মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

ইসলামের দৃষ্টিতে উদারতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শায়খ ড. মাহের বিন হামদ আল মুআইকিলি
অনুবাদ: আবদুল কাইয়ুম শেখ 

(১৩-১০-১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ১১-০৪-২০২৫ ঈসায়ি তারিখে বাইতুল্লাহ শরীফে প্রদত্ত জুমার খুতবা)

ঈমান কী? ঈমান মানে হলো, মুখে স্বীকার করা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে কাজ করা ও অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। যেসব মুমিনের চরিত্র সবচেয়ে ভালো, তারাই সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমানদার। তারা সহজ-সরল ও নম্র স্বভাবের মানুষ। তাদের সঙ্গে সবাই ভালো ব্যবহার করে এবং তারাও অন্যদের সঙ্গে সদাচার করে চলে। ইসলাম এসেছে সবচেয়ে উঁচু মানের নৈতিকতা ও গুণাবলি প্রতিষ্ঠা করতে। ইসলাম বিভেদ সৃষ্টি করে না, বরং ঐক্য গড়ে তোলে; ধ্বংস করে না, বরং গঠন করে। ইসলাম সহজ-সরল, সহনশীল ও কোমলতার ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি ধর্ম। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

 یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫

অর্থাৎ, 'আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা সহজ তা চান আর যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না।' (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

উদারতা একটি মহান গুণ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  একে ধৈর্যের সঙ্গে তুলনা করার সঙ্গে সঙ্গে ঈমানের একটি বড় আলামত বলেছেন। হযরত জাবির রা. বলেন, কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, 'সবচেয়ে উত্তম কাজ কোনটি?' তিনি বললেন, 'ধৈর্য ও উদারতা।' আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, 'সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমান কাদের?' তিনি বললেন, 'যাদের চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।' (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা) 

ধৈর্যশীলতা মানুষকে গোনাহ থেকে দূরে রাখে এবং উদারতা তাকে ভালো কাজের দিকে উৎসাহিত করে। উদারতা মানে হলো, মনটা পরিষ্কার রাখা, অন্যের জন্য মঙ্গল চাওয়া, লেনদেনে সহজতা, নম্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সবকিছু সহজভাবে করা। এটা-ই ইসলাম, এটা-ই আমাদের ধর্ম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন, بُعثْتُ بالحنيفية السمحة
অর্থাৎ, 'আমাকে সহজ-সরল ধর্ম দিয়ে পাঠানো হয়েছে।' (মুসনাদে আহমদ)

উদাতার অন্যতম রূপ হলো—ক্রয়-বিক্রয়ে ও পাওনা আদানে-প্রদানে উদারতা দেখানো। বিক্রেতা লাভের জন্য বাড়াবাড়ি না করা, ক্রেতা দাম দেওয়ার সময় তালবাহানা বা অন্যায় না করা এবং কেউ কারো কাছে পাওনা চাইলে রূঢ়ভাবে না বলা উদারতার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন মানুষদের জন্য দোয়া করেছেন। ‎হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, رَحِمَ  اللَّهُ  رَجُلاً  سَمْحًا   إِذَا   بَاعَ،  وَإِذَا  اشْتَرَى،  وَإِذَا  اقْتَضَى
অর্থাৎ, 'আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি করুণা বর্ষণ করুন যে নম্রতার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা আদায় করে।' (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০৭৬) এর মধ্য দিয়ে সমাজে শান্তি ও বরকত নেমে আসে। আর যেকোনো কিছুতে নম্রতা থাকলে তা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।

হে ঈমানদার ভাইয়েরা, যে ব্যক্তি মহানুভবতার গুণে গুণান্বিত, তার আত্মা উদার হয়, চরিত্র কোমল হয়, তার ওপর আল্লাহর অনুকম্পা ও মানুষের দয়া বর্ষিত হয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম   বলেছেন,

اسمح يُسمَح لك

অর্থাৎ, 'তুমি উদার হও, তোমার সঙ্গেও উদারতা দেখানো হবে।' (মুসনাদে আহমদ) তুমি লোকদের সঙ্গে সহজ ব্যবহার করো, আল্লাহ তোমার সঙ্গেও তেমনি ব্যবহার করবেন, দুনিয়া ও আখেরাতে। সহিহ মুসলিমে এসেছে, এক ব্যক্তির কোনো ভালো কাজ পাওয়া গেল না, কেবল একটি ছাড়া। আর তা হলো,সে ছিল সম্পদশালী, আর যখন কারো থেকে পাওনা আদায় করত, তখন তার কর্মচারীদের বলত—যারা অসচ্ছল, তাদের ছেড়ে দাও। তখন আল্লাহ বলেন, 

نحن أحق بذلك منه، تجاوزوا عنه

অর্থাৎ, 'সে যদি এমন করতে পারে, তাহলে আমিই তো তার চেয়েও বেশি দয়ালু—তাকে ছেড়ে দাও।' 

