বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মিশরের কায়রো শহরে বার্ষিক সম্মেলন ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুর রহমান
কায়রো, মিশর থেকে>

গত ১০ ডিসেম্বর রোজ শুক্রবার আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ (কায়রো পরিষদ ২০২১-২২ সেশন) এর উদ্যোগে কায়রো শহরের প্রসিদ্ধ ‘মাসজিদুত তাইসির হলরুমে ’ অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ‘বার্ষিক সম্মেলন ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ২০২১’।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ,কায়রোর সম্মানিত সভাপতি এমফিল গবেষক জনাব শরিফ উদ্দিন আব্দুল মান্নান৷

উপস্থাপনায় ছিলেন মনিরুল ইসলাম ,আবদুর রহমান বিন মুহাম্মাদ ও হুযাইফা আওয়াদ৷ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মো.মনিরুল ইসলাম স্যার৷

অনুষ্ঠানস্থলে মান্যবর রাষ্ট্রদূত স্যারের আগমন করলে মাননীয় রাষ্ট্রদূত মহোদয়কে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন কায়রো পরিষদ ২০২১-২২ সেশনের সম্মানিত সভাপতি ও উপদেষ্টা পরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ৷ মাগরিবের নামাজান্তে সূচনা হওয়া এ মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানটি বিভক্ত ছিল তিন পর্বে৷

মূল হল রুম ও পর্দাবেষ্টিত নারীদের কর্ণারে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক ও কঁচি-কাঁচা, শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে বিরাজ করছিল মনোমুগ্ধকর এক বাঙালী পরিবেশ। সবাই যেন কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বুকে৷

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল আল-কুরআনুল কারিম হতে তিলাওয়াত ও বঙ্গানুবাদ,হামদে বারী তাআ‘লা,সভাপতির স্বাগত বক্তব্য,২০২১ সালে মিশরে আগত ৪০ জন কওমী শিক্ষার্থীর নবীন বরণ ও নবীনদের অনুভূতি প্রকাশসহ নানা আয়োজন।

দ্বিতীয় পর্ব মেতে উঠে আল-আযহার ইউনিভাসির্টির বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি থেকে ২০২১ সেশনে গ্রাজুয়েট সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের ব্যাজ ও সম্মাননা প্রদান, বিভিন্ন ক্যাটাগরির দায়িত্বশীল সম্মাননা ও কৃতী ছাত্র সংবর্ধনার মাধ্যমে৷

আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বাংলাদেশ,কায়রোর বিগত ২০২০-২১ সেশনের উপদেষ্টা পরিষদ,নির্বাচন কমিশন, ‘বাংলাদেশে স্টুডেন্ট অরগানাইজেশন মিসর’ এর প্রতিনিধি,কায়রো পরিষদ ও শাখা কমিটিসমূহের সকল দায়িত্বশীলকে রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের হাত থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।সেবা,দায়িত্ববোধ,ছাত্রকল্যাণ,ডোনেশন ও আদর্শ চরিত্রের মানদন্ডে বিশেষ পাঁচজন শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হয় ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০-২১’।

বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে আল-আযহারের সেরা পাঁচ ব্রিলিয়্যান্ট কওমী শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হয় ‘বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার’
দূতাবাস কর্তৃক সম্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীগণ হলেন: ১.ডক্টর হাসিবুর রহমান: তিনি আল-আযহার ইউনিভাসিটির ফ্যাকাল্টি অফ ইসলামিক স্টাডিজ থেকে এক্সিলেন্ট রেজাল্ট নিয়ে সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।বর্তমানে তিনি ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম তহাবীর কুরআনিক সাইন্স নিয়ে লিখিত আহকামুল কুরআনের উপর গবেষনা থিসিস প্রস্তুত করেছেন। আশা করা যাচ্ছে আগামি জানুয়ারীতে তার ডক্টরেটের থিসিস ডিফেন্স অনুষ্ঠিত হবে।

২.ডক্টর আব্দুল হামিদ বিন শামসুল হক: তিনি বাংলাদেশের বিদগ্ধ আলেম মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব হাফিযাহুল্লাহ-এর স্নেহধন্য ছোট ভাই। ইসলামি ইতিহাসের মহান দুই বিদগ্ধ মুফাসসির জারুল্লাহ যমখশারী ও আবু হাইয়্যান আন্দালুসির নিজ নিজ তাফসির গ্রন্থে সূরা আহযাবের তাফসিরের ক্ষেত্রে লিটারেচর ও রেটোরিক সাইন্স বিষয়ে বিচারমূলক গবেষনা থিসিস নিয়ে অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে তিনি পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।তার ডক্টরেট থিসিসও প্রস্তুত।অচিরেই তা ডিফেন্সের জন্য সুপারভিজন প্যানেলে উত্থাপিত হবে।

