দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদের ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিনকে সম্মানী ভাতা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁদের পাশাপাশি মসজিদের খাদেমদেরও দেওয়া হবে এই ভাতা। তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতার পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় এ ভাতা পাবেন।
দেশের মোট মসজিদের ১০ শতাংশ মসজিদে প্রথম দফায় এ কর্মসূচি চালু করা হবে।
পর্যায়ক্রমে বাকি মসজিদগুলোকেও এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। প্রাথমিকভাবে ইমাম পাঁচ হাজার, মুয়াজ্জিন চার হাজার এবং খাদেম তিন হাজার টাকা করে পারেন।
সারা দেশের মসজিদগুলোর তালিকা করতে গত মঙ্গলবার সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। প্রতিষ্ঠানটির সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
কমিটি গঠনের অফিস আদেশে বলা হয়, মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬ যুগোপযোগী করা এবং গত বছরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার থেকে সম্মানী প্রদান করা হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের তালিকা তৈরি করতে এই কমিটি গঠন করা হলো। অন্য সদস্যরা হলেন পরিচালক (সমন্বয়) মো. মহিউদ্দিন, পরিচালক (প্রকাশনা) মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার, পরিচালক (ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি) মো. রেজ্জাকুল হায়দার, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের উপপ্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসেন ও সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক (পার্সো) এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে ‘সারা দেশে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে ১৭ লাখের বেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন রয়েছেন। এর বাইরে শহরের মসজিদগুলোতে খাদেম রয়েছেন। সরকার পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ কর্মসূচি চালু করবে।
পরে ধাপে ধাপে সব মসজিদ এর আওতায় আসবে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি মসজিদকে ১২ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।’
একইভাবে মন্দিরের পুরোহিত ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ভাতার আওতায় আসবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গত বছরের ৪ মার্চ জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কর্ম অধিবেশন শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ‘প্রতিটি জেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যদের তালিকা প্রস্তুত করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছে। তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
মসজিদের সংখ্যা কত : দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন কর্মরত। এর মধ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এবং জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে তিনজন খতিব, ছয়জন পেশ ইমাম ও ছয়জন মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত।
গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও একজন খাদেমকে বর্তমানে পর্যায়ক্রমে সম্মানীর ভিত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ৫৬৪টি মডেল মসজিদের রাজস্ব খাতে পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পদ সৃজনের পর তাঁদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত বেতন স্কেল থেকে প্রদান করা হবে।
বর্তমানে সারা দেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ৪৯ হাজার ৭১৯ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিন কর্মরত। তাঁদের প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা হারে সম্মানী প্রদান করা হয়।
হাআমা/