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীরাও এমন ছিলেন। হযরত আবু কাতাদা রা.-এর কাছ থেকে জনৈক ব্যক্তি লুকিয়ে ছিল, কারণ ঋণ দিতে পারছিল না। পরে যখন দেখা হলো, লোকটি বলল, 'আমি আসলেই গরিব।' আবু কাতাদা বললেন, 'তুমি কি আল্লাহর নামে সত্য বলছ?' লোকটি বলল, 'হাঁ! তখন আবু কাতাদা রা. বললেন, 'আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

مَنْ  سَرَّهُ أَنْ يُنْجِيَهُ اللَّهُ  مِنْ  كُرَبِ  يَوْمِ  الْقِيَامَةِ  فَلْيُنَفِّسْ  عَنْ  مُعْسِرٍ  أَوْ  يَضَعْ  عَنْهُ 

অর্থাৎ, 'যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিনের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চায়, সে যেন কোনো গরিবকে সময় দেয় বা ঋণ মাফ করে দেয়।' (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৩৮৯২) আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

ہَلۡ جَزَآءُ الۡاِحۡسَانِ اِلَّا الۡاِحۡسَانُ ۚ 

অর্থাৎ, 'উত্তম কাজের জন্যে উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কী হতে পারে?' (সূরা রাহমান, আয়াত: ৬০)

জীবন কখনোই সুখের হয় না, মন কখনোই শান্ত হয় না—যদি না মানুষ ক্ষমাশীল হয়, ভুল ত্রুটিগুলোকে উপেক্ষা করে, সহজ-সরল ও উদার হয়। কারণ, মানুষ কখনোই নিখুঁত হতে পারে না; ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত। তাই, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো মুসলমানের কষ্ট লাঘব করবে,  কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার কষ্ট লাঘব করবেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন,

مَنْ نفَّس عن غريمه أو مَحَا عنه كان في ظل العرش يوم القيامة

অর্থাৎ, 'যে ব্যক্তি তার পাওনাদারের কিছু ঋণ মাফ করে দেয় বা তাকে সময় দেয়, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।' (মুসনাদে আহমদ)

উদারতার আরেকটি রূপ হলো—কেউ যদি কোনো কিছু কেনাবেচা করার পর অনুতপ্ত হয়ে ফেরত দিতে চায়, তাহলে তাকে এর সুযোগ দেওয়া। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ أَقَالَ مُسْلِمًا  أَقَالَهُ  اللَّهُ  عَثْرَتَهُ   يَوْمَ   الْقِيَامَةِ

অর্থাৎ, 'যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে চুক্তি ভঙ্গের সুযোগ দিলো,  কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন।' (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৯৯)

এ রকম উদারতার বাস্তব উদাহরণ হলেন হজরত উসমান রা.। তিনি একজনের কাছ থেকে একটি জমি কিনেছিলেন, কিন্তু সে লোকটি দেরি করছিল টাকা নিতে। উসমান রা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন—তুমি কেন টাকা নিতে আসছো না? লোকটি বলল, 'আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন—সবার কাছ থেকে আমি অভিযোগ শুনছি।' তখন উসমান রা. বললেন, 'এটাই কি তোমার টাকা নিতে না আসার কারণ?' লোকটি বলল, 'হাঁ' উসমান রা. বললেন, 'তাহলে ঠিক আছে—তুমি চাও জমি না টাকা?' এরপর তিনি বললেন, 'আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কেনা-বেচা, ঋণ ও বিচার-ফায়সালায় সহজ-সরল থাকে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।' (মুসনাদে আহমদ)

মহানুভবতার আরেকটি রূপ হলো, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে সময় দেওয়া, যদি তার পক্ষে তা পরিশোধ করা সম্ভব না হয়। কেউ চাইলে তার পুরো ঋণ বা কিছুটা মাফ করে দিতে পারে। আল কুরআনে বলা হয়েছে,

وَاِنۡ کَانَ ذُوۡ عُسۡرَۃٍ فَنَظِرَۃٌ اِلٰی مَیۡسَرَۃٍ ؕ وَاَنۡ تَصَدَّقُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ 

অর্থাৎ, 'যদি খাতক অভাবগ্রস্ত হয় তবে সচ্ছলতা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা ছেড়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।' (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮০)

যদি কেউ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে সময় দেয়, তাহলে মহান আল্লাহ তাকে মহাপুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন। হযরত বুরাইদা রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—যে ব্যক্তি কোনো গরিব ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেয়, প্রতিদিন সে একটি সদকার সওয়াব পায়।' পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, 'যদি কেউ ঋণ দেওয়ার সময় পর্যন্ত প্রতিদিন অপেক্ষা করে, তাহলে সে একগুণ সওয়াব পায়। আর যখন ঋণ ফেরতের সময় হয়ে যায় এবং তখনও সময় দেয়, তখন সে প্রতিদিন দুই গুণ সওয়াব পায়।'

