শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অ্যাডভোকেট আলিফের কবর জিয়ারত ও পরিবারের পাশে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ  প্রাইমারি স্কুলে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক বাধ্যতামূলক করতে হবে: মাওলানা ইসলামাবাদী বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের নামে মামলা কাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন জামায়াত আমীর হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ১৫ দিন রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন চলতে দেয়া হবে না: মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ২২৫০০ কোটি নতুন টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

সাম্প্রতিক ইস্যুতে বিবিসিকে যা বললেন প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। জামালপুর-৪ আসনের নির্বাচিত এমপি। বিভিন্ন ইস্যুতে বর্তমানে তিনি ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’। সম্প্রতি দেখা গেছে, একটি ইউটিউব ভিডিওতে খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। পরে গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির সাবেক নারী এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে ​‘মানসিক রোগী’ বলে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি। এই দুটি ঘটনা নিয়ে গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনা চলছে।

এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের বক্তব্য নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

‘বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতার কন্যাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করাসহ সাম্প্রতিক নানা সমালোচিত মন্তব্যের কারণে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন নারী অধিকারকর্মীরা।

তবে মি. হাসান বিবিসিকে বলেছেন, তিনি এসব বক্তব্য দিয়ে কোন ভুল করেননি। এগুলো তিনি প্রত্যাহারও করবেন না কিংবা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সরকার ও দলের উপর থেকে কোন চাপও নেই।

সম্প্রতি একটি ইউটিউব ভিডিওতে বিরোধী বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার কন্যাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিন মি. হাসান। পরে গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে 'মানসিক রোগী' বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি।

এই দুটি ঘটনা নিয়ে গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি মি. হাসানের দল, আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক বলে পরিচিত অনেকেই ফেসবুকে মি. হাসানের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

যেসব বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা: শনিবার বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান অপর আলোচক, বিএনপির একজন নেত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে আলোচনার এক পর্যায়ে 'মানসিক রোগে আক্রান্ত' এবং তার 'চিকিৎসা দরকার' বলে মন্তব্য করেন। সেই সময় দুই জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে যায়।

এর দুদিন আগে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে শীর্ষস্থানীয় একজন বিএনপি নেতার কন্যাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন বক্তব্য দিতে দেখা যায় মি. হাসানকে।

ইউটিউবের ওই টকশোতে মি. হাসানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মুখ ভীষণ খারাপ।’ এসব বক্তব্য নিয়ে সামাজিক তুমুল সমালোচনা চলছে।

বিবিসিকে মুরাদ হাসান যা বলেছেন: এর আগেও নানা রকম বক্তব্যের জন্য আলোচনা উঠে এসেছেন জামালপুর-৪ আসনের এমপি মি. হাসান। বিবিসিকে তিনি আরও বলেন, তিনি বক্তব্য দেয়ার আগে তাকে ‘নোংরা ভাষায়’ আক্রমণ করে কথা বলেছেন শীর্ষস্থানীয় ওই বিএনপি নেতার কন্যা।

‘আমার মেয়ের বয়সের চেয়ে সে এক বছরের বড়। আমার কন্যার মতো বয়সী হয়ে যে নোংরা ভাষায় আমাকে নিয়ে ট্রল করেছে, সেটা তো কুচিন্তনীয়। এটা আমার কাছে খুব দুঃখজনক মনে হয়েছে। তার সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমের অনেক ছবি আমার কাছে চলে এসেছে।’

আর টকশোতে হাজির হয়ে বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে আক্রমণ করে মন্তব্য করা প্রসঙ্গে মি. হাসান বলেন, ‘আপনি যদি ওই টকশোটা দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন আমি কেন বলেছি’।

‘আমি একজন চিকিৎসক। সেই হিসাবে তার সম্পর্কে আমার যে অবজারভেশন, সেটা আমি বলেছি। সেটা ভুল হলে আমি দুঃখিত।’

