আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ও নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করার অভিযোগে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর, ঠাকুরগাঁও, মাদারীপুর ও মাগুরায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেনের আদালতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষে মামলা দায়ের করেন অ্যাডভোকেট আহমেদ ফেরদাউস (মানিক)।
আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন মামলাটি গ্রহণ করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে আদেশ দেয়ার কথা জানান। এতে মুরাদ হাসানকে প্রধান আসামি ও ডিজিটাল মিডিয়ার উপস্থাপক নাহিদ হেলালকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, গত ১লা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন ডিজিটাল মিডিয়া উপস্থাপক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ ওরফে নাহিদ হেলাল। এসময় সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার পরিবার ও তার নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ন ও নারী বিদ্বেষী এবং যে কোনও নারীর জন্য মর্যাদা হানিকর ভাষায় মন্তব্য করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। যার ভিডিও ডা. মুরাদ নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচার করেন।
এতে করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ এবং প্রচারের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা হয়। এতে দেশে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে এজহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা জানান, এটি শুধু জাইমার জন্য সম্মানহানিকর নয়, এটা পুরো নারী সমাজের জন্য অপমানজনক। তাই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে ডা. মুরাদ হাসানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আদেশের দাবি জানান।
এদিকে, দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর আমলি আদালতে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এনতাজুল হক। তিনি বলেন, মামলার আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে।
দন্ডবিধির ১৫৩-(ক), ৫০৫-(ক) ও ৫০৯ পেনাল কোড, ১৮৬০ ধারায় এই মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালতের বিচারক এস.রমেশ কুমার ডাগা পরে আদেশ দেবেন। এই মামলায় তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার প্রমাণ হিসেবে ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ফুটেজের সিডি আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মাদারীপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট এমারাত হোসেন খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফয়সাল আল মামুন মামলাটির শুনানি শেষে আদেশের জন্য অপেক্ষমান রেখেছেন।
এছাড়া, জাইমা রহমান সম্পর্কে ফেসবুক লাইভে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল বক্তব্যের অভিযোগে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মাগুরায় মামলা হয়েছে। আজ দুপুরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মাগুরা জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান খান বাদী হয়ে জুডিশিয়াল-১ আদালতে এ মামলা করেন। মামলায় ডা. মুরাদ হাসান ছাড়াও ইউটিউবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও আসামি করা হয়েছে।
এর আগে, গতকাল সোমবার ডা. মুরাদ হাসান ও উপস্থাপক মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদের বিরুদ্ধে জয়পুরহাট, মানিকগঞ্জ, যশোর ও চাঁদপুরে মামলা করা হয়। তার আগে, তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, সুনামগঞ্জ, পঞগড়, ঝালকাঠিসহ কয়েক জেলায় দায়ের করা মামলা খারিজ করে দেন আদালত।
উল্লেখ্য, ফেসবুক পেজ ‘নাহিদরেইন্স পিকচার্স’ থেকে পেজের পরিচালক নাহিদের উপস্থাপনায় গত ১লা ডিসেম্বর লাইভে এসে জাইমা রহমানকে জড়িয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ কথা বলেন ডা. মুরাদ। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এছাড়া, সম্প্রতি এক নায়িকার সঙ্গে মুরাদ হাসানের অশ্লীল কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়।
এসব ঘটনার জের ধরে ডা. মুরাদকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডা. মুরাদ সেই নির্দেশনা মেনে পদত্যাগ করেন। পরদিনই তার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় ডা. মুরাদকে।
মন্ত্রিত্ব ও জেলা আওয়ামী লীগের পদ হারানোর পর ডা. মুরাদ দেশত্যাগ করেন। তিনি কানাডা গিয়েও শেষ পর্যন্ত দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। সেখান থেকে তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। সেখানেও প্রবেশ করতে না পেরে পরে দেশে ফিরে আসেন ডা. মুরাদ।
-এটি