হে ঈমানদার ভাইয়েরা, বুদ্ধিমান মানুষ সুযোগ থাকতেই ভালো কাজ করে ফেলে—কারণ ভালো কাজের সুযোগ সবসময় আসে না, আবার একবার চলে গেলে আর নাও আসতে পারে। আর উদারতা এক মহান গুণ, যেটা কেবল সৌভাগ্যবানরাই অর্জন করতে পারে। তাই, আল্লাহকে ভয় করো, নিজেদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো ও এমন কাজ করো, যেটা কেয়ামতের দিন তোমার সামনে আসবে। জেনে রাখো—যেমন কাজ করবে, তেমনি প্রতিদান পাবে। তুমি যদি দয়া করো, তোমার উপরও দয়া করা হবে; তুমি যদি ক্ষমা করো, তাহলে তোমাকেও ক্ষমা করা হবে; তুমি যদি মানুষকে ছাড় দাও, আল্লাহও তোমার ব্যাপারে ছাড় দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَا یَاۡتَلِ اُولُوا الۡفَضۡلِ مِنۡکُمۡ وَالسَّعَۃِ اَنۡ یُّؤۡتُوۡۤا اُولِی الۡقُرۡبٰی وَالۡمَسٰکِیۡنَ وَالۡمُہٰجِرِیۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۪ۖ وَلۡیَعۡفُوۡا وَلۡیَصۡفَحُوۡا ؕ اَلَا تُحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰہُ لَکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ 

অর্থাৎ, 'তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা হিজরত করেছে তাদেরকে কিছুই দেবে না; তারা যেন এদেরকে ক্ষমা করে ও এদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সূরা নুর, আয়াত: ২২)

উদারতা মানে হলো—মনের প্রশান্তি, হৃদয়ের প্রশস্ততা, ব্যবহারিক নম্রতা, মুখের হাসিমুখ, লেনদেনে সত্যবাদিতা ও সৃষ্টির প্রতি দয়া। একজন মুসলমান হয় নম্র, সহজ-সরল ও ক্ষমাশীল। তিনি মানুষের ছোটখাটো ভুলে চোখ বুলিয়ে যান, ভুলভ্রান্তিকে মাফ করে দেন। যত বেশি একজন মানুষ সহনশীল হয়, সে ততই আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার কাছে চলে যায়, তাঁর রাগ ও শাস্তি থেকে দূরে থাকে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَلاَ  أُخْبِرُكُمْ  بِمَنْ  يَحْرُمُ  عَلَى  النَّارِ  أَوْ  بِمَنْ  تَحْرُمُ  عَلَيْهِ  النَّارُ  عَلَى  كُلِّ  قَرِيبٍ   هَيِّنٍ   لَيِّنٍ  سَهْلٍ

অর্থাৎ, 'আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম ও জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছে প্রিয়, সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।' (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৮৮)

ঋণী ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন বা সময় দেওয়ার যে উৎসাহ ইসলাম দিয়েছে, তার মানে এই নয় যে, অন্যের টাকা আত্মসাৎ করা যাবে বা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার ছলচাতুরী করা যাবে। যে ব্যক্তি লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা নষ্ট করার নিয়তে রাখে, আল্লাহ তার ধ্বংস ডেকে আনেন। সহীহ বুখারি শরিফে এসেছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
من أخذ أموال الناس يريد إتلافها أتلفه الله

অর্থাৎ, 'যে ব্যক্তি নষ্ট করার নিয়তে মানুষের সম্পদ নেয়, আল্লাহ তার ধ্বংস ঘটান।' সে ওই সম্পদ থেকে কোনো উপকার পায় না; বরং তার জন্য তা আখেরাতে শাস্তির কারণ হয়। আর যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা ফেরত না দিয়ে বিলম্ব করে, তাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যায়কারী ও গুনাহগার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিমে এসেছে,
مطل الغني ظلم
অর্থাৎ, 'যে ধনী ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করে, সে জুলুম করে।' তাই আল্লাহর বান্দারা! সাবধান হও!

অন্যের অর্থের ব্যাপারে গাফিলতি করো না। কারণ, একজন মৃত ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারে না যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ হয়ে যায়। হযরত জাবির রা. বলেন, 'এক ব্যক্তি মারা গেল। আমরা তাকে গোসল দিলাম, কাফন পরালাম, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বললাম, ‘আপনি কি তার জানাজা পড়াবেন?’  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘তার কোনো ঋণ আছে?’ আমরা বললাম, ‘দুই দিনার।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  তখন পেছনে চলে গেলেন ও জানাজা পড়ালেন না। হযরত আবু কাতাদা রা. বললেন, ‘ওই দুই দিনার আমি পরিশোধ করব।’ তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  জানাজা পড়ালেন। পরদিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম   আবার আবু কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঋণের কী হলো?’ তিনি বললেন, ‘তিনি তো মাত্র গতকালই মারা গেছেন।’ একদিন পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঋণ কি শোধ করেছো?’ তিনি বললেন, ‘হাঁ, শোধ করে দিয়েছি।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'এখন তুমি তার শরীরকে ঠান্ডা করেছো।' (মুসনাদে আহমদ)

মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা-১২১১

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