তরিকুল ইসলাম মুক্তার।।
শিক্ষা বা জ্ঞানের বিশুদ্ধতম উৎস হচ্ছে আল কুরআন ও হাদিসে নবী সা.। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসুল সা.কে এই ভূমিতে পাঠিয়েছেন মানব জাতির উস্তায ও শিক্ষকরূপে। রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, নবী রাসুলগণ ধন সম্পদের মীরাছ বা উত্তরাধিকার রেখে যান না বরং তাঁরা মীরাছ রেখে যান ইলমের। যিনি এ মীরাছ লাভ করেছেন তিনি অনেক বড় সম্পদের অধিকারী হয়েছেন।
আর উলামায়ে কেরাম হচ্ছেন সেই ইলমের উত্তরাধিকারী। কেননা হাদিসে বর্ণিত আছে উলামায়ে কেরামগণ হলেন নবীর ওয়ারিশ। তাই নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যতদিন পর্যন্ত তোমরা সেই দুটি জিনিসকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহ তায়ালার কুরআন ও আমার সুন্নত।
নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী, তেমনি কুরআনে কারীম হচ্ছে সর্বশেষ কিতাব। আর বিশ্ব নবী রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ উসওয়ায়ে হাসানা বা উত্তম আদর্শ। সাহাবায়ে কেরাম রা.হতে এই ইলমী ও আমলী আমানত ধারাবাহিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন তাদের সঠিক উত্তরসূরী তাবেঈন তাবে তাবেঈন, মুজতাহিদ সালফে সালেহীন ফুকাহাগণ।পৃথিবীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বয়ে চলেছে দ্বীনের এই অমিয়ধারা।
তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা রাজধানীর মিরপুর দারুসসালাম এলাকায় গড়ে উঠে জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসা। উপমহাদেশের কওমী মাদরাসা নামে প্রচলিত দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের চিন্তাধারা ও কারিকুলামের অনুকরণ অনুসরণে প্রতিষ্ঠিত। জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসাও সেই দারুল উলুম দেওবন্দেরই অনুসারী একটি আদর্শিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দারুল উলুম দেওবন্দ তথা আকাবিরের চিন্তা চেতনা ও মন- মানসিকতার আলোকে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যোগ্য উত্তরসূরী এবং দেশ ও জাতির সার্বিক নেতৃত্ব প্রদানে উপযোগী প্রতিনিধি সৃষ্টির লক্ষে দেশের জাতীয় পর্যায়ের একটি বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানের রূপরেখাকে সামনে রেখে মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী রহ. এর তত্ত্বাবধানে এবং এই এলাকার মুরুব্বিদের আন্তরিক সহায়তায় ১৯৭০ সালে হাফেজ কারী আব্দুল খালেক আসআদী রহ. ভিত্তি রাখার মাধ্যমে এই জামিয়ার যাত্রা শুরু হয়।
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সিপাহসালার শাইখুল হাদিস আরব ওয়াল আজম আল্লামা সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ। হাফেজ ক্বারী আব্দুল খালেক যখন আরজাবাদ মাদ্রাসার বুনিয়াদ করেন তখন মাদরাসার অবকাঠামো ছিল শুধু একটা ভাঙ্গা টিনসেইট ঘর একটি ঘরেই থাকতেন সকল ছাত্র উস্তাদ। পরবর্তীতে মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী রহ. এর মাধ্যমে আরজাবাদ মাদরাসা সু বিশাল প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমান জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসার অবকাঠামো হলো দুইটা পাঁচ তলা বিশিষ্ট ভবন। একটি দশ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে ও মসজিদ দুইতলা নির্মাধিন রয়েছে। বর্তমান আরজাবাদ মাদ্রাসায় ছাত্রদের সংখ্যা এখন প্রায় দের হাজার, উস্তাদদের সংখ্যা ৫৫ জন। এখানে গরিব-অসহায় ছাত্রদের জন্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে সল্প খরচেই লেখা পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তালিম, তরবিয়ত, তাসাউফ, তাজকিয়ায়ে নফস, ইসলামি সিয়াসত, দাওয়াত ও তাবলীগ ।
জামিয়ার সূচনালগ্ন হতে অদ্যাবদি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় ১ম স্থান অধিকারসহ সকল বিভাগেই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে সুনামের সাথে এ ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। এভাবে জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশবাসী ও ইসলামী শিক্ষানুরাগীদের সু দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসা মিরপুর ঢাকা।
-এএ