শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অ্যাডভোকেট আলিফের কবর জিয়ারত ও পরিবারের পাশে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ  প্রাইমারি স্কুলে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক বাধ্যতামূলক করতে হবে: মাওলানা ইসলামাবাদী বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের নামে মামলা কাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন জামায়াত আমীর হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ১৫ দিন রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন চলতে দেয়া হবে না: মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ২২৫০০ কোটি নতুন টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

যত না উন্নয়ন তার চেয়ে অনেক বেশি লুটপাট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, দেশে এখন গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই।

মানুষের অধিকার বলেও কিছু নেই। শাসক আর প্রশাসক ছাড়া মাঝখানে আর কেউ নেই, কিছু নেই। বলা যেতে পারে দেশে এখন কার্যত রাজতন্ত্র চলছে। কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়াই দেশ চলছে।

রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদদেরও এখন কোনো গুরুত্ব নেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, অনিয়ম এবং অপশাসন। দেশের মানুষ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট করছে। উন্নয়নের নামে ব্যয় বাড়াচ্ছে। কেবল সুইস ব্যাংকেই এক বছরে চার হাজার কোটি টাকা জমা করেছে এ দেশের কিছু লোক। আরও অনেক দেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। বেগমপাড়ার খবর তো সবাই জানে। এসব অপ্রিয়, কিন্তু সত্যি কথাগুলো আমি এবং আমরা বলছি।

এতে কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারেন। কিন্তু কিছু করার নেই। আবারও বলছি, এই সরকার যত না উন্নয়ন করেছে, তার চাইতেও বহুগুণ করেছে লুটপাট এবং দুর্র্নীতি। এই সরকারের আমলে যত দুর্নীতি হয়েছে, যত টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে তা আর অতীতে কখনো হয়নি।

বুধবার যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় ‘রজনীগন্ধায়’ দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার চিত্র অকপটে তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা, জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আগামী দিনের সংকট, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের হঠাৎ করে কাউন্সিল আহবান, এর পরপরই তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ দলের এবং দলের বাইরের নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, সরকার জানে তারা দেশ পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থ। দেশের মানুষ আর তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায় না। অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু ভোট হলে তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এজন্য তারা অতীতের মতোই নিজেদের মনমতো সাজানো ছকের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চায়।

মানুষ ভোট দিতে পারুক কী না পারুক তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। নির্বাচন কমিশনও সরকারের হয়ে সেই ছকে বাঁধা সাজানো নির্বাচন আয়োজনের পথে হাঁটছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। কিন্তু সরকারি দল চায় ইভিএমে নির্বাচন। তাই নির্বাচন কমিশনও ইভিএমে ভোট করতে চায়। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল চায় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। কিন্তু এর ঠিক উলটোপথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন। এটা হলে দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের দুর্যোগ আসবে।

সরকার এবং সরকারি দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণেই কি আপনি এখন এত বেশি সমালোচনায় সোচ্চার-এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, বিষয়টি এমন নয়। আমি বা আমরা সরকারের সমালোচনা করি, করছি। তাদের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরছি। লুটপাট-অনিয়ম-দুর্নীতি-অর্থ পাচারের কথা বলছি।

যা বলছি তা তো মিথ্যা বলছি না। এই সরকার মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। আইনের শাসন নেই। কথা বলার অধিকার নেই। মানুষের কথা সরকার শোনে না। মানুষের মনের ভাষা সরকার বোঝারও চেষ্টা করছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ডলার সংকট। রিজার্ভ সংকট। অর্থনীতির সংকট। শিল্পায়ন নেই। বেকারত্ব বাড়ছে। ঋণখেলাপির সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে, টাকা নেই। খাদ্য সংকট। জ্বালানি সংকট। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে দেশের বেশিরভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্ব হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো, রিজার্ভ পর্যাপ্ত-সরকার মুখে এসব কথা যাই বলুক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে দেশ শ্রীলংকার পথে হাঁটছে। রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে আমরা বড় ধরনের দুর্যোগ দেখছি।

