আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি ও নায়ক ইমনের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরালের পর থেকে দেশে-বিদেশে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ডা. মুরাদ হাসান।
ওই অডিও ফাঁসের পর প্রতিমন্ত্রীর আসন থেকে সরে যেতে হয়েছে মুরাদকে। তোপের মুখে পড়ে দেশ ছেড়ে স্থায়ী বসবাসের জন্য কানাডাও গিয়েছিলেন। কিন্তু কানাডার সচেতন বাংলাদেশিদের প্রতিবাদের মুখে বিমানবন্দর থেকে তাকে দেশে ফিরতে হয়েছে।
আলোচনা এখানে থেমে যায়নি। বৃহস্পতিবার তিনি আবারো আলোচনায় এসেছেন। এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান। স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক-শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি হত্যার হুমকি অভিযোগ এনেছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ বাসায় গিয়ে জাহানারার বক্তব্য নিয়েছে। অভিযোগ শুনে পুলিশের পরামর্শে থানায় জিডি করেছেন জাহানারা। এখন জিডির তদন্ত করবে পুলিশ। তদন্তের অনুমতির জন্য আজ আদালতে আবেদন করবেন পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, শারীরিক, মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে করতে স্বামীর কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়ে ঘাবড়ে যান ডা. জাহানারা। সন্তানদের নিয়ে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে স্ত্রী ও সন্তানদের বকাবকি করে তাদের মারতে উদ্যত হন মুরাদ হাসান। পরে তার কাছ থেকে সন্তান ও নিজেকে রক্ষা করে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করেন জাহানারা। পুলিশ তাদের বাসায় গিয়ে হাজির হয়। ততক্ষণে বাসা ছেড়ে চলে যান মুরাদ।
জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ও ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক রাজিব হাসান বলেন, মুরাদ হাসানের স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানকে বাসায় গিয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। পরে তার বক্তব্য শুনে তারই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি জিডি নিয়েছি। এখন তদন্তের অনুমতির জন্য আদালতে আবেদন করবো। তারপর বাদী-বিবাদী উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
ধানমন্ডি থানা পুলিশসূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানতে পেরে পুলিশের সাত সদস্যের একটি টিম ধানমণ্ডির নতুন ১৫ নম্বর সড়কের ৩০/এ বাসার ডি-১ ফ্ল্যাটে যায়। বাসায় যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে মুরাদ হাসান ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যান। ওই মুহূর্তে বাসায় অবস্থান করছিলেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান, ১৬ বছর বয়সী মেয়ে রামিসা ফারিহা রাজকন্যা ও হাসান আবরার মাহির যুবরাজ (১১)। পুলিশ অভিযোগকারী জাহানারার বক্তব্য জানতে চায়।
জাহানারা পুলিশকে জানান, ১৯ বছর ধরে তিনি আর মুরাদ হাসান সংসার করছেন। সংসার জীবনে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। মেয়ে ও-লেভেলে আর ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ভালোই কাটছিল তাদের সংসার জীবন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরাদ অন্যমনস্কভাবে চলাফেরা করছেন। বিশেষকরে মাহি ও ইমনের সঙ্গে ফোনালাপের অডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে।
তিনি বলেন, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে পরিবারে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছেন। মুরাদ তাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। সবসময় তাকে ছোট করে কথা বলতেন। জাহানারা কিছু বললে তিনি তার উল্টো ভাবতেন। সন্তানরা কিছু বললেও খারাপ আচরণ করতেন। মুরাদ ভাবতেন জাহানারাই সন্তানদের এসব শিখিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া পারিবারিক অন্যান্য বিষয় নিয়েও দ্বন্দ্ব ছিল তাদের মধ্যে। অডিও ফাঁসের পর মুরাদ স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কানাডায় গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। কানাডা প্রবেশ করতে না পেরে দেশেই ফিরে আসেন।
জাহানারা পুলিশকে জানান, প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর মুরাদের আচরণে ভিন্নতা আসে। আগে তিনি এরকম আচরণ করতেন না। মন্ত্রীত্ব হারানোর পর তার মধ্যে একটা উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি সবাইকে নানা রকম হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। বিশেষকরে আমাকে ও সন্তানকে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি করতেন। তাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করতেন।
তিনি আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কারণে-অকারণে ঝগড়া করতেন। ঝগড়া লাগলে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করতেন। প্রতিবাদ করতে গেলে আরও ক্ষেপে যেতেন। প্রায়ই হত্যার হুমকি দিতেন। সন্তানদেরও সহ্য করতে পারতেন না। গত বৃহস্পতিবার তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে যায়। বকাবকির একপর্যায়ে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের মারধরের জন্য উদ্যত হন। পরে ভয় পেয়ে জাহানারা ৯৯৯-এ ফোন করে সাহায্য চান। সন্তান এবং তার নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য তিনি পুলিশের সাহায্য নিয়েছেন।
ধানমণ্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, জিডির তদন্ত আইনি প্রক্রিয়ার করা হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে। অনুমতি দিলেই তদন্ত শুরু হবে। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে আমরা বাদীর সঙ্গে কথা বলেছি। ওনার বক্তব্য শুনেছি। জিডিতে তিনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন বাসায় যাওয়ার পর আমাদের কাছেও সেই কথা বলেছেন। তিনি মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে আমাদের কাছে বলেছেন।
বিবাদী ডা. মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে তার কথা হয়নি। আমরা বাসায় গিয়ে তাকে পাইনি। আমরা থাকাকালীন সময়েও আসেননি। পরে বাসায় এসেছেন কিনা সে বিষয়ে বাদী আমাদের কিছু জানাননি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, জিডির তদন্ত থানা পুলিশ করবে। আমরা আপাতত কিছু করছি না।
-কেএল