তবে সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার বক্তব্য, মুরাদ হাসান যদি সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতেন, তাহলে তিনি ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারতেন না।’

পেশায় চিকিৎসক মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

যেসব বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলোকে ভুল বলে স্বীকার করেন কি না কিংবা প্রত্যাহার করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না।’

মি. হাসান বিবিসিকে আরও বলেন, ‘তার বক্তব্য নিয়ে নানারকম সমালোচনা হলেও তার ওপর দল বা সরকারের তরফ থেকে বক্তব্য প্রত্যাহারের কোন চাপ নেই।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি সমাবেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

এর আগে এরকম একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন আলোচককে উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্য করে কারাগারে যেতে হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে। তবে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেনের এসব বক্তব্যের বিষয়ে দল বা সরকারি তরফ থেকে প্রকাশ্যে এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।

এদিকে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের নানা বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এসব তার ব্যক্তিগত মন্তব্য। দলের বা সরকারের কোনো বক্তব্য নয়। তার বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানালেন তিনি।

অনলাইনে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মুরাদের বক্তব্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সরকারের অবস্থানের কোনো সম্পর্ক নেই।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ সফল করতে সোমবার মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে। আমাদের দলের বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য না। এই ধরনের বক্তব্য কেন তিনি দিলেন, অবশ্যই আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’

নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। তার বিরুদ্ধে ‘বর্ণবাদী’ শব্দ ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে।

প্রতিমন্ত্রীর এসব মন্তব্যকে ‘কুরুচিপূর্ণ’, ‘অশালীন’ ও ‘মর্যাদাহানিকর’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা। তবে এসব সমালোচনা পাত্তা দিচ্ছেন না প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। আলোচিত ভিডিওটি নিজের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সরিয়ে নিলেও মুরাদ হাসান বলছেন, তিনি আগের অবস্থানেই আছেন।

গত ১ ডিসেম্বর রাতে ‘অসুস্থ খালেদা, বিকৃত বিএনপির নেতাকর্মী’ শিরোনামে এক ফেসবুক লাইভে যুক্ত হন মুরাদ হাসান। লাইভটির সঞ্চালক ছিলেন নাহিদ রেইনস নামে এক ইউটিউবার ও ফেসবুকার।

লাইভে বিএনপির রাজনীতি সমালোচনার একপর্যায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্ম ও পরিবার নিয়েও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রীর এসব বক্তব্য ‘প্রচণ্ড আপত্তিকর’ উল্লেখ করে তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আলোচিত লাইভটি শনিবার রাত পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর ভেরিফায়েড পেজের টাইমলাইনে দেখা গেলেও সোমবার আর দেখা যাচ্ছে না। তবে টাইমলাইন থেকে সরিয়ে নিলেও প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুক পেজের ভিডিও অংশে এটি দেখা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে রোববার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি রাজনীতি করি, তাই আমি রাজনৈতিক কর্মী। সবকিছু সবাই ভালোভাবে নেবে, এ রকম তো কথা নেই। সমালোচনা করতেই পারে।’

তিনি বলেন, ‘যারা সমালোচনা করেন, তারা আমাদের শত্রুপক্ষ বা বিরোধীপক্ষ বা বিরোধী দল বা ৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। এরা তো সমালোচনা করবেই। এগুলো দেখার সময় আসলে আমার নেই।’

নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নারীর প্রতি অবমাননা বুঝলাম না! কোন নারীর প্রতি?’

নিজের কথায় কোনো নারীর প্রতি অবমাননা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। আমার মা আছে। আমি একজন মায়ের পেট থেকে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার বোন আছে, স্ত্রী আছে, আমার সন্তান আছে, কন্যা আছে। আমি কাউকে অবমাননা করে কোনো কথা বলার মানসিকতা পোষণ করি না।’

‘এটা সমালোচকদের, নিন্দুকদের… ওই যে বলে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ ওই রকম হইছে আরকি। এসব নিয়ে মাথা ব্যথা দেখানোর মতো সময় আমার নেই।’

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