আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র একজন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ঘৃণাত্মক বক্তব্যের জন্য মামলা করা হয়েছে। তিনি তার সমর্থকদের প্রতি মুসলিমদেরকে ধরে ধরে জীবিত অবস্থায় চামড়া তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে জুম্মু এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক বিক্রম রানধাওয়া নামের ওই বিজেপি নেতাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একটি ম্যাচে পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের জন্য উল্লাস করায় কাশ্মীরি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানাতে দেখা গেছে।
২৪ শে অক্টোবর পাকিস্তানের কাছে ভারতের অপমানজনক ১০ উইকেটের পরাজয়ের পরে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি মুসলমানের ওপর হামলাও করা হয়েছিল এবং পাকিস্তানের বিজয়ে উল্লাস করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ রাজ্যেও পাকিস্তানি ক্রিকেট দলকে সমর্থন করায় আগ্রা শহর থেকে তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রানধাওয়াকে বলতে শোনা গেছে, ‘তাদের রক্তে পাকিস্তানের প্রতি টান রয়েছে। এজেন্সিগুলো সক্রিয়। তারা অবশ্যই বিষয়টি লক্ষ্য করেছে … যারাই এর সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রত্যেককে ধরে জীবিত অবস্থায় চামড়া তুলে নেওয়া উচিত’।
তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘গতকাল (২৬ অক্টোবর), পাকিস্তান একটি কাফির দেশ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিতেছে, কিন্তু কাশ্মীরি মুসলমানরা সেই বিজয় উদযাপন করেনি। তারা সবাই কোথায় মারা গিয়েছিল সেদিন? সেদিন কেন তারা পাকিস্তানের জন্য উল্লাস করল না’।
বিজেপির এই রাজনীতিবিদ বলেন, কাশ্মীরি মুসলিম অভিভাবকদের বোঝা উচিত যে তারা ‘অকৃতজ্ঞ সন্তান’ জন্ম দিয়েছেন।
রানধাওয়া বলেন, ‘যারা এই কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করা উচিত যাতে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও ভারতের মাটিতে ভারত বিরোধী স্লোগান বা পাকিস্তানপন্থী স্লোগান দেওয়ার ফল মনে রাখে’।
রানধাওয়া আরও দাবি করেন যে, যারা পাকিস্তানের পক্ষে উল্লাস করেছে তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া উচিত। ‘আমি শুরু থেকেই দাবি করে আসছি যে তাদের [কাশ্মীরি ছাত্রদের] ডিগ্রির পাশাপাশি তাদের নাগরিকত্বও বাতিল করা হোক’।
জুম্মুর সিনিয়র পুলিশ সুপার চন্দন কোহলি মঙ্গলবার আল জাজিরাকে বলেন যে, রানধাওয়ার বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এবং ‘ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা উস্কে দেওয়ার’ অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার একজন কাশ্মীরি আইনজীবীর দায়ের করা অভিযোগের পর এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ‘ইসলাম অবমাননা’ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ‘বেমানান অনুভূতি প্রচার’ করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
রনধাওয়াকে অবশ্য এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।
কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি প্রশ্ন তুলেছেন যে, কেন বিজেপি রাজনীতিবিদকে তার প্রকাশ্য সহিংসতার আহ্বানের জন্য এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। অথচ পাকিস্তানের জন্য উল্লাস করার কারণে মুসলিম ছাত্রদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওদিকে, মঙ্গলবার বিজেপির একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, রানধাওয়াকে দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি এর আগে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছিল এবং তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছিল।
এনটি