আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের দর-কষাকষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন আজ বৃহস্পতিবার। বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের অন্যতম উৎস বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে আলোচনা হবে আজ।
এই আলোচনা শুরু হচ্ছে এমন সময়, যখন বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ আবার প্রায় কোভিডপূর্ব অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে। অন্তত এমনটাই অনুমান করছে গ্লোবাল কার্বন প্রোজেক্ট।
বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাতে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই অনুমান করা হয়েছে।
গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট হলো একটি বৈশ্বিক গবেষণা প্রকল্প, যেখানে যুক্ত আছেন কার্বন নিঃসরণ নিয়ে গবেষণা করা বিশ্বের অন্যতম বিজ্ঞানীরা। তাদের গবেষণা বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী লকডাউনে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন প্রায় ৫.৪ শতাংশ কমেছিল। কিন্তু চলতি বছর তা আবার ৪.৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বছরের শেষ নাগাদ মোট কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৩৬.৪ বিলিয়ন টনে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ২০২০ সালে কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার এ বছর তা আবার বাড়ছে। তবে তেলের ব্যবহার ২০১৯ সালের পর আর বাড়েনি।
বিশ্বের প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ আবার কোভিডপূর্ব অবস্থায় ফিরে গেছে। আর ভারতের নিঃসরণ কভিডপূর্ব সময়ের কাছাকাছি ফিরে আসছে। চীনে কার্বন নিঃসরণের হার কোভিডপূর্ব সময়ের চেয়েও আরো বেড়ে গেছে। চীনে কার্বন নিঃসরণের মূল উৎস হচ্ছে বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতের অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে সাম্প্রতিক জ্বালানি সংকটে চীনে কয়লার ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
গবেষকরা মনে করছেন, ২০২২ সালে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়বে যদি সড়ক পরিবহন এবং বিমান চলাচল মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যায়, সেই সঙ্গে যদি কয়লার ব্যবহার স্থিতিশীল থাকে।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিল যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার, ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি। গবেষণার সমন্বয়ক এক্সেটার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিয়েরে ফ্রাইডলিংস্টেইন বলেন, সারা বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির এই প্রবণতা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের প্রবণতা আগের মতোই শুরু হয়েছে। যদিও কিছু দেশ কভিড-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করেছে, তবে তা অপর্যাপ্ত।
তার মতে, যদি বিশ্বকে নেট জিরোতে পৌঁছাতে হয়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নির্গমন প্রতিবছর প্রায় ১.৪ বিলিয়ন টন হারে কমাতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে যথাযথ পদক্ষেপ প্রয়োজন, যা এ বছরের কপের আলোচনার গুরুত্ব কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের এই গবেষণার ফল কাজে লাগিয়ে বিশ্বনেতারা এবারের কপে জলবাযু সংকট মোকাবেলায় আগামী দিনের পরিকল্পনা গ্রহণে একমত হতে পারবেন।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছর চীনে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে ৪ শতাংশ ও মোট কার্বন নিঃসৃত হয়েছে ১১.১ বিলিয়ন টন, যা বিশ্বের মোট কার্বনের ৩১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে নিঃসরণ ২০২০ সালের তুলনায় ৭.৬ শতাংশ বেড়েছে, তবে ২০১৯ সালের তুলনায় ৩.৭ শতাংশ নিচে। সেখানে মোট কার্বন নিঃসৃত হয়েছে ৫.১ বিলিয়ন টন, যা মোট নিঃসরণের ১৪ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিঃসৃত হয়েছে ২.৮ বিলিয়ন টন, যার মোট নিঃসরণের ৭ শতাংশ। ভারত নিঃসরণ করেছে ২.৭ বিলিয়ন টন কার্বন, যা মোট নিঃসরণের প্রায় ৭ শতাংশ।
ইস্ট অ্যাংলিয়া ইউনিভার্সিটির স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কোরিন লে কোয়েরে বলেন, ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তির পর থেকে বিশ্বকে কার্বনমুক্ত করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর তাই মহামারি চলাকালীন সময়েও অগ্রগতি ছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। তবে সেই অগ্রগতির ফল দেখতে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে। তবে এটা নিশ্চিত যে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ ও শক্তিশালী জলবায়ুনীতিই পারবে জীবাশ্ম জ্বালানি তথা কার্বন নিঃসরণ কমাতে।
-এএ