গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধা শহরের মহুরীপাড়ার মেয়ে রিফা নানজিবা (১০)। ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির এই ছাত্রী ছিল তীক্ষ্ণ মেধাবী। ছোট থেকেই নিয়মিত নামাজ আদায়সহ কোরআন তেলাওয়াতে অভ্যস্ত ছিল নানজিবার। তার আচার-আচরণেও পরিবার ছিল সন্তুষ্ট। কিন্তু ডেঙ্গুর সঙ্গে পাঁচ দিনের কঠিন লড়াই শেষে মৃত্যু তাকে নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে।
বৃহস্পতিবার সকালে নানজিবার মুহুরীপাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে পিনপতন নীরবতার মাঝে মৃদু কান্নার শব্দ। শোকে কাতর পুরো পরিবার।
গত ২২ নভেম্বর সকালে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয় নানজিবা। জ্বর ছিল ১০৩-১০৪ ডিগ্রি। পর দিন মিরপুরের আলোক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ২৪ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায় তাকে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রথমে কিছুটা উন্নতি দেখা দিলেও সোমবার সকাল থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হাসপাতালের আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে নানজিবা মারা যায়।
দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছিল নানজিবা। মিরপুর-১ নম্বরে নিজ বাসায় স্ত্রী শাহারিয়ার আক্তার মুন ও দুই মেয়েকে নিয়ে সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখতেন রায়হানুল হক কামাল।
সরকারি চাকরিজীবী রায়হানুল হক কামাল বলেন, মেয়ের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি করিনি। কিন্তু প্রথম যে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম, সেখানে আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল না। পরে অন্য হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করাই। চিকিৎসকেরা যা যা বলেছেন, তাই করেছি, তবু মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলাম না।
মেয়েকে হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নানজিবার মা শাহারিয়ার আক্তার মুন। তিনি বলেন, আগে আমাদের কোনো দুঃখ ছিল না। কিন্তু মেয়েকে হারিয়ে এখন আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ।
মঙ্গলবার এশার নামাজের পর নানজিবাকে তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার মহুরিপাড়ার পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।