আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তিনি গেয়েছিলেন মানবতার জয়গান। লিখেছিলেন 'গাহি সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান...'। দ্রোহ ও প্রেমে, কোমলে-কঠোরে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে যোগ করেছিলেন নতুন মাত্রা। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের জাতীয় কবি।
আজ তার ৪৬তম প্রয়াণ বার্ষিকী। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জাতি আজ পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে 'বিদ্রোহী কবি' নামে খ্যাত প্রিয় কবিকে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার
আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। নির্মম দারিদ্র্য থেকে অসামান্য প্রতিভায় তিনি অভিষিক্ত হয়েছিলেন। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সংগ্রাম করেছেন শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনি জীবনেও। সোচ্চার ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে। তরুণদের কাছে তিনি বিদ্রোহের অনন্ত প্রতীক। সংগীত, নাটক, ছোটগল্প, উপন্যাসসহ সাহিত্যের সব শাখায় অবদান রাখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি খ্যাত। তার লেখা গান বাংলা গানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়। তাকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলামকে ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। পরে তাকে দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় একুশে পদক। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে।
কবি এসেছিলেন জ্যৈষ্ঠে। বিদায় নিয়েছেন ভাদ্রে। শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল তার কণ্ঠে। সাম্প্রদায়িকতার বিষকে দূর করে তুলে এনেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার অমৃত বাণী। আবার তিনিই কোমল সুকুমার হৃদয়ানুভবে আবেগে থরথর। তিনি বিদ্রোহী, আবার তিনিই গানের পাখি বুলবুল।
অঙ্কের হিসাবে তার জীবনকাল ৭৭ বছরের; তবে সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। নজরুলের এই ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। যে কারণে জাতি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে জাতীয় কবিকে। সারা দেশে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটি পালিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত কবির সমাধি ছেয়ে যাবে বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসার ফুলে ফুলে। যেমনটি প্রতিবার হয়।
জাতীয় কবি মাথানত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি ও অর্থবিত্ত-বৈভবের কাছে। 'চির উন্নত মম শির' বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীকচিত্তে। তার রচিত 'চল্? চল্? চল্?' গানটি আমাদের রণসংগীত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীপ্তিতে ভাস্বর বাংলা সাহিত্যের ভুবনে স্বতন্ত্র ভাষারীতি ও শব্দের প্রয়োগে এক নতুন কাব্যধারার সংযোগ করেছিলেন নজরুল। যা তাকে যেমন বিপুলভাবে জনপ্রিয় করে তুলেছিল, তেমনি বাংলা কবিতাকেও সমৃদ্ধ করেছিল। উত্তর ভারতীয় রাগসংগীতের দৃঢ় ভিত্তির ওপর রচনা করেছিলেন আধুনিক বাংলা গানের সৌধ। প্রবর্তন করেছিলেন বাংলা গজল।
কেএল/