জিএম কাদের বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, ইভিএম হচ্ছে কারচুপির মেশিন। আবার নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বলছে, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব নয়। তাই নির্বাচন কমিশন সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে-তা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ আছে। মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাতামাতি করছে। অন্যদিকে দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না। কোনো দাবিতে আন্দোলন হলে পুলিশ ও প্রতিপক্ষরা হামলা চালাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় নির্বাচন হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে না।

নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের ৯০ ভাগ জায়গায় সরকারের একচ্ছত্র প্রভাব রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন সরকারের হাতে, এমন বাস্তবতায় অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, সরকার একের পর এক মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এই প্রকল্পের নামে লুটপাট করছে। কাজের শুরুতে একদফা লুটপাট। কাজের মাঝখানে আরেক দফা লুটপাট। কাজের শেষেও লুটপাট। সর্বত্র লুটপাটতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। সরকার এবং সরকারি দলের ছত্রছায়ায় কিছু লোক লুটেপুটে খাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ বিত্তবৈভবের মালিক হচ্ছে।

আপনারা কি এখন আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে নেই-জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এটা অনেক পুরোনো কথা। আমরা বহুদিন ধরেই বলছি-জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, এখন নেই। মহাজোট বলেও এখন আর কিছু নেই। আমরা আমাদের মতো করে পথ চলছি। আমরা দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত এবং শক্তিশালী করাটাকেই এই মুহূর্তে প্রাধান্য দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কি এর মধ্যে আপনার কথা হয়েছে। কিংবা দেখা-সাক্ষাৎ-জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, না; দেখা হয়নি। কথাও হয়নি। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর আমরা ওনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। এরপরও নানান সময়ে ওনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। উনি সময় দেননি বা দিতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী এখন ভারত সফরে আছেন। এই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী, কী মনে হয় আপনার-জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এই সফরে আমাদের উল্লেখযোগ্য বা বলার মতো তেমন কোনো প্রাপ্তি নেই। যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের কথা বলা হয়েছে, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর মতো সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে ভারত সফরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। মন্ত্রী পর্যায়েও এসব সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব। তবে হ্যাঁ, এই সফরের রাজনৈতিক কিছু বিষয় থাকতে পারে। যা না জেনে বলা কঠিন।

নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি, নাকি কোনো বড় দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন-জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, আপাতত ৩০০ আসনেই প্রার্র্থী ঠিক করে রাখছি।

এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। তবে ভোটের বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু বাস্তবে কোনো আসনে কেবল ৫ বা ১০ শতাংশ নিজস্ব ভোট দিয়ে জয়ী হওয়া যায় না। জয়ী হতে হলে প্রয়োজন ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ ভোট। এ চিন্তা মাথায় রেখেই নির্বাচন এলে দেখবেন ছোট দলগুলো বড় দুই দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। জাতীয় পার্টি সব সময় রাজনীতিতে, ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম। এখন নেই। নির্বাচন আসুক, তখন সিদ্ধান্ত হবে-কার সঙ্গে জোটভুক্ত হবো। নাকি এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। তবে যাই করি, দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করে, সবার মতামত নিয়েই নির্বাচনি রণকৌশল ঠিক করা হবে।

অনেকে বলছেন, বিএনপির সঙ্গেও আপনারা আগামীতে নির্বাচনি জোট করতে পারেন। বিএনপির মহাসচিবসহ একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আপনার কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে, কথাবার্তাও হয়েছে।

এই তথ্যের সত্যতা এবং জোট গঠনের সম্ভাবনা কতটুকু-জবাবে জিএম কাদের বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির কোনো নেতার সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে বৈঠক হয়নি।

তবে হ্যাঁ, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির অনেক নেতার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, কথাও হয়। এই দেখা-সাক্ষাৎ বা কথাবার্তা দোষের কিছু বলে আমি মনে করি না। এ দেশে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে এখন শত্রু মনে করা হয়। এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না। আমরা চাই সবাই যার যার রাজনীতি করবে, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে। দেশ ও জাতীয় স্বার্থে সবাই এক হয়ে কাজ করবে। আমরা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