আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ‘ঢাকা সিটিকে ধূলা ও দূষণমুক্ত রাখতে সিটি কর্পোরেশনের দায়বদ্ধতা”-শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বৈঠকে ১৭ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। সে লক্ষে আগামী ২২ জানুয়ারী ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র ভবনের সামনে দুষণমুক্ত নগর গড়ার দাবিতে দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নগর উন্নয়ন আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই।
বৈঠকে নগর উন্নয়ন আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ-এর সভাপতিত্বে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন প্রবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মোঃ জামাল উদ্দিন ও ড. মোঃ ইমাদুল হুদা, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, শেখ ফজলুল করীম মারূফ, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, শ্রমিকনেতা হাফেজ ছিদ্দিকুর রহমান, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, মাস্টার অব. ওয়ারেন্ট অফিসার আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ইটভাটা, শিল্প কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া, বস্তিতে প্রায় চল্লিশ লাখ চুলায় আবর্জনা, কাঠ-কয়লা ও কেরোসিন দিয়ে রান্নার ধোঁয়া, ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধূলা ও ধোঁয়া এবং রাস্তা খোড়াখুড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হয়ে থাকে।
তারা বলেন, বাংলাদেশে যে বায়ুদূষণ ঘটছে, তার অন্যতম কারণ আন্তঃসীমান্ত বায়ুপ্রবাহ। ইরান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তানের শুষ্ক মরু অঞ্চল থেকে ধূলিকণা বাতাসে মিশে যায়। পশ্চিমা লঘুচাপের মাধ্যমে ওই ধূলিকণাসহ বাতাস ভারতে প্রবেশ করে। নভেম্বর থেকে ওই দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আবার ভারতের কলকাতা, মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচি ও বাংলাদেশের ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মারাত্মক যানজট ও ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। অবকাঠামো নির্মাণের ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধূলাবালিও বাতাসে মিশছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ওই শহরগুলো এই অঞ্চলের বায়ুকে দূষিত করে ফেলছে।
বক্তারা আরও বলেন, ঢাকা শহরে যে যানবাহনগুলো চলে সেগুলো বেশিরভাগই ব্যবহারের অনুপোযোগী। অনেকগুলো গড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ। গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেগুলো থেকে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ হয়। উন্নতবিশ্বেগাড়িতে যে জ্বালানি ব্যবহার করে এর সালফারের মাত্রা ৫০ এর নিচে আমাদের দেশে সেই মাত্রা ২০০০-এর উপরে। ফলে আমাদের গাড়িগুলো থেকে প্রচুর দূষণ হয়।
আলোচকরা বলেন, এখানে কোনো নিয়মনীতি ছাড়া একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। এ কাজে ব্যবহৃত কাঁচামাল ওখানেই তৈরি হয় এবং তা ঢেকে রাখা হয় না। এখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় সারা বছর ধরে এবং মাটিগুলো রাস্তার পাশেই রাখা হয়। ওগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে গার্মেন্টস এবং শিল্প কারখানাগুলোর বর্জ্য থেকেও দূষণ ছড়ায় ব্যাপকভাবে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বায়ুদূষণ রোধে বৈঠকে ১৬ দফা প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাবনাগুলো নিম্নরূপ : আমাদের প্রস্তাবনা সমূহ।
১. ঢাকার রাস্তা খোড়াখুড়ির কাজ সমন্বিতভাবে দ্রুততম সময়ে করতে হবে। কাজের সময় ধুলো ও দুষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
২. শীতের সময়টাতে নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
৩. ঢাকার রাস্তাগুলো প্রতিদিন পরিস্কার করতে ঝাড়ু ব্যবহারের বিকল্প প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ঢাকায় যানবহনের চাপ কমাতে হবে। সে লক্ষ্যে মেট্রোরেলের পাশাপাশি গণ-পরিবহনকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অধীনে এনে নিরাপদ, স্মার্ট ও সহজলভ্য করতে হবে।
৫. অবিলম্বে ঢাকা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল যানবহন সরিয়ে দিতে হবে।
৬. যানবহনের জ্বালানীতে সালফারের পরিমান ৫০% এর নিচে নামাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. যেকোন মূল্যে ইটের ভাটা ঢাকার চারপাশ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। দেশের সকল ইটের ভাটায় পরিবেশবান্ধŸ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইটের বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৮.শিল্পকারখানায় পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে শিল্পকারখানা থেকে কোন ধরণের দূষণ ছড়াতে না পারে।
৯. ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনে রেল ও নৌ পথের ব্যবহার বাড়িয়ে ঢাকায় দুরপাল্লার ট্রাক প্রবেশ সীমিত করতে হবে।
১০. ঢাকার বস্তিগুলোতে নিরাপদ গ্যাসের সংযোগ দিতে হবে। যাতে তাদের রান্না দূষণের কারণ না হয়।
১১.ঢাকার মেগা নির্মান প্রকল্পগুলোর কাজের গতি বাড়াতে হবে। অবশ্যই সেগুলোতে দূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১২. ঢাকার রাস্তার পাশে প্রচুর ময়লা আবর্জনা পরে থাকে। তা অপসারনে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৩. শহরকে পরিস্কার রাখতে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
১৪. আন্তঃসীমান্ত দূষণরোধে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে আরো জোড়ালো ভুমিকা রাখতে হবে। ঢাকার আইল্যান্ডে বৃ¶রোপন করে তা র¶ণাবে¶ণের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মসজিদগুলোকে এই কাজে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
১৫. ঢাকা থেকে সকল ধরণের শিল্প কারখানা সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. বায়ু দূষণ রোধ কমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।