।।কাউসার লাবীব।।
রাজধানীর অদূরে নারায়ণঞ্জের সোনাগাঁয়ে উপমহাদেশের প্রথম বুখারীর দরস প্রদানকারী শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রাহিমাহুল্লাহর মাকবারার সন্নিকটে গড়ে উঠেছে আদর্শ মা ও মেয়ে গড়ার সূতিকাগার জামিয়াতুজ জাহরা আলইসলামিয়া মহিলা মাদরাসা ও শিশুসদন।
[caption id="" align="aligncenter" width="477"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসার দৃষ্টিনন্দন ভবন।[/caption]
মাদরাসার আভ্যন্তরীণ পরিবেশ, সম্পূর্ণ শরঈ পর্দার সঙ্গে সবুজ বিস্তৃত খেলার মাঠ, আলাদা আলাদা খাটে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে আবাসন ব্যবস্থা সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। দেশের মহিলা মাদরাসার পরিবেশ নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু জামিয়াতুজ জাহরার প্রাণ জুড়ানো মনোরম পরিবেশ দেখলে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন।
[caption id="" align="aligncenter" width="478"] জামিয়াতুজ জাহরার ফুল বাগানে ফোটা ফুল।[/caption]
এক সময়ের বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান নদভী রাহিমাহুল্লাহর সুযোগ্য শাগরেদ গবেষক আলেম শায়খ উবায়দুল কাদের নদভী কাসেমী।
[caption id="" align="aligncenter" width="434"] শায়খ আহসান বেগ হোস্টেল।[/caption]
মাদরাসার সার্বিক পরিবেশ, শরঈ পর্দার যথাযথ পাবন্দী, রুচিশীল ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তালিকা দেখে মুগ্ধ হয়ে কথা বলি জামিয়াতুজ জাহরার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল শায়খ উবায়দুল কাদের নদভী কাসেমীর সঙ্গে। তার ভাষ্যমতে রুচিশীল পরিবেশে মাদরাসা গড়ে তোলার ধারণা তিনি পেয়েছেন সাইয়েদ আবুল হাসান নদভী রাহিমাহুল্লাহর কাছ থেকে।
[caption id="" align="aligncenter" width="498"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসার দৃষ্টিনন্দন ভবন।[/caption]
‘আমি নদওয়ায় থাকতে দেখেছি শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা খাটে আবাসন ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। আল্লামা আলী মিয়া নদভী রাহিমাহুল্লাহ যখন আমাকে সোনারগাঁও পাঠান শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রাহিমাহুল্লাহর মাকবারার পাশে মাদরাসা গড়ে তোলার জন্য, তখন প্রথমে প্রতিষ্ঠিত করি মাদরাসাতুশ শরফ আল ইসলামিয়া। কিছু দিন পর অনুভব করি এ এলাকায় একটি মানসম্পন্ন মহিলা মাদরাসা খুবই প্রয়োজন। তখন আল্লাহর অশেষ কৃপায় গড়ে তুলি জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসা ও শিশুসদন’- বলেন, শায়খ নদভী।
[caption id="" align="aligncenter" width="471"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসায় ছাত্রীদের ঘুমানোর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা খাটের ব্যবস্থা।[/caption]
একটি মহিলা মাদরাসার আভ্যন্তরীন সার্বিক বিষয় কেমন হওয়া উচিৎ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় মহিলা মাদরাসা বিষয়ে নানান ফেতনার ঘটনা শুনে থাকি। আবাসন ব্যবস্থায় যদি আলাদা আলাদা খাটের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে বিষয়টি যেমন স্বাস্থ্যসম্মত হবে তেমন অপ্রীতিকর অনেক বিষয় থেকে প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত রাখা সম্ভব। পাশাপাশি আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত লিভিং রুম, ডাইনিং রুম ও ক্লাসরুমের ব্যবস্থা থাকাটা এখন সময়ের দাবি। কেননা আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেক উন্নত ফ্যামিলির সন্তান মাদরাসায় আসছে।
[caption id="" align="aligncenter" width="513"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসার একাংশ।[/caption]