৩.মাওলানা মাজহারুল ইসলাম: তিনি আল-আযহার ইউনিভাসির্টির সমগ্র ফ্যাকাল্টির মধ্যে সেরা দশের সবোর্চ্চ নাম্বার নিয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।তিনি সেই ব্রিলিয়ান্ট দশজনের একজন, যাদেরকে সম্পূর্ণ আযহার ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে পক্ষ থেকে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছিল। ৪.মাওলানা আসআদুজ্জামান:তিনি এক্সিলেন্ট রেজাল্ট নিয়ে শরিয়াহ ইসলামিয়া অনুষদ থেকে সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন৷

৫.মাওলানা জাওয়াদ আহমাদ সৌরভ: তিনি আল-আযহার ইনস্টিটিউটে ২০২০ সেশনে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় সমগ্র বিদেশী ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন৷

দূতাবাস সম্মাননা প্রদানের পর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। আযহার ইউনিভার্সিটির ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ১৩ জন মুমতাজ (এক্সিলেন্ট) ও ৩১ জন জাইয়িদ জিদ্দান (ভেরি গুড) গ্রেড অধিকারী শিক্ষার্থী এবং ইনস্টিটিউটের হায়ার সেকেন্ডারির ২ জন ও সেকেন্ডারির ৪ জন শিক্ষার্থী (অন্যতম টপটেন হিসেবে) মান্যবর রাষ্ট্রদূতের হাত থেকে পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রাপ্ত হন।
প্রাইমারি ও নার্সারিতে অধ্যয়নরত সকল শিশু-কিশোরকেও পুরস্কৃত করা হয়।

পরিশেষে আল-আযহার ইউনিভাসির্টির সম্মানিত পিইচডি গবেষক ও আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য জনাব লুতফে রাব্বি আফনানের ‘আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ইতিহাস:উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক বক্তব্যের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত হয়।

তৃতীয় পর্ব মেতে উঠেছিল জমকালো বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায়৷ ইসলামিক সংগীত,স্বাধীনতার কাব্য,আরবি কাব্য,বিবিধ অভিনয়-কৌতুক,বরিশাল ও নোয়খালী জেলার আঞ্চলিক ভাষায় আত্মগৌরব বিতর্ক,রম্যরসে টইটম্বুর সংবাদ পাঠ,শীত ভালো না গরম ভালো শীর্ষক উপস্থিত বিতর্কসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও বিনোদনমূলক আয়োজনে উপস্থিত সবাই যেন আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ছিলো৷

সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের বক্তব্যের মাধ্যমে পুনরায় ফিরে আসে অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য। আবদুল আবদুল গাফফার মাননীয় রাষ্ট্রদূত তার মূল্যবান বক্তব্যে বলেন,‘তোমাদের মাঝে এসে আমার সেই চল্লিশ বছর পূর্বের এসএসসি পরীক্ষার পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা মনে পরে যাচ্ছে। তিনি বলেন,বাসায় থাকলে আর কি-ই বা করতাম!এখানে আমি শতাধিক বাঙালি শিক্ষার্থীকে একসাথে পেয়ে সত্যেই আমি অনেক আনন্দিত ও মুগ্ধ!

তোমাদের কওমীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে বহু মেধা ও প্রতিভার অধিকারী কৃতী শিক্ষার্থী৷ যা আমার দেশের গৌরবকে বৃদ্ধি করছে।আল-আযহারের সবচেয়ে বেশী শিক্ষার্থী ইন্দোনেশিয়া,মালেশিয়া ও আফ্রিকার; কিন্তু সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট বাঙালি স্টুডেন্টদেরই।বহিঃবিশ্বের বড় বড় কনফারেন্সে গিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের মুখে বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের সাফল্যের প্রশংসা শুনে সত্যিই আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়৷

তিনি আরো বলেন, দেশে গিয়ে তোমাদেরই সমাজের দায়িত্বভার নিতে হবে। বাঙালি মুসলিমদের নিয়ে দেশ-জাতি ও ইসলামের স্বার্থে কাজ করতে হবে সেভাবেই তোমরা নিজেদের জীবনকে গড়ে তোলো৷ শুরু থেকেই আমি সার্বক্ষণিক তোমাদের পাশে আছি।তোমাদের যে কোনো সমস্যার কথা আমাকে জানাতে পারো।আমি সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করবো৷’

পরিশেষে সম্মানিত সভাপতির বক্তব্য ও সোসাইটির সিনিয়র সদস্য আখতারুজ্জামান ভাইয়ের পরিচালিত দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ধারাবাহিক কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।

এরপর পরিবেশেন করা হয় মানসম্মত বাঙালী খাবার। উপদেষ্টা পরিষদের সম্মানিত সদস্য জনাব মুস্তফা জামালের স্নেহাস্পদ পুত্র বাসেমের আকিকার আয়োজন যুক্ত হওয়ায় আপ্যায়ন হয়ে উঠে আরো বাহারি তৃপ্তির।

ওয়েলফেয়ার সোসাইটির বার্ষিক মিলনমেলার প্রাণবন্ত ও মনোমুগ্ধকর সব আয়োজন উপভোগ এবং মজাদার, সুস্বাদু বাঙালী খাবার গ্রহণ শেষে সবাই ফিরে যায় নিজ নিজ গন্তব্য পানে৷

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