য তৈরি বিশেষ স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। হঠাৎ অনেক নতুন শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে অনিরাপদ অনুভব করতে পারে। অপরিচিত মানুষের সঙ্গে মিশতে অনেক শিশুই ভয় পায়। তাই স্কুলে পাঠানোর আগে সন্তানকে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে দেওয়া যেতে পারে।

স্কুলে গিয়ে অনেক শিশু মা-বাবা থেকে দূরে থাকতে পারে না, কান্নাকাটি করে। শহরকেন্দ্রিক ও একক পরিবারে বসবাস করা শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। হঠাৎ শিশুরা নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এ জন্য শিশুদের আগে থেকে এসব বিষয়ে শেখানো উচিত।

স্কুলে মানিয়ে নেওয়া

শিশু যে স্কুলে পড়াশোনা করবে সেখানে শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলের অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে শিশুরা যদি শারীরিক আঘাত পায় কখনো, তবে তাদের মনে ভয় ও শঙ্কার সৃষ্টি হবে। যা তাদের মনে স্কুলবিমুখতা তৈরি করতে পারে। স্কুলে ভর্তির আগে অভিভাবকরা স্কুল পরিদর্শন করে নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে। শিক্ষক ও স্কুলে চাকরিরত অন্যদের আচরণ শিশুমনে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে। স্কুল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা শিশুদের সাদরে গ্রহণ করতে হবে।  শিশুরা তাদের গ্রহণযোগ্যতা অনুভব করতে পারলে স্কুলের প্রতি বেশি করে আগ্রহী হবে । শিশুদের প্রতি কোমল আচরণ করতে হবে।

স্কুলের নিয়ম-কানুনগুলো শিশুর বয়স উপযোগী হওয়া খুব প্রয়োজন, তা না হলে শিশুরা ভয় পেতে শুরু করবে। মনে ভীতি সৃষ্টি হলে শিশুরা আর স্কুলে যেতে চাইবে না। তবে প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে শিশুদের জীবন শৃঙ্খলিত রাখার জন্য।

স্কুলের প্রথম দিকের দিনগুলোকে শিশুর জন্য উপভোগ্য করে তুলতে হবে। শিশু যেন স্কুলে গিয়ে আনন্দ পায়, স্কুলকে যেন বাসার থেকেও সুখের জায়গা মনে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম দিকের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা শিশুকে স্কুলের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।

সমস্যা সমাধানে করণীয়

শিশুর যদি স্কুলে মানিয়ে নিতে সমস্যা ও স্কুলবিমুখতা তৈরি হয়, তবে বুঝতে হবে শিশুর স্কুলে যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে কিংবা স্কুলের পরিবেশ তার জন্য উপযুক্ত নয়। সে ক্ষেত্রে শিশু সরাসরি না বলে তার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা প্রকাশের মাধ্যমে স্কুলে যেতে চাইবে না। কখনো ঘুম থেকে উঠতে না চাওয়া কিংবা কখনো প্রচুর কান্না করা, পেটে ব্যথা কিংবা শরীর গরম হওয়া বিষয়গুলো প্রকাশ পাবে।

শিশু স্কুলে যেতে না চাইলে অভিভাবকরা শুধু নিজেদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা না করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এ ছাড়া প্রয়োজনে মনোবিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করা যেতে পারে।

লেখক : পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক

চাইল্ড ফিউচার কিন্ডারগার্টেন

বোরহানউদ্দিন, ভোলা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