তাছাড়া তিনি মনে করেন, মহিলা মাদরাসা হলো একটি আদর্শ মা মেয়ে গড়ার সূতিকাগার। পাশাপাশি মেয়েদের মন খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। মা-বাবা থেকে দূরে থাকার কারণে প্রায় সময়ই তাদের মনে বিষাদ নেমে আসে। তাই তাদের প্রতিষ্ঠানকে যতটা তাদের নিজের বাড়িঘরের পরিবেশের মতো করে সাজানো যায় ততোই ভাল। মহিলা মাদরাসার শিক্ষিকাদের মাথায় রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা যেন তাকে আপন বোন বা নিজের মায়ের মতো মনে করে। তাহলে আগামী প্রজন্মের মেয়েদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় আকৃষ্ট করা সহজ হবে।
[caption id="" align="aligncenter" width="497"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসার আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. হোস্টেলের মনোরম বেলকনি।[/caption]
প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখতে কীভাবে কাজ করছেন? জানতে চাইলে জামিয়াতুজ জাহরার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল বলেন, প্রথমত আমরা মুসলামানদের কলিজার টুকরো সন্তানদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সোনারগাঁয়ের ভাগলপুরের গ্রামীণ পরিবেশে আমরা গড়ে তুলেছি প্রতিষ্ঠানটি। বাহ্যিক মান ধরে রাখতে আমাদের এখানে রয়েছে স্বল্প খরচে নিরিবিলি পরিবেশে লেখাপড়ার সুব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, ফ্লোরিং নয় আলাদা আলাদা খাটে থাকার সুব্যবস্থা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সম্মত খাবার, খেলাধুলার জন্য শরয়ী পর্দার পূর্ণাঙ্গ পাবন্দীসহ বিস্তৃত সবুজ মাঠ।
[caption id="" align="aligncenter" width="616"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসার ছাত্রীদের পরীক্ষার হল রুম।[/caption]
‘তাছাড়া আমরা লেখাপড়ার মান ধরে রাখার বিষয়ে শতভাগ প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। আমাদের এখানে মক্তব থেকে মেশকাত পর্যন্ত ক্লাস রয়েছে। এ বছর থেকে দাওরায়ে হাদীস খোলার প্ল্যানও আছে। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দিলে জামিয়াতুজ জাহরা আগামী শিক্ষাবর্ষে হাদ্দাসানার নির্মল ধ্বণিতে মুখরিত হবে ইনশাআল্লাহ’- নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শায়খ উবায়দুল কাদের নদভী।
[caption id="" align="aligncenter" width="469"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসার শায়খ আহসান বেগ হোস্টেলের দৃষ্টিনন্দন বেলকনি।[/caption]
তিনি বলেন, প্রতিটি বিভাগে পড়াশোনার সৃজনশীল পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। এর জন্য আমাদের এখানে রয়েছে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকা দ্বারা পাঠদান ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার সঙ্গে থাকার সু-ব্যবস্থা, শরয়ী পর্দার পূর্ণাঙ্গ পাবন্দী, দুর্বল ও অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান, কোনো ধরণের প্রহার ব্যতিত আদর সোহাগ ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে পড়া আদায়ের ব্যবস্থা, লেখাপড়ার সুবিন্যস্ত সিস্টেম ও যুগোপযোগী সিলেবাস, এতিম অনাথ মেধাবীদের ফ্রি খাওয়া-দাওয়া পোশাক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা।
[caption id="" align="aligncenter" width="563"] জামিয়াতুজ জাহরা মহিলা মাদরাসা ও শিশু সদন ভবনের একাংশ।[/caption]
সবশেষে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহিমাহুল্লাহর স্নেহধন্য এই শাগরেদ উল্লেখ করেন, আমাদের সমাজের মেয়েদের যতটা শিক্ষিত হতে হবে ঠিক তার চেয়ে বেশি সভ্য-ভদ্র হতে হবে। তাদের হৃদয়ে থাকতে হবে আল্লাহর ভয় ও খুলুসিয়াত। তাই আমল ও তারবিয়াতের ওপর আমরা বিশেষ গুরুত্বারোপ করে থাকি।
[caption id="" align="aligncenter" width="477"] জামিয়াতুজ জাহরার হামিদা হোস্টেলের একাংশ।[/caption]
অনন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ তাদের কলিজার টুকরো সন্তানকে ভর্তি করাতে চাইলে কীভাবে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে জানতে চাই তিনি বলেন, আমরা রমজান থেকে মূলত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করি। ঈদের পরেও বেশকিছু সময় চলে এ কার্যক্রম। ভর্তিসহ আমাদের প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে জানতে 01819474474 ও 01836953808 নাম্বারে যোগাযোগ করলেই হবে।
-কেএল