আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: সড়কে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোনের মৃত্যু হলেও মায়ের গর্ভ ফেটে রাস্তায় ছিটকে পড়েও আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যায় নবজাতকটি।
তবে ভেঙে যায় ডান হাতের দুটি হাড়। ভাঙা হাড়টির ক্ষত নিয়েই চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিন কাটছিল তার। তবে তিন দিন অতিবাহিত না হতেই শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান অসুখ।
একদিকে শ্বাসকষ্ট, তার ওপর জন্ডিস ও রক্তস্বল্পতাও রয়েছে নবজাতকটির। যার ফলে সোমবার রাতে লাবীব প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নবজাতক নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) চিকিৎসা চলছে শিশুটির।
এদিকে হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের এনআইসিইউতে শিশুটিকে ভর্তির পর থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তার চিকিৎসা শুরু করেছে চিকিৎসকরা।
তার চিকিৎসায় ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডও গঠন করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তোফাজ্জল হোসেনকে এবং একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আসম লোকমান হোসেন চৌধুরী, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম ও নবজাতক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাকিবুল হক খান।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য সচিব ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশুটির রক্তস্বল্পতা থাকায় মঙ্গলবার তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। জন্ডিস থাকায় ফটোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। শিশুটির শ্বাসকষ্টও দেখা দিয়েছে। এটি নিয়েই আমরা একটু বেশি চিন্তিত।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু শিশুটি জন্মের সময় রাস্তায় পড়েছিল এবং শিশুটির হাতের দুটি হাড় ভাঙা, সেজন্য আমাদের মেডিকেল বোর্ড তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে শিশুটির আরও কোনো জটিলতা রয়েছে কি না। তবে আপাতত শিশুটি শঙ্কামুক্ত এ কথা বলা যাচ্ছে না। শঙ্কামুক্ত বলতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগবে।
এর আগে, গত শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যন্ত্রদানব ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না আক্তার (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা।
তবে ওই সময় অলৌকিকভাবে মা রত্নার গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। নবজাতকটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। তারা শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে নেওয়ার পর জানা যায় জীবিত আছে নবজাতক কন্যাটি।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে শিশুটি নগরীর লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
এরপর তার জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেওয়ায় চিকিৎসক ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে সোমবার রাত থেকে মমেক হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) চিকিৎসা শুরু হয় শিশুটির।
-এটি